করোনাী সময়-ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রতিযোগীতা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এটি যেনো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। সারা দেশে চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৫ জন। মূলত রাজধানীতে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই রাজধানী ঢাকার।

গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ জন। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর-এই ৪ মাস মূল মৌসুম। কয়েক দিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলছে। করোনা আর ডেঙ্গুর উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় জ্বর হলে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনার মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকলে রোগী ব্যবস্থাপনা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। মশকনিধনে দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে জনগণের সচেতনতাও জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে গতকাল ৩২৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এদের ৩২২ জনই ভর্তি ছিল রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। বাকি ৪ জনের মধ্যে দু’জন যশোরে এবং একজন করে গাজীপুর ও ময়মনসিংহের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

ডেঙ্গু সন্দেহে মারা যাওয়া দুজন রোগীর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যু নিশ্চিত করেনি আইইডিসিআর।

গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দৈনিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল ১০০ জন। জুন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ২৭২ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেশি বাড়তে শুরু করেছে।

২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারান। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বছর ডেঙ্গুর এত প্রকোপ দেখা যায়নি। দুই সিটি করপোরেশন চিরুনি অভিযানসহ কিছু কার্যক্রম চালায়। এবার ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের সিটি করপোরেশনগুলোকে নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিদিন সকালে মশার লার্ভা মারার জন্য লার্ভিসাইডিং এবং বিকেলে উড়ন্ত মশার মারার জন্য অ্যাডাল্টিসাইডিং করছে। ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননস্থল নির্মূলে দুই সিটির পক্ষ থেকে চিরুনি অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর