প্রতাপনগরের ২৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ২০ দিন অতিবাহিত হলেও পানির মধ্যে বসবাস করছেন সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের ২৫ হাজার মানুষ। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠী। প্রতাপনগরের কয়েকটি বেড়িবাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখনো এখানকার মানুষের বাড়ির উঠোনে চলছে জোয়ার-ভাটা। সবচেয়ে সমস্যায় আছে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা।

প্রতাপনগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ইয়াসের ২০ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। চারিদিক পানিতে ডুবে আছে। কোনোমতে ঘরে থাকছি। নৌকায় করে চলাফেরা করতে হয়, চারিদিকে পানি। কিন্তু কোথাও খাওয়ার পানি নেই, গোসল এবং টয়লেটও করতে পারছি না। আম্ফানের সময় ভাটায় পানি সরে যেত। কিন্তু এবার পানি সরছে না। এই এলাকার ৫ হাজার পরিবার পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।

পানিবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে অনেকের জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ দেখা দিচ্ছে নানারকম পানিবাহিত রোগ। রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি তারা ত্রাণ পেলেও আমাদের এলাকা দুর্গম হওয়ায় এখানে কেউ আসে না। এখানকার মানুষ আছে চরম বিপদে। প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া এলাকার মিলন বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দীর্ঘদিন থেকেই পানির মধ্যে বসবার করছে এই এলাকার মানুষ। আম্ফানের সময় জোয়ার-ভাটা চললেও মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। কারণ ভাটায় এলাকা জেগে উঠত। কিন্তু ইয়াসের প্রভাবে পানি বাড়ছেই, কমার কোনো লক্ষণ নেই।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, গত বছরের ২০ মে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার গাছ ও গবাদি পশু। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মত্স্য সম্পদ। সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল এই উপকূলের মানুষ। এ বছর আবার ইয়াসের আঘাতে আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডের ১৭ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম খান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, বড়দল, আনুলিয়া, খাজরা ইউয়িনের ১৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। অধিকাংশ পয়েন্ট স্থানীয় লোকজন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সহায়তায় মেরামত হলেও প্রতাপনগরের তিনটি পয়েন্টে এখনো বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতাপনগর। প্রতাপনগরের হরিষখালি, বন্যতলা ও কুড়িকাহুনিয়া পয়েন্ট ভেঙে এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। এতে ৫ থেকে ৬ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাশেদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে পানি বেড়ে সাতক্ষীরা এবং খুলনার কয়রার ২৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ইতিমধ্যে ২০টি পয়েন্টে বাঁধ দেওয়া হয়ে গেছে। খুলনার কয়রার দুটি ও সাতক্ষীরার প্রতাপনগরের তিনটি পয়েন্টের বাঁধ দিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া ও হরিষখালী কাজ চলছে। বন্যতলা পয়েন্টে জাইকার অর্থায়নে কাজ হবে। আশা করছি আগামী ২৬ জুনের জোয়ারের আগেই সবগুলো বেড়িবাঁধ মেরামত হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝাড় ইয়াস আঘাত হানে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর