ঢাকা ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবে যারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৪:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কেউ মুক্তি লাভ করতে পারবে না। যারা দুনিয়াতে আল্লাহর অনুগত জীবন যাপন করবে পরকালে তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করবে এবং যারা তাঁর অবাধ্য হবে তাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখবেন না। হাদিসে এমন কিছু মানুষের কথা এসেছে আল্লাহ যাদের দিকে কৃপাদৃষ্টি দেবেন না।

১. ব্যভিচারী বৃদ্ধ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ পরকালে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৭)

আবু মুয়াবিয়ার বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবে না। হাদিসবিশারদরা বলেন, এখানে এমন তিন ব্যক্তির কথা হয়েছে, যাদের অবস্থানের কারণে তাদের ওপর শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। বৃদ্ধ মানুষের কাছে অন্যদের প্রত্যাশা থাকে সে পাপ কাজ থেকে ফিরে আসবে এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। বিশেষত যৌন আচরণে সে সংযত হবে। কেননা একজন যুবক যে জৈবিক তাড়নার মুখোমুখি হয় একজন বৃদ্ধ তা হয় না।

২. মিথ্যাবাদী শাসক : উল্লিখিত হাদিসে মিথ্যাবাদী শাসকের শাস্তি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ শাসকের যেহেতু অন্যদের কাছে জবাবদিহি থাকে না এবং সে সত্য বললে শাসিতের মতো বিপদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই তাই তার মিথ্যা বলা বেশি দূষণীয়। আধুনিক যুগের মুহাদ্দিসরা বলেন, কর্মী ঠকানোর জন্য নিয়োগদাতা যদি মিথ্যা বলে তবে সেও এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কর্মীর কাছে তার কোনো জবাবদিহি নেই।

৩. অহংকারী দরিদ্র : অহংকার মানুষের জন্য চরম নিন্দনীয়। আল্লাহ অহংকারী মানুষ পছন্দ করেন না। দরিদ্র ব্যক্তির জন্য অহংকার অহমিকা বেশি অশোভন। যেমনটি উল্লিখিত হাদিসে বলা হয়েছে। কেননা যার নিত্যপ্রয়োজনগুলোই ঠিকমতো পূরণ হয় সে কেন অন্যদের ওপর অহংকার করবে? সে বরং তার দুরবস্থার জন্য বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে।

৪. মিথ্যা শপথকারী পণ্য বিক্রেতা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না। এক. যে লোক তার মালের ওপর এ মিথ্যা কসম করে যে, একে এখন যে মূল্যে বিক্রি করা হলো এর চেয়ে বেশি মূল্যে তা বিক্রয় করা যাচ্ছিল, দুই. যে কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য আসরের সালাতের পর মিথ্যা শপথ করে, তিন. যে প্রয়োজনের বেশি পানি আটকিয়ে রাখে। আল্লাহ তাকে উদ্দেশ করে কিয়ামতের দিন বলবেন, আজ আমি আমার অনুগ্রহ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করব, যেমনি তুমি সে অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করতে যা তোমার হাতে অর্জিত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৬)

উল্লিখিত হাদিসে কসম করে পণ্য বিক্রেতা প্রতারণা, অন্যায়ভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও বাজারের স্বাভাবিক মূল্যপ্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৫. আত্মসাতের জন্য মিথ্যা কসমকারী : হাদিসে আসরের পর কসম করার কথা বলার কারণ হলো আরবরা এ সময়টিকে বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে বিশ্বাস করত। এ ছাড়া হাদিসে এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার কথা এসেছে। নতুবা মিথ্যা শপথের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ সব সময়ই নিষিদ্ধ।

৬. জাতীয় সম্পদ অপচয়কারী : আলোচ্য হাদিসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি আটকে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে এবং কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—তুমি এমন বিষয়ে অনুদার ছিলে তা তোমার অর্জিত নয়। এ হাদিসে ধারণা লাভ করা যায় জাতীয় সম্পদ—যাতে সবার অধিকার রয়েছে অপচয় ও অপদখল করা নিন্দনীয়।

৭. আরো যারা কৃপাদৃষ্টি পাবে না : আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের সঙ্গে কোনো কথাও বলবেন না, তাদের পরিশুদ্ধতা প্রত্যয়ন করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। …তারা হলো—যেসব পুরুষ পায়ের গিরার নিচে (পায়ের উঁচু হাড়) কাপড় পরিধান করে, মিথ্যা শপথ করে পণ্য চালিয়ে দেয় এবং দান করে খোঁটা দেয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬৩)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবে যারা

আপডেট টাইম : ১০:১৪:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কেউ মুক্তি লাভ করতে পারবে না। যারা দুনিয়াতে আল্লাহর অনুগত জীবন যাপন করবে পরকালে তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করবে এবং যারা তাঁর অবাধ্য হবে তাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখবেন না। হাদিসে এমন কিছু মানুষের কথা এসেছে আল্লাহ যাদের দিকে কৃপাদৃষ্টি দেবেন না।

১. ব্যভিচারী বৃদ্ধ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ পরকালে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৭)

আবু মুয়াবিয়ার বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবে না। হাদিসবিশারদরা বলেন, এখানে এমন তিন ব্যক্তির কথা হয়েছে, যাদের অবস্থানের কারণে তাদের ওপর শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। বৃদ্ধ মানুষের কাছে অন্যদের প্রত্যাশা থাকে সে পাপ কাজ থেকে ফিরে আসবে এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। বিশেষত যৌন আচরণে সে সংযত হবে। কেননা একজন যুবক যে জৈবিক তাড়নার মুখোমুখি হয় একজন বৃদ্ধ তা হয় না।

২. মিথ্যাবাদী শাসক : উল্লিখিত হাদিসে মিথ্যাবাদী শাসকের শাস্তি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ শাসকের যেহেতু অন্যদের কাছে জবাবদিহি থাকে না এবং সে সত্য বললে শাসিতের মতো বিপদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই তাই তার মিথ্যা বলা বেশি দূষণীয়। আধুনিক যুগের মুহাদ্দিসরা বলেন, কর্মী ঠকানোর জন্য নিয়োগদাতা যদি মিথ্যা বলে তবে সেও এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কর্মীর কাছে তার কোনো জবাবদিহি নেই।

৩. অহংকারী দরিদ্র : অহংকার মানুষের জন্য চরম নিন্দনীয়। আল্লাহ অহংকারী মানুষ পছন্দ করেন না। দরিদ্র ব্যক্তির জন্য অহংকার অহমিকা বেশি অশোভন। যেমনটি উল্লিখিত হাদিসে বলা হয়েছে। কেননা যার নিত্যপ্রয়োজনগুলোই ঠিকমতো পূরণ হয় সে কেন অন্যদের ওপর অহংকার করবে? সে বরং তার দুরবস্থার জন্য বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে।

৪. মিথ্যা শপথকারী পণ্য বিক্রেতা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না। এক. যে লোক তার মালের ওপর এ মিথ্যা কসম করে যে, একে এখন যে মূল্যে বিক্রি করা হলো এর চেয়ে বেশি মূল্যে তা বিক্রয় করা যাচ্ছিল, দুই. যে কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য আসরের সালাতের পর মিথ্যা শপথ করে, তিন. যে প্রয়োজনের বেশি পানি আটকিয়ে রাখে। আল্লাহ তাকে উদ্দেশ করে কিয়ামতের দিন বলবেন, আজ আমি আমার অনুগ্রহ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করব, যেমনি তুমি সে অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করতে যা তোমার হাতে অর্জিত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৬)

উল্লিখিত হাদিসে কসম করে পণ্য বিক্রেতা প্রতারণা, অন্যায়ভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও বাজারের স্বাভাবিক মূল্যপ্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৫. আত্মসাতের জন্য মিথ্যা কসমকারী : হাদিসে আসরের পর কসম করার কথা বলার কারণ হলো আরবরা এ সময়টিকে বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে বিশ্বাস করত। এ ছাড়া হাদিসে এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার কথা এসেছে। নতুবা মিথ্যা শপথের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ সব সময়ই নিষিদ্ধ।

৬. জাতীয় সম্পদ অপচয়কারী : আলোচ্য হাদিসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি আটকে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে এবং কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—তুমি এমন বিষয়ে অনুদার ছিলে তা তোমার অর্জিত নয়। এ হাদিসে ধারণা লাভ করা যায় জাতীয় সম্পদ—যাতে সবার অধিকার রয়েছে অপচয় ও অপদখল করা নিন্দনীয়।

৭. আরো যারা কৃপাদৃষ্টি পাবে না : আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের সঙ্গে কোনো কথাও বলবেন না, তাদের পরিশুদ্ধতা প্রত্যয়ন করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। …তারা হলো—যেসব পুরুষ পায়ের গিরার নিচে (পায়ের উঁচু হাড়) কাপড় পরিধান করে, মিথ্যা শপথ করে পণ্য চালিয়ে দেয় এবং দান করে খোঁটা দেয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬৩)