ফলে পাইকাররা চামড়া কিনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন।
তাদের আরও অভিমত, এবারই প্রথম কুরবানির দুদিনের মধ্যে গ্রামের কাঁচা চামড়া ঢাকা এনে বিক্রি করা যাবে না। অর্থাৎ কাঁচা চামড়ার পরিবহণ ঢাকামুখী আসতে পারবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকার চারপাশের জেলার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে দিনের মধ্যে ঢাকায় আসতে পারছেন না। এছাড়া খুচরা ও পাইকারি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলায় কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে আসন্ন কুরবানি ঈদ ঘিরে চামড়া বাণিজ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে কন্ট্রোল সেল খোলাসহ তিনটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া লবণের পর্যাপ্ত মজুত ও মূল্যে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিসিককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর লবণ পরিবহণে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সে বিষয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই সপ্তাহ কুরবানির পশুর চামড়া বাণিজ্যের মৌসুম। এ সময় চামড়া শিল্প খাতের প্রায় ৫০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ হয়। কিন্তু এ বছর ঈদের দুদিনের মাথায় কঠোর লকডাউন শুরু হবে। এমন পরিস্থিতি উদ্ভূত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পরিষ্কার করা হয়নি এ খাতের ক্রেতা ও বিক্রেতা লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে কি না।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ মনে করছেন, ঈদের পর কঠোর লকডাউন নিয়ে মাঠপর্যায়ে পশুর চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় আছেন। বিষয়টি এখন ধোঁয়াশায়। ব্যবসায়ীরা ভাবছেন, লকডাউন শুরু হলে পশুর চামড়া বেচাকেনা কীভাবে হবে। চামড়া ব্যবসায়ীরা লকডাউনের বাইরে থাকবেন কি না-এটি সরকারিভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে এ বছর ৩০ শতাংশ কুরবানি কম হবে-এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি কেমন হবে-এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আজ কিনে আজই বিক্রি করতে হবে-এমন চিন্তা করলে তাদের এ ব্যবসায় না নামলেই ভালো হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ বছর কুরবানির পশুর বাণিজ্য কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, কুরবানির ঈদ ঘিরে এক হাজার কোটি থেকে ১২ শ কোটি টাকার চামড়ার বাণিজ্য হয়। এরই মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো চামড়া কিনে ট্যানারির মালিকদের ঋণ খাতে বরাদ্দ দিয়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কাচ চামড়ার প্রতি বর্গফুটের মূল্য ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৪০-৪৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা, খাসির কাঁচা চামড়া সারা দেশে ১৫-১৭ টাকা, বকরির কাঁচা চামড়া সারা দেশে ১২-১৪ টাকা। উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় গরুর চামড়ার মূল্য পাঁচ টাকা এবং খাসি ও বকরির চামড়ার মূল্য দুই টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত চামড়ার মূল্য অনুসরণ করলে সমস্যা হবে না মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় এদিক-সেদিক চামড়া নিয়ে ঘুরে সময় নষ্ট করেন। এটি যেন না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, চামড়া পচে গেলে কেউ নেবে না।
এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার হাজারীবাগ ও পোস্তাগোলা হচ্ছে চামড়া কেনাবেচার মূল কেন্দ্রস্থল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর হাজারীবাগে চামড়া কেনার ক্ষেত্রে তেমন রমরমা ভাব দেখা যায়নি। হাজারীবাগের মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, লকডাউনের কারণে তিনি এ বছর বড় ধরনের বিনিয়োগ করবেন না। প্রতিবছর তিনি আটঘাট বেঁধে নামলেও এ বছর খুব সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, দুদিন পর শুরু হবে লকডাউন। তার মতে, এ বছর নানা শঙ্কা থেকে অনেকে কাঁচা চামড়া না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে পোস্তার আড়ত মালিকরা কিছু প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান যুগান্তরকে বলেন, পর্যাপ্ত ব্যাংকঋণ পেলে একটা চামড়াও রাস্তায় ফেলে দিতে হবে না। কোথাও চামড়া পড়ে থাকবে না। প্রান্তিক পর্যায়ে ট্যানারি মালিকরা টাকা দিতে পারবে চামড়া সংগ্রহের জন্য। তিনি আরও বলেন, গত বছর এই বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ টাকার সংকট ছিল ট্যানারি মালিকদের। এটি মাথায় রাখতে হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চামড়া বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা হবে।