কম পরিশ্রমে পাহাড়ে বেশি আয়ের সুযোগ পুরো গাছই টক-মিষ্টি ফলে ঠাসা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টক-মিস্টি ফল লটকন। একসময় পাহাড়ের ঢালু আর খালের পাড়ে লটকন চোখে পড়ত। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে ব্যাপক হারে চাহিদা বাড়ছে লটকনের। পার্বত্য খাগড়াছড়ির স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের সমতলের বিভিন্ন জেলায় লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে আম-লিচু চাষাবাদ হলেও পিছিয়ে আছে লটকন। আম-লিচু চাষে পরিচর্যাসহ মোটা অঙ্কের পুঁজি লাগলেও লটকন ফলে কোনো পুঁজি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ফলে কম পরিশ্রমে অধিক আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে ফলটি।

পার্বত্য তিন জেলার বাইরে সারা দেশে ফলটি লটকন নামে পরিচিত। তবে পাহাড়ে চাকমা ভাষায় ‘পচিমগুল’, মারমা ভাষায় ‘ক্যানাইজুসি’ ও ত্রিপুরা ভাষায় ‘খুচমাই’ নামে পরিচিত সুমিষ্ট এ ফল। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর লটকন পাকতে শুরু করে। একই সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে ফলটি। এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল একটি কৃষি পণ্য। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায় ‘লটকন’ ফল। টক-মিষ্টির লটকন ছোট-বড় সবার কাছেই অতি প্রিয়।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, রামগড়, দীঘিনালা, গুইমারা ও পানছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে স্বল্প-পরিসরে অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। ইতোমধ্যে আগাম লটকন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাড়ির আঙিনা আর পাহাড়ের ঢালুতে গাছে গাছে ঝুলছে লটকনের সোনালি রঙের থোকা। মাটিরাঙার নবীনগর গ্রামের মো. বিল্লাল মিয়ার বাড়ির পাশেই পাহাড়ের ঢালুতে মাঝারি আকারের প্রায় অর্ধ-শতাধিক লটকন গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে লটকনের ব্যাপক ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর লটকনের ফলন কম হয়েছে। ফলন কম হলেও বিনা প্ররিশ্রমে যা পাওয়া যায় কিন্তু খুব কম নয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় পাইকাররা লটকন কেনার জন্য পাহাড়ে আসতে শুরু করেছেন। দাম-দরও জানতে চাইছেন। এক একটি গাছের লটকন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।
দুর্গম পাহাড়ি পাড়া তৈাকাতাং থেকে মাটিরাঙা বাজারে লটকন বিক্রি করতে আসা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তার বাড়ির আশেপাশে অন্তত ৩০টি গাছে লটকন ধরেছে। এবছর লটকন বিক্রি করে তিনি লাখ টাকা আয় করবেন। স্থানীয় বাজার মূল্যেও তিনি বেজায় খুশী।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজা আলী বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে পার্বত্য খাগড়াছড়ির প্রায় সকল উপজেলাতেই ব্যক্তি উদ্যোগে কমবেশি লটকন চাষ হচ্ছে। লটকনের ফলনও ভালো হয়েছে। অধিক সংখ্যায় গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর