ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশরাফুল মোসাদ্দেকের ৬ কবিতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৫১৬ বার

(1)-শামুক-বেজির মতো

শামুকের স্বভাবে প্রবিষ্ট হই বেজির ভঙ্গিমায় তাকিয়ে দেবুলেট

এখন দেখছি বদলে যাওয়া হবে না কখনো কোনোদিন আর

সেই রাখালের কথা গেঁথে রাখি যার বাঁশি ছিল খেজুরের পাতা

যে রাস্তায় ও কখনো হাঁটবে না তাতে ছিল পল্লবিত শ্বেতদ্রোণ

আলাদা পরিচয় ছিল না তার গরু ও ছাগলবিহীন রাখাল

দুপুরের রোদে শিমুলতলায় কাঁচি দিয়ে কুচিকুচি করা ছায়া

অবিশ্বাসের পেখম তুলে নেচে-গেয়ে চলে গেছে মেঘমাখা দিন

লালাভ উত্তুরে মেঘ চোখগুলো উল্টিয়ে তাকায় এখন-তখন

(2)-ফিরে ফিরে আসে

ফিরে ফিরে আসে বসে থাকে ঘাসে

বাদাম চিবানোর হয়তো এখুনি সময়

চোরাকাঁটা হেসে খুব ভালোবেসে

পাজামার মাঠে পুঁতে দেয় কিছুটা প্রণয়

দেহ নিয়ে এসে বলে অবশেষে

এসো তবে হয়ে যাক দেহাদেহি রমণীয়

আমরণ মেলা সনাতন খেলা

শানাও জুবুথুবু ওই তরবারি ওগো প্রিয়

(3)-বলার কিছুই নেই

সময় বদলে গেছে বলে কথা

আফ্রোদিতি এখন নিশানা করেছে ধনুক

বেচারা চিপায় পড়ে হয়ে গেছে কিউপিড

বলার কিছুই নেই অবেলায়

টেডি-চোস্ত স্ট্রেইট-কাট বেলবোটম ডিস্কো

এবং সভ্যতার শো’তে এটাসেটা আসবেই

একবার অনুমতি পেয়ে গেলে

অবিরাম সন্তরণ-অবগাহনের খেলা

হিমজলে এঁকে দেয়া যাবে ঢেউ এর মুদ্রা

উল্লাসে উল্লাসে মহুয়া জম্পেশ

কোষে ও কলায় মাখামাখি তার কিছু রেশ

সময় বদলে গেছে তাই আহা বেশ বেশমনে রেখো

(4)-মনে রেখো

একদিন হয়তো পৃথিবীতে আবার আশ্চর্য সুন্দর জোছনা নামবে—তোমার গলার চারপাশে লকেটসহ ঝুলে থাকবে মালার মতো কয়েকটি আদর। নোনা বাদামের মতো একদিন জিহ্বা প্লাবিত করবে লালা—বুকের উপত্যকায় ফুটবে দুর্দান্ত প্রজাতির অর্কিড। একদিন হয়তো প্রশান্ত মহাসাগরে স্তব্দ হয়ে যাবে ঊর্মিমালিকা—তোমার বাহুর বৃন্তে ফুটবে কবিতার কবি। এ জনমে কি ওই জনমে লুডুর গুঁটিগুলো এসে শুয়ে পড়বে আদুরে বুকবালিশে—চন্দ্র ও সূর্যের চিরায়ত ব্যবধান এসে বিলুপ্ত হয়ে যাবে শূন্যের অভ্যন্তরে।

এইসব কোলাহল হলাহল থামিয়ে অবিচল বাজুমল বাজিয়ে দেবে দাদরার উত্তরাধুনিক প্রকরণ—রাধা তুমি অতঃপর সেইদিন শুধুই শ্যামের।

(5)-আরতিনৃত্যে

পাকাকরলার বীচির মতো লাল হয়ে এসেছে অভিমানী মেকুর

মনে হয় তপ্ত বালির ওপর ফেটে পড়বে কাঁকর

যেকোনো সময় একযোগে বেজে উঠবে বাজনা

একটি টিকটিকির চারপাশে বিষ পিঁপড়ের অবস্থান ধর্মঘট

পেশীবাজ আরশোলাগুলো ডিগবাজি খাচ্ছে খুব

শুভ্রওয়াইনের গ্লাসে ডুবে যাচ্ছে লাল কাতরতা

এক্ষুনি চলো তবে বুকে বুক রেখে দুলে উঠি আরতিনৃত্যে ।

(6)-বেশুমার ল্যাক্সাটেনিল

তখন এমন ছিল না সময়—

বলব বলব কথাটি কোনোদিন তাই হয়নি বলা

আলজিভের তলায় আড়ালেই মমি হয়ে গেছে

বেদনার পৃষ্ঠাগুলো মণ্ডদলা হয়ে

লুকিয়ে পড়েছে ডুলির ভেতর

ডাকপিয়নের অপরাহ্নখচিত খাকি ব্যাগে

হয়তো সেই কথাগুলো তুমি পাঠিয়েছিলে

টাকা দিয়ে অন্য কেউ হাতড়ে নিয়েছে অগোচরে

‘ভুল না আমায়’ এখন ‘ভুলেছি তোমায়’

‘চিঠি দিও’ এখন ‘মোবাইল করি না’ আর

সবুজ সময় লালাভ ঘোড়ার পিঠে চড়ে পেরিয়ে গেছে

হলুদ নগরী—রক্তাক্ত সময় ফুটো করে দিয়েছে

পিচকালো বুলেট—লোডশেডিংয়ের রাত

থ্রি-কোয়ার্টার ট্রাউজার পরে শুয়ে পড়েছে আলো নিবিয়ে

সময় এখন বিদঘুটে অন্ধকার—বেশুমার ল্যাক্সাটেনিল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আশরাফুল মোসাদ্দেকের ৬ কবিতা

আপডেট টাইম : ১২:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

(1)-শামুক-বেজির মতো

শামুকের স্বভাবে প্রবিষ্ট হই বেজির ভঙ্গিমায় তাকিয়ে দেবুলেট

এখন দেখছি বদলে যাওয়া হবে না কখনো কোনোদিন আর

সেই রাখালের কথা গেঁথে রাখি যার বাঁশি ছিল খেজুরের পাতা

যে রাস্তায় ও কখনো হাঁটবে না তাতে ছিল পল্লবিত শ্বেতদ্রোণ

আলাদা পরিচয় ছিল না তার গরু ও ছাগলবিহীন রাখাল

দুপুরের রোদে শিমুলতলায় কাঁচি দিয়ে কুচিকুচি করা ছায়া

অবিশ্বাসের পেখম তুলে নেচে-গেয়ে চলে গেছে মেঘমাখা দিন

লালাভ উত্তুরে মেঘ চোখগুলো উল্টিয়ে তাকায় এখন-তখন

(2)-ফিরে ফিরে আসে

ফিরে ফিরে আসে বসে থাকে ঘাসে

বাদাম চিবানোর হয়তো এখুনি সময়

চোরাকাঁটা হেসে খুব ভালোবেসে

পাজামার মাঠে পুঁতে দেয় কিছুটা প্রণয়

দেহ নিয়ে এসে বলে অবশেষে

এসো তবে হয়ে যাক দেহাদেহি রমণীয়

আমরণ মেলা সনাতন খেলা

শানাও জুবুথুবু ওই তরবারি ওগো প্রিয়

(3)-বলার কিছুই নেই

সময় বদলে গেছে বলে কথা

আফ্রোদিতি এখন নিশানা করেছে ধনুক

বেচারা চিপায় পড়ে হয়ে গেছে কিউপিড

বলার কিছুই নেই অবেলায়

টেডি-চোস্ত স্ট্রেইট-কাট বেলবোটম ডিস্কো

এবং সভ্যতার শো’তে এটাসেটা আসবেই

একবার অনুমতি পেয়ে গেলে

অবিরাম সন্তরণ-অবগাহনের খেলা

হিমজলে এঁকে দেয়া যাবে ঢেউ এর মুদ্রা

উল্লাসে উল্লাসে মহুয়া জম্পেশ

কোষে ও কলায় মাখামাখি তার কিছু রেশ

সময় বদলে গেছে তাই আহা বেশ বেশমনে রেখো

(4)-মনে রেখো

একদিন হয়তো পৃথিবীতে আবার আশ্চর্য সুন্দর জোছনা নামবে—তোমার গলার চারপাশে লকেটসহ ঝুলে থাকবে মালার মতো কয়েকটি আদর। নোনা বাদামের মতো একদিন জিহ্বা প্লাবিত করবে লালা—বুকের উপত্যকায় ফুটবে দুর্দান্ত প্রজাতির অর্কিড। একদিন হয়তো প্রশান্ত মহাসাগরে স্তব্দ হয়ে যাবে ঊর্মিমালিকা—তোমার বাহুর বৃন্তে ফুটবে কবিতার কবি। এ জনমে কি ওই জনমে লুডুর গুঁটিগুলো এসে শুয়ে পড়বে আদুরে বুকবালিশে—চন্দ্র ও সূর্যের চিরায়ত ব্যবধান এসে বিলুপ্ত হয়ে যাবে শূন্যের অভ্যন্তরে।

এইসব কোলাহল হলাহল থামিয়ে অবিচল বাজুমল বাজিয়ে দেবে দাদরার উত্তরাধুনিক প্রকরণ—রাধা তুমি অতঃপর সেইদিন শুধুই শ্যামের।

(5)-আরতিনৃত্যে

পাকাকরলার বীচির মতো লাল হয়ে এসেছে অভিমানী মেকুর

মনে হয় তপ্ত বালির ওপর ফেটে পড়বে কাঁকর

যেকোনো সময় একযোগে বেজে উঠবে বাজনা

একটি টিকটিকির চারপাশে বিষ পিঁপড়ের অবস্থান ধর্মঘট

পেশীবাজ আরশোলাগুলো ডিগবাজি খাচ্ছে খুব

শুভ্রওয়াইনের গ্লাসে ডুবে যাচ্ছে লাল কাতরতা

এক্ষুনি চলো তবে বুকে বুক রেখে দুলে উঠি আরতিনৃত্যে ।

(6)-বেশুমার ল্যাক্সাটেনিল

তখন এমন ছিল না সময়—

বলব বলব কথাটি কোনোদিন তাই হয়নি বলা

আলজিভের তলায় আড়ালেই মমি হয়ে গেছে

বেদনার পৃষ্ঠাগুলো মণ্ডদলা হয়ে

লুকিয়ে পড়েছে ডুলির ভেতর

ডাকপিয়নের অপরাহ্নখচিত খাকি ব্যাগে

হয়তো সেই কথাগুলো তুমি পাঠিয়েছিলে

টাকা দিয়ে অন্য কেউ হাতড়ে নিয়েছে অগোচরে

‘ভুল না আমায়’ এখন ‘ভুলেছি তোমায়’

‘চিঠি দিও’ এখন ‘মোবাইল করি না’ আর

সবুজ সময় লালাভ ঘোড়ার পিঠে চড়ে পেরিয়ে গেছে

হলুদ নগরী—রক্তাক্ত সময় ফুটো করে দিয়েছে

পিচকালো বুলেট—লোডশেডিংয়ের রাত

থ্রি-কোয়ার্টার ট্রাউজার পরে শুয়ে পড়েছে আলো নিবিয়ে

সময় এখন বিদঘুটে অন্ধকার—বেশুমার ল্যাক্সাটেনিল