হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষা আসে, সঙ্গে আসে বন্যা। দুর্ভোগের আশঙ্কায় বুক কাঁপে মানুষের। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ধেয়ে এসেছে বন্যা। ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে ফসলের খেত, খামার। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টির পানির তোড়ে ডুবে গেছে শহর, গ্রাম। বাংলাদেশের মানুষের এ যেন এক চিরদিনের ললাটলিখন। এর থেকে যেন নিস্তার নেই।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষায় ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে বন্যা হয়। কারণ, নদীবাহিত পলি জমে জমেই এই বদ্বীপের জন্ম। বাংলাদেশের জন্ম। বন্যায় এই পলি সমতলে ছড়িয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। তাই, বাংলাদেশের জন্য বন্যা একই সঙ্গে অভিশাপ ও আশীর্বাদ। তবে এটা ঠিক, মানুষের পরিবেশবিধ্বংসী নানামুখী কার্যক্রমের কারণে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে বন্যা হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে, কখনো কখনো সেই বন্যা অস্বাভাবিক আচরণ করে। এ বছর এখন পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গত বছর বন্যা স্বাভাবিকের চাইতে কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যার পর ২০২০ সালের বন্যাই দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছিল। ১৯৮৭ ও ৮৮ সালেও বড় বন্যা হয়েছিল।
আরিফুজ্জামান ভুইয়া আরো বলেন, এ বছর মৌসুমি বায়ুর কারণে যে বৃষ্টিপাত হয় সেটা সারা দেশেই বিরাজমান। ফলে মেঘনা অববাহিকা থেকে উত্তরাঞ্চল সবখানেই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে, বন্যার আশঙ্কা এখনই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল কমছে। গঙ্গা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পদ্মা নদীর পানি সমতল এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মেঘনা অববাহিকায় কুশিয়ারা ছাড়া সব নদীর পানিই কমছে।
প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬ হাজার বর্গকিমি অঞ্চল অর্থাত্ ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড বন্যাকবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের ৫৫ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। প্রতি বছর গড়ে বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদীপথে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে ৮ লাখ ৪৪ হাজার মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। বার্ষিক মোট প্রবাহের এটি ৯৫ শতাংশ। তুলনায় একই সময় দেশের অভ্যন্তরে ১ লাখ ৮৭ হাজার মিলিয়ন কিউবিক মিটার নদীপ্রবাহ সৃষ্টি হয় বৃষ্টিজনিত কারণে।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বন্যার সঙ্গে ফসলের একটা সম্পর্ক রয়েছে। দেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ডান দিকের প্লাবনভূমিগুলোকে রক্ষা করছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্লাবনভূমিসমূহকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মার বাম প্লাবনভূমি; মধুপুর গড় দ্বারা ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বিচ্ছিন্ন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী উপত্যকা ও মেঘনা নদী অববাহিকা। মেঘনা অববাহিকা মহা-সিলেট-অবনমন (Great Sylhet Depression) দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত যেখানে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী মিলিত হয়ে মেঘনা নাম নিয়েছে। মেঘনা নদীর পানির উচ্চমাত্রা বন্যার মৌসুমে ভাটিতে পদ্মানদীর পানির মাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্ষাকালের শুরুতেই মেঘনা নদী দ্রুত বন্যার পানিতে ভরে ওঠে এবং বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা পানিতে টইটম্বু্বর থাকে। সরাসরি সাগরে পানি চালান দিয়ে থাকে বলে এই অববাহিকায় পানি নিষ্ক্রমণের হার কম।