ঢাকা ০৩:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাপকাজের প্রকাশ মারাত্মক অপরাধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৮৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তাওবা করে পাপমোচন  মানুষ স্বভাবতই গুনাহ বা অপরাধপ্রবণ হয়। এটি মানব চরিত্রের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আর মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তবে শর্ত হলো, গুনাহের পর সেটি গোপন রেখে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম সম্পাদন করবে, অতঃপর তাওবা করবে এবং সংশোধন করে নেবে, তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)

আর ক্ষমা পার্থনা ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম ইবাদত। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন। আমাদের অনেকেরই এমন এমন অপরাধ রয়েছে, যা মানুষ জানলে সমাজে মুখ দেখাতে পারব না। কিন্তু আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সেগুলো ঢেকে রেখেছেন। এটি বান্দার প্রতি তাঁর অবারিত অনুগ্রহমাত্র। কারণ তিনি চান বান্দা তাওবা করে গুনাহমুক্ত হোক। হাদিসের ভাষ্যমতে, মানুষ যদি অপরাধ না করত আর ক্ষমা প্রার্থনা না করত তবে আল্লাহ এ জাতিকে উঠিয়ে নিয়ে অন্য জাতি পাঠাতেন।

পাপ প্রকাশকারীর ক্ষমা নেই : ক্ষমার এত সর্বব্যাপী ঘোষণা থাকার পরও মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে ক্ষমা করবেন না। মহানবী (সা.) সেই শ্রেণির মানুষের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে; তবে ওই সব লোককে ক্ষমা করা হবে না, যারা পাপ করার পর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। অন্যের কাছে প্রকাশ করার একটি দিক হলো কোনো ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোনো গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহটিকে গোপন রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের কাছে বলল, হে অমুক! জানো, রাতে আমি এ কাজ করেছি। সারা রাত মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাপটি গোপন রাখলেন আর ভোর হওয়া মাত্রই আল্লাহর ঢেকে রাখা পাপের বিষয়টি সে ব্যক্তি নিজেই প্রকাশ করে দিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

পাপকাজের প্রকাশ আল্লাহর অপছন্দ : হাদিসের ঘোষণা থেকে এ কথা পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে কোনো ব্যক্তি যদি অনিচ্ছায় কোনো গুনাহ করে বসে আর তা গোপন রাখে; তাহলে আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির পাপ কাজ গোপন রাখেন। অতঃপর মানুষটি তাওবা করলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।’

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি মদিনা থেকে দূরবর্তী এক স্থানে এক মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং আমাকে আমার প্রাপ্য শাস্তি দিন।’ তখন ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তো তোমার পাপ গোপন রেখেছিলেন, তবে কেন তুমি তা গোপন রাখলে না?’ (সহিহ মুসলিম)

পাপকাজের প্রচার কাম্য নয় : অথচ আজকাল আমরা প্রতিনিয়ত মহান রবের বিধান অমান্য করে নানা ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছি। আর সেসবের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে নিজের গুনাহের অগণিত সাক্ষী তৈরি করে চলেছি। তা ছাড়া গুনাহ করে যে ছবি বা ভিডিওগুলো আমরা অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছি, এগুলো দেখে যত মানুষ গুনাহ করবে, যিনি জিনিসটি প্রথম আপলোড করেছেন, তিনি সবার সমপরিমাণ গুনাহে গুনাহগার হবে, নাউজুবিল্লাহ।

অতএব, আসুন আমরা পাপাচার থেকে সাবধান হই। কোনোভাবে পাপ হয়ে গেলে তা প্রচার করে বেড়ানো থেকে বিরত থাকি। আর আল্লাহর আবৃত পর্দাকে উন্মোচন করে নিজের সর্বনাশ করা থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পাপমুক্ত জীবন দান করুন। পাপ হয়ে গেলে তা গোপন রাখার এবং ক্ষমা লাভের জন্য তাওবা করার তাওফিক দান করুন। সেই সঙ্গে আল্লাহ আমাদের সবার গোপন পাপগুলো ক্ষমা করে দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাপকাজের প্রকাশ মারাত্মক অপরাধ

আপডেট টাইম : ১০:২৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তাওবা করে পাপমোচন  মানুষ স্বভাবতই গুনাহ বা অপরাধপ্রবণ হয়। এটি মানব চরিত্রের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আর মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তবে শর্ত হলো, গুনাহের পর সেটি গোপন রেখে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম সম্পাদন করবে, অতঃপর তাওবা করবে এবং সংশোধন করে নেবে, তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)

আর ক্ষমা পার্থনা ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম ইবাদত। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন। আমাদের অনেকেরই এমন এমন অপরাধ রয়েছে, যা মানুষ জানলে সমাজে মুখ দেখাতে পারব না। কিন্তু আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সেগুলো ঢেকে রেখেছেন। এটি বান্দার প্রতি তাঁর অবারিত অনুগ্রহমাত্র। কারণ তিনি চান বান্দা তাওবা করে গুনাহমুক্ত হোক। হাদিসের ভাষ্যমতে, মানুষ যদি অপরাধ না করত আর ক্ষমা প্রার্থনা না করত তবে আল্লাহ এ জাতিকে উঠিয়ে নিয়ে অন্য জাতি পাঠাতেন।

পাপ প্রকাশকারীর ক্ষমা নেই : ক্ষমার এত সর্বব্যাপী ঘোষণা থাকার পরও মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে ক্ষমা করবেন না। মহানবী (সা.) সেই শ্রেণির মানুষের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে; তবে ওই সব লোককে ক্ষমা করা হবে না, যারা পাপ করার পর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। অন্যের কাছে প্রকাশ করার একটি দিক হলো কোনো ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোনো গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহটিকে গোপন রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের কাছে বলল, হে অমুক! জানো, রাতে আমি এ কাজ করেছি। সারা রাত মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাপটি গোপন রাখলেন আর ভোর হওয়া মাত্রই আল্লাহর ঢেকে রাখা পাপের বিষয়টি সে ব্যক্তি নিজেই প্রকাশ করে দিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

পাপকাজের প্রকাশ আল্লাহর অপছন্দ : হাদিসের ঘোষণা থেকে এ কথা পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে কোনো ব্যক্তি যদি অনিচ্ছায় কোনো গুনাহ করে বসে আর তা গোপন রাখে; তাহলে আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির পাপ কাজ গোপন রাখেন। অতঃপর মানুষটি তাওবা করলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।’

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি মদিনা থেকে দূরবর্তী এক স্থানে এক মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং আমাকে আমার প্রাপ্য শাস্তি দিন।’ তখন ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তো তোমার পাপ গোপন রেখেছিলেন, তবে কেন তুমি তা গোপন রাখলে না?’ (সহিহ মুসলিম)

পাপকাজের প্রচার কাম্য নয় : অথচ আজকাল আমরা প্রতিনিয়ত মহান রবের বিধান অমান্য করে নানা ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছি। আর সেসবের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে নিজের গুনাহের অগণিত সাক্ষী তৈরি করে চলেছি। তা ছাড়া গুনাহ করে যে ছবি বা ভিডিওগুলো আমরা অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছি, এগুলো দেখে যত মানুষ গুনাহ করবে, যিনি জিনিসটি প্রথম আপলোড করেছেন, তিনি সবার সমপরিমাণ গুনাহে গুনাহগার হবে, নাউজুবিল্লাহ।

অতএব, আসুন আমরা পাপাচার থেকে সাবধান হই। কোনোভাবে পাপ হয়ে গেলে তা প্রচার করে বেড়ানো থেকে বিরত থাকি। আর আল্লাহর আবৃত পর্দাকে উন্মোচন করে নিজের সর্বনাশ করা থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পাপমুক্ত জীবন দান করুন। পাপ হয়ে গেলে তা গোপন রাখার এবং ক্ষমা লাভের জন্য তাওবা করার তাওফিক দান করুন। সেই সঙ্গে আল্লাহ আমাদের সবার গোপন পাপগুলো ক্ষমা করে দিন।