ঢাকা ০৩:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামে বিজয় উদ্যাপনের রূপরেখা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৪৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামে বিজয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নসর ও ফাতহ নামে বিজয় শিরোনামে দুটি সুরাও রয়েছে পবিত্র কোরআনে। হাদিসেও বিজয় উদ্যাপনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। অসংখ্য ত্যাগ-তিতিক্ষার মহাসাগর পেরিয়েই আসে বিজয় নামক সোনার হরিণ। আর তা যদি কিনতে হয় লাখো শহিদের তাজা রক্তের বিনিময়ে, তাহলে তো সেই বিজয় অমূল্য রতন। তাই তো এই মহামূল্যবান বিজয় উদ্যাপনে করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা এসেছে।

কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কর। আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।’ (নসর, আয়াত :১-৩)। এ সুরায় বিজয় উদ্যাপনের দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

এক. আল্লাহর প্রশংসাগাথায় তার পবিত্রতা বর্ণনা করা। দুই. যুদ্ধ চলাকালে অজান্তে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিজয়ের আরেক রূপের ব্যাপারে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা (বিজয়) দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দান করবে এবং সত্কাজের আদেশ করবে ও অসত্কাজ থেকে নিষেধ করবে।’ (সুরা হজ, আয়াত :২২)

হাদিসে বিজয় উদ্যাপনে তিন দফা কর্মসূচির উল্লেখ পাওয়া যায়। এক. আট রাকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করা। কেননা নবি করিম (স) মক্কা বিজয়ের দিন শুকরিয়া স্বরূপ আট রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। (জাদুল মায়াদ, আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি) নবিজির দেখাদেখি অনেক সাহাবিও তার অনুকরণে আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন।

দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবি (স) আনন্দ উদ্যাপন করেছেন। বিজয়ে প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন আট রাকাত নামাজ। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে তিনি সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভ্রান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে, তারা যত অত্যাচার-নির্যাতনকারীই হোক তারাও নিরাপদ। এ ছিল প্রিয়নবির মক্কা বিজয়ের আনন্দ উত্সবের ঘোষণা।

দুই. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসা। স্বদেশপ্রেম প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস। বিশেষত মুসলমানদের প্রতিটি রক্তকণিকায়ই দেশপ্রেমের শিহরণ থাকা বাঞ্ছনীয়। দেশপ্রেমের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হলো, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা।

নবি করিম (স) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে এক দিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা দেওয়া এক মাস পর্যন্ত সিয়াম পালন ও এক মাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক অব্যাহত থাকবে, কবর-হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম-১৯১৩) মহানবি (স) কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে তার চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, ‘এই উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। ’ (বুখারি-১০২৮)

তিন. সৎকাজে আদেশ দেওয়া ও অসত্কাজে নিষেধ করা। কেননা মহানবি (স) মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে সত্য ও সুন্দরের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া বিজয় উদ্যাপনে কোরআন পাঠ, ফাতেহা পাঠ, দোয়ার মাহফিলসহ বিভিন্নভাবে ইসালে সাওয়াব করা যেতে পারে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইসলামে বিজয় উদ্যাপনের রূপরেখা

আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামে বিজয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নসর ও ফাতহ নামে বিজয় শিরোনামে দুটি সুরাও রয়েছে পবিত্র কোরআনে। হাদিসেও বিজয় উদ্যাপনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। অসংখ্য ত্যাগ-তিতিক্ষার মহাসাগর পেরিয়েই আসে বিজয় নামক সোনার হরিণ। আর তা যদি কিনতে হয় লাখো শহিদের তাজা রক্তের বিনিময়ে, তাহলে তো সেই বিজয় অমূল্য রতন। তাই তো এই মহামূল্যবান বিজয় উদ্যাপনে করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা এসেছে।

কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কর। আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।’ (নসর, আয়াত :১-৩)। এ সুরায় বিজয় উদ্যাপনের দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

এক. আল্লাহর প্রশংসাগাথায় তার পবিত্রতা বর্ণনা করা। দুই. যুদ্ধ চলাকালে অজান্তে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিজয়ের আরেক রূপের ব্যাপারে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা (বিজয়) দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দান করবে এবং সত্কাজের আদেশ করবে ও অসত্কাজ থেকে নিষেধ করবে।’ (সুরা হজ, আয়াত :২২)

হাদিসে বিজয় উদ্যাপনে তিন দফা কর্মসূচির উল্লেখ পাওয়া যায়। এক. আট রাকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করা। কেননা নবি করিম (স) মক্কা বিজয়ের দিন শুকরিয়া স্বরূপ আট রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। (জাদুল মায়াদ, আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি) নবিজির দেখাদেখি অনেক সাহাবিও তার অনুকরণে আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন।

দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবি (স) আনন্দ উদ্যাপন করেছেন। বিজয়ে প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন আট রাকাত নামাজ। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে তিনি সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভ্রান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে, তারা যত অত্যাচার-নির্যাতনকারীই হোক তারাও নিরাপদ। এ ছিল প্রিয়নবির মক্কা বিজয়ের আনন্দ উত্সবের ঘোষণা।

দুই. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসা। স্বদেশপ্রেম প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস। বিশেষত মুসলমানদের প্রতিটি রক্তকণিকায়ই দেশপ্রেমের শিহরণ থাকা বাঞ্ছনীয়। দেশপ্রেমের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হলো, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা।

নবি করিম (স) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে এক দিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা দেওয়া এক মাস পর্যন্ত সিয়াম পালন ও এক মাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক অব্যাহত থাকবে, কবর-হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম-১৯১৩) মহানবি (স) কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে তার চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, ‘এই উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। ’ (বুখারি-১০২৮)

তিন. সৎকাজে আদেশ দেওয়া ও অসত্কাজে নিষেধ করা। কেননা মহানবি (স) মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে সত্য ও সুন্দরের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া বিজয় উদ্যাপনে কোরআন পাঠ, ফাতেহা পাঠ, দোয়ার মাহফিলসহ বিভিন্নভাবে ইসালে সাওয়াব করা যেতে পারে।