বস্তুগত উন্নয়নের মানুষের আত্ত্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শুধুমাত্র বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের আত্ত্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন। সেটি করতে হলে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ, দেশাত্ববোধ ও মমত্ববোধের সমন্বয় ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র রচনা করতে চাই, যেটি বস্তুগত উন্নয়নের দিক দিয়ে একটা উন্নত রাষ্ট্র হবে, একইসঙ্গে একটি মানবিক রাষ্ট্রও গঠন হবে। যে উন্নয়ন বস্তুগত হবে, কিন্তু বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দিবে, রাস্তায় দুর্ঘটনা হবে মানুষ কাতরাবে, কিন্তু পাশ দিয়ে যাওয়া কেউ ফিরে তাকাবে না, কখন পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যাবে সেই উন্নয়ন ও সমাজ আমরা চাই না।

শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামে রেডিসন ব্লু’র মেজবান হলে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট কনফারেন্স-২০২১ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ এই কনফারেন্সের আয়োজন করে। কনফারেন্সের আহবায়ক মো. তৈয়ব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্ত্য দেন রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি পিডিজি কেএম জয়নুল আবেদীন, জেলা গভর্ণর ড. বেলাল উদ্দিন আহমেদ, রোটারিয়ান ফাতেমা জেবুন্নেছা প্রমুখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মধ্যযুগে যখন পৃথিবীর অর্থ ব্যবস্থা কৃষি নির্ভর ছিল তখন আমাদের দেশ ধনী ছিল। মধ্য যুগে যে সমস্ত দেশের উন্নত কৃষি জমি ছিল তারাই ছিল ধনী। আমাদের উন্নত কৃষি জমি তখনও ছিল, এখনও আছে। আমাদের দেশে তিনবার ফসল হয়, ইউরোপে হয় একবার। পৃথিবীর অর্থ ব্যবস্থা যখন শিল্প নির্ভর হয়ে গেল তখন আমাদের মতো কৃষি নির্ভর দেশ থেকে বর্গি, ওলন্দাজ ও ইংরেজরা উপকরণ কিনে নিয়ে সেগুলো দিয়ে তৈরি করা পণ্য আমাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করা শুরু হলে তখন আমরা দরিদ্র হয়ে যাই। এখান থেকে উপার্জন করে নিয়ে তাদের দেশকে উন্নত করেছে, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, আজকে আমরা সেই দৃশ্যপটটা বদলে দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে, ইতিমধ্যে কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদনে গেছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল যখন প্রতিষ্ঠা হবে তখন আমরা পুরো দৃশ্যপট বদলে দিতে পারবো। আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হয়েছে, আমরা উন্নত দেশে রূপান্তর করতে চাই। সেটি করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা দরকার।

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সমস্ত প্রতিকুলতার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সবচে ঘনবসতিপূর্ণ এবং মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ সর্বনিম্ম হবার পরও ঝড় বন্যা জ্বলোচ্ছাস মোকাবেলা করে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যেটি পৃথিবীকে নয় শুধু বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকেও অবাক করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম। অথচ আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে ৯২তম। এটি সম্ভবপর হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব, সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা এবং আমাদের কৃষকসহ বিপুল জনগোষ্ঠির প্ররিশ্রমের কারণে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে মানব উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সমস্ত সূচকে আমরা অনেক আগেই পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি। মানব উন্নয়ন ও সামাজিক সুচকে ভারতকেও অনেক আগে অতিক্রম করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেও ভারতকে অতিক্রম করেছি, এটি চাট্টিখানি কথা নয়।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালে পৃথিবীতে মাত্র ২০টি দেশে পজিটিভ জিডিপি গ্রোথ রেট হয়েছে। সেই বিশটির মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটি সম্ভবপর হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব ও সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার কারণে।

রোটারি ক্লাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানবতার সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, আজকের পৃথিবীটা মানুষকে প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলেছে। মানুষ এখন শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে অপরের জন্য ভাবে না। একবিংশ শতাব্দিতে মানুষ অনেক উন্নতি করেছে। মানুষ এখন যন্ত্রের উপর ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এটির সঙ্গে সঙ্গে মানুষও অনুভূতিহীন যন্ত্রের মতো হয়ে গেছে, যেটি মানুষের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকর। সেই প্রেক্ষাপটে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্য নিয়েই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কাজ করছে।

তিনি বলেন, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে সাড়ে চার’শ কোটি বছর আগে, ক্রমাগতভাবে পরিবেশ ধ্বংস করার কারণে পৃথিবীটাকে আমাদের জন্য বৈরী করে তুলছি। এজন্য পরিবেশ সংরক্ষণটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাটাকে আমরা অনেকটা পণ্য বানিয়ে ফেলেছি, যেটি আজ থেকে ৩০ বছর আগে এরকম পণ্য ছিল না। ক্রমাগতভাবে শিক্ষাকে পণ্য বানানোর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। শিক্ষাটাকে শুধুমাত্র পাঠদান এবং ডিগ্রি প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে নতুন প্রজন্মকে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর মানুষ অনেক উন্নতি করেছে, কিন্তু পৃথিবী জুড়ে আজকে প্রচন্ড হানাহানি অশান্তি। পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির মধ্যেও পৃথিবীতে শরণার্থীর সংখ্যা কয়েক কোটি বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে দেখছি মানুষ একটি অদৃশ্য জীবাণুর কাছে কত অসহায়। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশটিও অসহায়, পাশাপাশি পৃথিবীর সবচে দরিদ্র দেশটিও অসহায়।

তিনি বলেন, এজন্য দেশে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য অর্থ ব্যয় না করে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য, ভবিষ্যতের মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য মনযোগ দেয়া প্রয়োজন। যদিও পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ সামরিক ব্যয় কমিয়ে এখাতে যেটুকু ব্যয় প্রয়োজন সেটুকু করছেনা, এটিই বাস্তবতা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর