ঢাকা ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকার লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০
  • ২১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টমাস কার্কম্যান একজন আরবান প্ল্যানার এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। তার ইনোভেটিভ আইডিয়া দেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচমন্ড তাকে গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রিত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। শুরু হয় একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির রাজনৈতিক জীবন।

একদিন সকালে প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ তাকে ডেকে বলেন, প্রেসিডেন্ট চান না আপনি আর এ দায়িত্বে থাকেন। এর অর্থ হচ্ছে, তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে একেবারে বাতিল করে দেননি, ন্যাটোর মার্কিন রাষ্ট্রদূত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় কার্কম্যানকে। সেদিন বিকালেই ক্যাপিটোল বিল্ডিং বোমার আঘাতে উড়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট, তার পুরো কেবিনেট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সব সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন। অনুপস্থিত থাকার কারণে বেঁচে যান কার্কম্যান এবং তিনিই হন প্রেসিডেন্ট পদের ডেজিগনেটেড সারভাইবার। এটি একটি আমেরিকান সিরিয়ালের গল্প। সিরিয়ালের নাম ‘ডেজিগনেটেড সারভাইবার’। একজন অরাজনৈতিক, অনির্বাচিত ব্যক্তির ক্রমশ যোগ্য প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠা, হাজারও ষড়যন্ত্র এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দেয়া- এসব নিয়ে গড়ে উঠেছে সিরিয়ালের গল্প।

প্রতি মুহূর্তে টানটান উত্তেজনা। সিরিয়ালটি আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি। দেখছি এজন্য যে, মার্কিন রাজনীতি, লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়া, নির্বাচনব্যবস্থা- এসব আমি ভালো করে বুঝতে চাই। সিরিয়ালে তো আর সব পাওয়া যায় না। শেখার জন্য, বোঝার জন্য আমাকে পড়তে হয়। গুগল ঘেটে পড়তে থাকি।

ফেডারেল সরকারের লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে হাউস অব কংগ্রেস। এটি সংসদের নিম্নকক্ষ। আমেরিকায় ৪৩৫টি কংগ্রেসনাল জেলা আছে। প্রতি জেলা থেকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন প্রতি দুই বছর পরপর হয়, অর্থাৎ নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যের মেয়াদকাল দুই বছর। কংগ্রেস নির্বাচনে প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা হচ্ছে ২৫ (শপথ গ্রহণের দিন, নির্বাচনের দিন নয়) বা তদূর্ধ্ব বয়সের মার্কিন নাগরিক। যার নাগরিকত্ব প্রাপ্তির বয়স কমপক্ষে ৭ বছর, তিনি এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচনী স্টেটের বাসিন্দা হতে হবে।

হাউস অব কংগ্রেসের ওপর হচ্ছে সিনেট। সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০। আমেরিকার প্রতিটি স্টেট থেকে দু’জন করে নির্বাচিত প্রতিনিধি সিনেটে তার স্টেটকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের বলা হয় সিনেটর। সিনেটরদের মেয়াদকাল ছয় বছর। অর্থাৎ প্রতি ছয় বছর পরপর সিনেটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটর পদের জন্য নির্বাচন করার যোগ্যতা হচ্ছে ৩০ বা তদূর্ধ্ব বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক, যার নাগরিকত্বের বয়স কমপক্ষে ৯ বছর।

প্রার্থীকে অবশ্যই তার নির্বাচনী স্টেটের বাসিন্দা হতে হবে। যে কোনো কংগ্রেস সদস্য একটি আইন বিল আকারে প্রস্তাব করতে পারেন। কংগ্রেসের কেরানি তা গ্রহণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন নির্দিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কংগ্রেসের ২০টি স্থায়ী কমিটি আছে, আছে অসংখ্য বিশেষজ্ঞ সাবকমিটি। কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিলটি কংগ্রেস সভায় উত্থাপন করা হয়। সিম্পল মেজরিটি অর্থাৎ ২১৮ ভোট পেলেই বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়ে যায়।

এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। কংগ্রেসে পাস হওয়া বিল সিনেটে জমা দেয়া হয়। সিনেটের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইয়ের পর বিলটি সিনেটের সভায় উত্থাপন করা হয়। বিলের পক্ষে ৫১ ভোট পড়লেই বিল পাস হয়ে যায়। যদি কখনও ৫০/৫০ ভোট পড়ে, তাহলে ডিসাইডিং ভোট দেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সিনেট যদি বিলে কোনো সংশোধন প্রস্তাব করে, তখন এটিকে আবার কংগ্রেসে পাঠানো হয় সম্মতির জন্য।

সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত বিল প্রেসিডেন্টের কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রেসিডেন্ট ১০ দিনের মধ্যে স্বাক্ষর করেন বা ভেটো দেন। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর বিলটি ফেডারেল আইনে পরিণত হয়। যদি কখনও প্রেসিডেন্ট ভেটো দেন এবং স্বাক্ষর না করেন, তাহলে দুই কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রেসিডেন্টের আপত্তি নাকচ হয়ে যায় এবং বিলটি আইনে পরিণত হয়।

কাজী জহিরুল ইসলাম : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমেরিকার লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়া

আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টমাস কার্কম্যান একজন আরবান প্ল্যানার এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। তার ইনোভেটিভ আইডিয়া দেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচমন্ড তাকে গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রিত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। শুরু হয় একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির রাজনৈতিক জীবন।

একদিন সকালে প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ তাকে ডেকে বলেন, প্রেসিডেন্ট চান না আপনি আর এ দায়িত্বে থাকেন। এর অর্থ হচ্ছে, তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে একেবারে বাতিল করে দেননি, ন্যাটোর মার্কিন রাষ্ট্রদূত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় কার্কম্যানকে। সেদিন বিকালেই ক্যাপিটোল বিল্ডিং বোমার আঘাতে উড়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট, তার পুরো কেবিনেট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সব সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন। অনুপস্থিত থাকার কারণে বেঁচে যান কার্কম্যান এবং তিনিই হন প্রেসিডেন্ট পদের ডেজিগনেটেড সারভাইবার। এটি একটি আমেরিকান সিরিয়ালের গল্প। সিরিয়ালের নাম ‘ডেজিগনেটেড সারভাইবার’। একজন অরাজনৈতিক, অনির্বাচিত ব্যক্তির ক্রমশ যোগ্য প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠা, হাজারও ষড়যন্ত্র এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দেয়া- এসব নিয়ে গড়ে উঠেছে সিরিয়ালের গল্প।

প্রতি মুহূর্তে টানটান উত্তেজনা। সিরিয়ালটি আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি। দেখছি এজন্য যে, মার্কিন রাজনীতি, লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়া, নির্বাচনব্যবস্থা- এসব আমি ভালো করে বুঝতে চাই। সিরিয়ালে তো আর সব পাওয়া যায় না। শেখার জন্য, বোঝার জন্য আমাকে পড়তে হয়। গুগল ঘেটে পড়তে থাকি।

ফেডারেল সরকারের লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে হাউস অব কংগ্রেস। এটি সংসদের নিম্নকক্ষ। আমেরিকায় ৪৩৫টি কংগ্রেসনাল জেলা আছে। প্রতি জেলা থেকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন প্রতি দুই বছর পরপর হয়, অর্থাৎ নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যের মেয়াদকাল দুই বছর। কংগ্রেস নির্বাচনে প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা হচ্ছে ২৫ (শপথ গ্রহণের দিন, নির্বাচনের দিন নয়) বা তদূর্ধ্ব বয়সের মার্কিন নাগরিক। যার নাগরিকত্ব প্রাপ্তির বয়স কমপক্ষে ৭ বছর, তিনি এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচনী স্টেটের বাসিন্দা হতে হবে।

হাউস অব কংগ্রেসের ওপর হচ্ছে সিনেট। সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০। আমেরিকার প্রতিটি স্টেট থেকে দু’জন করে নির্বাচিত প্রতিনিধি সিনেটে তার স্টেটকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের বলা হয় সিনেটর। সিনেটরদের মেয়াদকাল ছয় বছর। অর্থাৎ প্রতি ছয় বছর পরপর সিনেটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটর পদের জন্য নির্বাচন করার যোগ্যতা হচ্ছে ৩০ বা তদূর্ধ্ব বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক, যার নাগরিকত্বের বয়স কমপক্ষে ৯ বছর।

প্রার্থীকে অবশ্যই তার নির্বাচনী স্টেটের বাসিন্দা হতে হবে। যে কোনো কংগ্রেস সদস্য একটি আইন বিল আকারে প্রস্তাব করতে পারেন। কংগ্রেসের কেরানি তা গ্রহণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন নির্দিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কংগ্রেসের ২০টি স্থায়ী কমিটি আছে, আছে অসংখ্য বিশেষজ্ঞ সাবকমিটি। কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিলটি কংগ্রেস সভায় উত্থাপন করা হয়। সিম্পল মেজরিটি অর্থাৎ ২১৮ ভোট পেলেই বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়ে যায়।

এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। কংগ্রেসে পাস হওয়া বিল সিনেটে জমা দেয়া হয়। সিনেটের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইয়ের পর বিলটি সিনেটের সভায় উত্থাপন করা হয়। বিলের পক্ষে ৫১ ভোট পড়লেই বিল পাস হয়ে যায়। যদি কখনও ৫০/৫০ ভোট পড়ে, তাহলে ডিসাইডিং ভোট দেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সিনেট যদি বিলে কোনো সংশোধন প্রস্তাব করে, তখন এটিকে আবার কংগ্রেসে পাঠানো হয় সম্মতির জন্য।

সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত বিল প্রেসিডেন্টের কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রেসিডেন্ট ১০ দিনের মধ্যে স্বাক্ষর করেন বা ভেটো দেন। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর বিলটি ফেডারেল আইনে পরিণত হয়। যদি কখনও প্রেসিডেন্ট ভেটো দেন এবং স্বাক্ষর না করেন, তাহলে দুই কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রেসিডেন্টের আপত্তি নাকচ হয়ে যায় এবং বিলটি আইনে পরিণত হয়।

কাজী জহিরুল ইসলাম : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি