রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওরে হিরণ্ময় আলো নিভে না যায়!

রফিকুল ইসলামঃ তুমি আমার স্রষ্টা, তবে আমি তোমার কর্তা”- এহেন দৃষ্টিভঙ্গিতেই শেষতক সৃষ্টি অতিকায় দানব তার স্রষ্টা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে বিনাশ করে। ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’– মেরী শেলীর ১৮১৮ সালে রচিত উপন্যাসের একটি বিখ্যাত চরিত্র।

দুই.
‘অ্যারিওপ্যাজিটিকা’– এ যাবৎকালে সব চাইতে শক্তিশালী প্রবন্ধ হিসেবে স্বীকৃত। ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ইংরেজ কবি জন মিল্টন লিখেছিলেন সাড়া জাগানিয়া এ প্রবন্ধটি। অখন্ড সত্য কীভাবে খন্ডিত হলো, তারই উদাহরণ দিতে কবি আশ্রয় নিয়েছেন প্রাচীন মিসরীয় উপকথার।

স্টাইফন ছিলেন মিসরের রাজা। কুমারী ‘সত্য’ প্রথমে ছিল অসিরিসের অধীনে। সত্য বলে তাতে আঁতে সয়নি রাজার। এ সংকীর্ণতায় একদিন রাজশক্তি প্রয়োগে ‘সত্য’কে ছিনিয়ে নিয়ে টুকরোটোকরা করে ফেললেন। সাথে অসিরিসকেও। সেই থেকে খন্ডিত হয়ে পড়ে ‘সত্য’।

এদিকে অসিরিসের স্ত্রী আইসিস স্বামীর শরীরের সব টুকরো কুঁড়িয়ে পেতে সন্ধানে ব্যাকুল। তদ্রুপ মানব সমাজ আজো ব্যস্ত নিরঙ্কুশ সত্যের সন্ধানে, ওই অসিরিসের মতো।

এই উদ্দীপকদ্বয় পাঠকপ্রিয় ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় গত ৪ ফেব্রুয়ারী’২১ সম্পাদকীয় কলামে প্রকাশিত ‘রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওড়ে অশনিসঙ্কেত!’ শীর্ষক নিবন্ধেরই প্রতিরূপ।Open photo

হাওড়ের আর্থ-সামাজিক এমন কি শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিলক্ষিত হচ্ছে আসুরিক শক্তির উত্তাপ। শিক্ষা এক– তা হলো মনুষ্যতের শিক্ষা। আর মনুষ্যত্বের পরিচায়ক চরিত্র। চেতনা এক নয়– এক চেতনার জন্য লায় পায়, আরেক চেতনার জন্য যান যায়। মুজিববর্ষে দিন বদলের দৃপ্ত শপথ হওয়া উচিত স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়– ”ওঠো, জাগো, নিজে জেগে অপরকে জাগাও।”

এক্ষেত্রে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.কে. আব্দুল কালামের উক্তিটিও প্রণিধানযোগ্য– ”যে অন্যদের জানে, সে শিক্ষিত। কিন্তু জ্ঞানী হলো সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে জানে। জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা কোনো কাজে আসে না।”

যে মানুষ নিজের আত্মার মধ্যে অন্যের আত্মাকে এবং অন্যের আত্মার মাঝে নিজের আত্মাকে জানে, সে-ই জানে সত্যকে। মহৎ মানুষের চিন্তা ও কর্ম সবসময় সমাজ ও দেশকেন্দ্রিক হয়। তারা সবসময় দেশ, জাতি, সমাজ ও মানুষকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন। কীভাবে দেশের ও দশের কল্যাণ হবে সে সম্পর্কে তারা সবসময় নিজেদের ব্যাপৃত রাখেন। তারা কখনো নিজেদের কথা ভাবেন না, লক্ষ্য রাখেন না নিজেদের ভালো-মন্দের দিকেও। আত্মচিন্তায় আবিষ্ট হয়ে নিজেদের অন্তরের উদারতাকে সীমিত সীসায় বন্দী করেন না যারা, তারাই আলোকিত অন্তরের অধিকারী। বিশ্বমানবের তরে বিলিয়ে দেন হিরণ্ময় আলো।

“আমার একার আলো সে যে অন্ধকার, / যদি না সবারে অংশ দিতে পারি তার”… তেমনি মানবসত্তার এক মহীপাল ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। যিনি ছাত্রজীবনে উজান-ভাটি প্রভেদ প্রত্যক্ষ করেছেন। হাওড় অধ্যুষিত ভাটি অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় উজানে বা শহরে পড়াশোনা করতে গিয়ে শিকার হয়েছেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও তিরস্কারে– ‘ভাইট্টা গাবর উত্তইরা ভূত’। শুনতে হয়েছে আমাদেরও। তবে একটু বাইট্টা করে– ‘ভাইট্টা গাবর’। এ যেন অনেকটা পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্বের মতো।

পশ্চিবঙ্গের জমিদাররা তাদের জমিদারিতে দশম ক্লাস পর্যন্ত কিছু স্কুল করেছিলেন। তবে উচ্চশিক্ষায় নজর ছিলা না তেমন। প্রসার ঘটে তখনি, এপার বাংলা বা পূর্ববঙ্গ থেকে শরণার্থীরা যাবার পরে। যেসব শিক্ষক এপার থেকে ওপারে গিয়েছিলেন, তারা কলকাতায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর সুফল ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে ৬ জনই ছিলেন বাঙাল। তাঁদেন উন্নয়নের রথ যাত্রায় বাঙালরা এখন আগুয়ান।

এমনটা  উজান-ভাটির বেলায়ও। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে হাওড়বাসী সাধারণদের আস্থার জায়গা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদও অঙ্কুরেই বুঝে গিয়েছিলেন যেকোন সমাজের উন্নতির মূলে যেসব বিষয় অতি গুরুত্বপূর্ণ তম্মমধ্যে– শিক্ষা, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, সময়োপযোগী চেতনা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ অন্যতম।

সামাজিক বৈষম্যের শিখরে অবস্থান করা আবদুল হামিদ শিকড়কে জাগাতে ছাত্রজীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেল-জুলুমের শিকার হওয়ায় পড়াশোনাতে মনোযোগী হতে পারেননি। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধেও। তৃণমূলে সতত বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সুবাদে খ্যাত হন ‘ভাটির শার্দূল’।

দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে অপার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যাননি শিকড় ছেড়ে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে ত্যাগের দীক্ষা নিয়েছিলেন বলেই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আজীবনই এমপি থেকেছেন। নীতি খোয়াননি ক্ষমতার শত প্রলোভনে। হুমকিতেও না। শিকড়কে আঁকড়ে ধরে চারিত্রিক দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা, দলীয় আনুগত্য ও আশৈশব লালিত রাজনৈতিক একনিষ্ঠতায় বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর ও পরিবারঘনিষ্ট হয়ে ওঠা এবং সকলেরই প্রাণপ্রতিম ‘হামিদ ভাই’ আজ শিকড় থেকে শিখরে। দ্বিতীয় মেয়াদেও রাষ্ট্রপতি।

দেশ ও জাতির বড় সম্পদ হচ্ছে তার জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদে সুশিক্ষাই উন্নয়নের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ, যা নিশ্চিত করা গেলেই কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠন করা যাবে। জাতির জনকের বহুমুখী সেই উদ্যোগের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেয়ে প্রতিষ্ঠা করেন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানপ্রধান করে আমাকে দিয়েও গড়িয়েছিলেন একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর হাওড় অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার খেলার মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশেও হাওড়ে আরো শিক্ষাপ্রিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপরও জোর দেন রাষ্ট্রপতি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলা ৯ লাখ ৯০ হাজার ৩৯৬ হেক্টর আয়তনের এই বিশাল এলাকার জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার বাংলাদেশের অন্যসব এলাকা থেকে এখনো বেশ পিছিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ হলেও ইটনায় ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ, মিঠামইনে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ, অষ্টগ্রামে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ ও নিকলীতে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ মাত্র।

শিক্ষার হার এতো কম হওয়ার কারণ বহুবিধ। শিক্ষাক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাশদশা, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হওয়ায় বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে না পারা, শুকনায় বোরো মৌসুমে ফসল রোপণ ও কাটার কাজে জোগালি দেয়া। সাথে রাজনীতি যুক্ত করে ফেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেড়েছে অযাচিত হস্তক্ষেপ। গণ্য হচ্ছে আরদালিতে। এতে শিক্ষকরা হারাচ্ছে স্বকীয়তা। অস্তিত্ব টিকাতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেজুড়বৃত্তি। তাছাড়া সময়ের বিবর্তনে পাল্টে যাচ্ছে সভ্যতার রূপ,পারিপার্শ্বিক জীবনব্যবস্থাও। একদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-কলহ, অপরদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশা মিলে উদ্বিগ্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে সমাজসেবার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি আধিপত্যবাদ। নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি-কর্তৃত্ব বাড়াতে তথা নিজের স্বার্থ হাসিলে অরাজকতার জেরে কলঙ্ক-স্বাক্ষর থেকে মুক্ত হতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুবিধাবঞ্চিত হাওড় অঞ্চল জাতীয় মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিতে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে হাঁটছে আবার সামগ্রিকভাবে একটি নৈতিক-মানসিক-সামাজিক অধ:পতন ও অবক্ষয়ের মধ্য দিয়েও যাচ্ছে। অবক্ষয়ের এ চিত্র জীবন্ত হয়ে উঠছে জীবনব্যবস্থায়ও, যা প্রভাবিত করছে নতুন প্রজন্মকে এবং দোলা দিচ্ছে তাদের মনোজগতকে। অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করছে সর্বত্রই অমনুষ্যত্বের বাগাড়ম্বরে উত্তম শিক্ষাব্যবস্থাতে দীনতার চিত্র।

অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের হলেও তাতে অনাচার প্রবেশ করায় সবকিছু মিলে হিসাব করতে গেলে খুব সহজেই আমাদের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা প্রকটভাবে চোখে পড়ে। অসংখ্য দৃষ্টান্তের মধ্যে সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টসহ মূলধারার সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্র হওয়া মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নে অবস্থিত শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার প্রসঙ্গে আসা গেলে কী দেখা যায়? যেখান থেকে যাত্রা শুরু করা হয়েছিল সেখান থেকে কতটা এগোল? নাকি আরো এগিয়ে যাবার কথা ছিল? ‘কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পে স্থান না পাওয়া এবং জেলা পরিষদের প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ ফেরত যাবার বিড়ম্বিত ভাগ্যবিপর্যয়ের অনুষঙ্গ হলো হঠকারীতাই দীর্ঘ একদশক ধরে মাদ্রাসাটি স্থানান্তরিতে পৃষ্ঠপোষকতা লাভ। মাদ্রাসাটি ২০০৫ সালে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে ২০১০ সালে এমপিওভুক্তির পর পরই ভর করে আসুরিক শক্তি, যেটা মাদ্রাসার নামটিও পরিবর্তনের চেষ্টা চালায়।

স্বেচ্ছাচারীতা, অনিয়ম-কদাচার ও আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে মাদ্রাসার জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো: জজ মিয়ার (বর্তমানে মরহুম) সঙ্গে সৃষ্ট বিরোধকে জুজু বানিয়ে পূর্বপ্রস্তুতিতে ২০১১ সালে জানুয়ারী মাসে রাতারাতি মাদ্রাসাটি সরিয়ে নিয়ে যায় সপার হুজুরের বাড়ির পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ধলাই-বগাদিয়া বাজারে। এরপর থেকেই মাদ্রাসাটি অস্তিত্ব এবং পাঠদান সংকটে অচল হয়ে পড়লেও লায় পাওয়াতে সমর্থ হয় জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে। আয়-ব্যয়েও।

শেষতক ন্যায্যতার প্রশ্নে পিতার কাছ থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত তৃণমূলে ছড়িয়ে দিয়ে সফল নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠা জননন্দিত নেতা কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের টানা তিনবারের নির্বাচিত এমপি রাষ্ট্রপতি-পুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ন্যায়পালের ভূমিকায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে গত ১১ এপ্রিল ‘২১ সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে মাদ্রাসাটি নিজভূমে ফিরার সিদ্ধান্তে উন্নয়নমূলক কাজও শুরু করে দেয়া হয়।

কিন্তু বিধিবাম! আসুরিক শক্তিটি, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষাবিপর্যয়ের কারণ, তারাই মাদ্রাসাটি কব্জায় রাখতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মিথ তৈরি করে সাংসদের সিদ্ধান্তের বিপরীতে বরাবরের মতো আলাদা এক অনৈতিক চেতনা খোঁজা হচ্ছে, যা নেতৃত্বেের ভেতর নেতৃত্ব সক্রিয়তায় শক্তিমত্তারই প্রতিফলন। তেমনটি প্রত্যক্ষ করা গেছে পার্শ্ববর্তী বগাদিয়া প্রাইমারি স্কুলের সত্যব্রতী প্রধান শিক্ষককে নাজেহালে, যিনি পেশাদারির শ্রেষ্ঠত্বে উপজেলায় অদ্বিতীয় এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় মেধায় মন-মননে স্কুলটি ‘সি’ গ্রেড থেকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত শুধু নয়, বছর বছর বৃত্তিমূলক মানদন্ডের উচ্চতায় নেয়া সত্ত্বেও যান যায়!

এসব বাজে দৃষ্টান্ত সমাজে অগণিত। খন্ডিত সত্যের সৃষ্ট পরিবেশ থেকে শিক্ষার্থীরাও নিজের স্বার্থতা ও সংকীর্ণতা ছাড়া ভালো কিছু শিখছে না, আত্মত্যাগ ও অপরকে সম্মান করতে শিখছে না। হারিয়ে ফেলছে মূল্যবোধ নৈতিকতা আর সুকুমার বৃত্তিগুলো। আগামী কর্ণধাররা ক্ষীণচেতা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বেড়ে উঠছে নিপাট অন্যায়ের মধ্যে। সুশিক্ষিত জাতি ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে ক্রিমিনাল কার্যক্রমকে ক্রিমিনাল কার্যক্রম হিসেবেই ট্রিট করা উচিত, রাজনীতি হিসেবে নয়। এপিজমেন্টের রাজনীতি বন্ধ করে আইডিওলজি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে অন্যায়কে। একে অস্বীকার করে এলিয়েনেশনের পথে গিয়ে শিক্ষিত উনিফাইড সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। কেননা, চার্লস ডিকেন্সের ‘গ্রেট এক্সপেকশন্স’ উপন্যাসে পিপ নামের বালকটি বলেছিল– “বাচ্চাদের ছোট দুনিয়াতে যেটা সবচেয়ে ভালোভাবে টের পাওয়া যায় সেটা হলো অন্যায়।”

পিপের সেই কথা ভয়ঙ্করভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে গত ২০১৯ সালের এপ্রিলে শ্যামপুর মাদ্রাসাটি ম্যানিস্ট্রি অডিটে স্টাফদের ফাইল ঢাকা নেয়ার ক্ষেত্রে সময়ের সদ্ব্যবহারে জনৈক শিক্ষকের ওপর সুপার হুজুর জুড়ে দেন ‘অমুকের’ কাছে নতজানু হবার শর্ত। এই অমুকরাই গল্পের ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ‘কর্তা’। ইত্যকার কর্তাদের কর্তৃত্বে রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওড়ে নেমে এসেছে অদ্ভুত আঁধার এক, যে হাওড়কে আজ বিশ্বও চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর