সরকার স্থিতিশীল হলে অস্থির হয়ে উঠে আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক এমপি ও প্রভাবশালী নেতা। তারা যার যার এলাকায় নিজেদের স্বঘোষিত গডফাদারে রূপান্তরিত করেন। গড়ে তোলেন বিভিন্ন বাহিনী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। নিয়ন্ত্রণ করেন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বালু মহাল, খেয়াঘাট, হাটবাজার ইজারা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দফতরে নিজস্ব লোকজনকে চাকরি দেওয়া সব কিছুই। তাদের এই কর্মকাণ্ডে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দল ও সরকার। এদের নিয়েই উৎকণ্ঠায় আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত মহাজোট সরকারের সময় সরকারদলীয় কয়েকজন এমপি এবং দলীয় নেতারা নিজেদের গডফাদারে পরিণত করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেন। তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারকে নানামুখী সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়। বিগত সময়ের মতো এবারও কয়েকজন এমপি এবং দলীয় নেতা নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গডফাদারে রূপান্তরিত হয়ে আবারও সরকারকে সমালোচনার মুখে ফেলার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে কক্সবাজারের একজন এমপির কর্মকাণ্ডে সরকার চরম বিব্রতকর অবস্থায় আছে। এই এমপির বিরুদ্ধে মানব পাচার, ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী এমপি ও দলীয় নেতারা রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। যাদের কর্মকাণ্ডে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সরকার বিরোধীরা বারবার সমালোচনায় বিদ্ধ করছে সরকারকে।তবে সরকারের শীর্ষ মহল দলীয় এসব এমপি ও নেতাদের বিরুদ্ধে একেবারেই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কারণ স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। আর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রয়েছে একেবারে জিরো টলারেন্সে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি সরকারদলীয় এসব এমপি ও দলীয় নেতাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হচ্ছে। এ জন্য বাড়তি চাপও নিতে হচ্ছে। সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, এই মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর। দলের নাম ভাঙিয়ে বা নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা বা নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলা কিংবা কাউকেই নিজ এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কোনো রকম সুযোগ দিতে চায় না সরকারের শীর্ষ মহল। সরকার চায় না কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য সরকারের ভালো কাজগুলো ম্লান হয়ে যাক। এ কারণেই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তারা চান দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কতিপয় এমপি ও নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি এনে দিতে। শুধু তাই নয়, দলীয় এসব বিতর্কিত নেতা ও এমপিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আগামীতে দলের জাতীয় কাউন্সিলে এসব নেতাকে দলের কোনো পদেই রাখা হবে না এবং বিতর্কিত এমপিদেরও আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল।