ঢাকা ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৯ নিরস্ত্র আফগানকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে অস্ট্রেলিয়ান সেনারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
  • ১৯১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আফগানিস্তানে ৩৯ নিরস্ত্র কারাবন্দি ও বেসামরিক লোককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছে অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনী।

গত চার বছর ধরে তদন্তের পর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের জন্য ‘রক্ত’ ঝরাতে প্রতিরক্ষাহীন বন্দিদের হত্যা করতে সেনাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা।

অর্থাৎ ‘রক্তপাতে’ সেনাদের অভ্যস্ত করে তুলতে এভাবে তাদের দিয়ে কাউকে ‘প্রথম হত্যা’ করানো হতো। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সম্ভাব্য ফৌজদারি বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে সাবেক ও বর্তমান ১৯ সেনার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বিশেষ বাহিনীর আচরণ নিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার জেনারেল অ্যাঙ্গুস জন ক্যাম্পবেল বলেন, ২৩টি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় অস্ট্রেলীয় বিশেষ বাহিনীর সেনাদের হাতে ৩৯ জনকে বেআইনিভাবে হত্যার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আমাদের কাছে আছে।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের উত্তাপের’ বাইরে গিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। সামরিক আচরণ ও পেশাগত মূল্যবোধ গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে এসেছে তদন্তে।

বেসামরিক নাগরিক ও কারাবন্দিদের বেআইনিভাবে হত্যাকাণ্ড কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলেও জানান ক্যাম্পবেল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশকে আগেই ধরে আনা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে বন্দি, কৃষক, শিশু ও স্থানীয় আফগান নাগরিকরা রয়েছেন।

প্রতিবেদনের নির্দেশনা অনুসারে ক্যাম্পবেল বলেন, অস্ট্রেলীয় সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ১৯ সদস্যকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে কিনা; তা নিশ্চিত হতে তাদের বিশেষ তদন্তকারীদের হাতে সোপর্দ করা হবে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেইনল্ডস গত সপ্তাহে বলেন, হেগ শহরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে স্থানীয় বিচারকে অস্বীকার করতে পারে। ক্যানবেরাকে এমন পরামর্শই দেয়া হয়েছে।

এর আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদনে অস্ট্রেলীয়দের জন্য শক্ত ও কঠিন সংবাদ নিয়ে আসতে পারে।

যখন এই প্রতিবেদন গুরুতর সংশোধন করা হয়, তখন এই অভিযোগও যুক্ত করা হয় যে, নিরস্ত্র আফগানদের হত্যায় বিশেষ বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তদন্তে বলা হয়, একজন বন্দিকে হত্যা সিনিয়র টহল কমান্ডারদের অনুমতি নিতে হবে সেনাদের।

‘যখন কোনো একজন নিরস্ত্র আফগান হত্যার শিকার হতেন, তখন হত্যায় দায়ীরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা দিতে বিদেশি অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি দিয়ে একটা কৃত্রিম লড়াইয়ের দৃশ্যপট সাজিয়ে ফেলতেন।’

এসব ঘটনা আর কখনই প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হতো না। গোপনীয়তার সংস্কৃতি ও বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভাজনের কারণে টহল দলের মধ্যে সেই তথ্য সীমাবদ্ধ থেকে যেত।

আর গোপনীয়তার এই পর্দার কারণে অভিযোগ আলোর মুখ দেখতে অনেক দীর্ঘ সময় নেয়।

এর আগে এসব ঘটনার গোপন নথি অস্ট্রেলীয় সম্প্রচার কর্পোরেশনকে দেয়ায় সাবেক সামরিক আইনজীবী ডেভিড ম্যাকব্রিডের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি স্বীকার করে বলেন, জাতীয় স্বার্থেই তিনি এ কাগজ সরবরাহ করেছেন।

নিউ সাউথ ওয়েলসের বিচারক পল ব্রেরেটন চার বছর ধরে এই তদন্ত পরিচালনা করেন। ২০০৩ ও ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে প্রতিরক্ষা মহাপরিদর্শক তাকে নিয়োগ দেন।

তদন্তের জন্য ২০ হাজার নথি ও ২৫ হাজার ছবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আর শপথের ভিত্তিতে ৪২৩ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

সফল বিচার করা না গেলেও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসেবে ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ান সেনারা অবস্থান করছেন। দেশটিতে এখনও তাদের দেড় হাজার সেনা রয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন জানায়, তদন্তাধীন বছরগুলোতে যেসব অন্যায় ঘটেছে, এই প্রতিবেদন তা তুলে ধরতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৩৯ নিরস্ত্র আফগানকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে অস্ট্রেলিয়ান সেনারা

আপডেট টাইম : ০৩:১০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আফগানিস্তানে ৩৯ নিরস্ত্র কারাবন্দি ও বেসামরিক লোককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছে অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনী।

গত চার বছর ধরে তদন্তের পর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের জন্য ‘রক্ত’ ঝরাতে প্রতিরক্ষাহীন বন্দিদের হত্যা করতে সেনাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা।

অর্থাৎ ‘রক্তপাতে’ সেনাদের অভ্যস্ত করে তুলতে এভাবে তাদের দিয়ে কাউকে ‘প্রথম হত্যা’ করানো হতো। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সম্ভাব্য ফৌজদারি বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে সাবেক ও বর্তমান ১৯ সেনার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বিশেষ বাহিনীর আচরণ নিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার জেনারেল অ্যাঙ্গুস জন ক্যাম্পবেল বলেন, ২৩টি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় অস্ট্রেলীয় বিশেষ বাহিনীর সেনাদের হাতে ৩৯ জনকে বেআইনিভাবে হত্যার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আমাদের কাছে আছে।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের উত্তাপের’ বাইরে গিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। সামরিক আচরণ ও পেশাগত মূল্যবোধ গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে এসেছে তদন্তে।

বেসামরিক নাগরিক ও কারাবন্দিদের বেআইনিভাবে হত্যাকাণ্ড কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলেও জানান ক্যাম্পবেল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশকে আগেই ধরে আনা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে বন্দি, কৃষক, শিশু ও স্থানীয় আফগান নাগরিকরা রয়েছেন।

প্রতিবেদনের নির্দেশনা অনুসারে ক্যাম্পবেল বলেন, অস্ট্রেলীয় সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ১৯ সদস্যকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে কিনা; তা নিশ্চিত হতে তাদের বিশেষ তদন্তকারীদের হাতে সোপর্দ করা হবে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেইনল্ডস গত সপ্তাহে বলেন, হেগ শহরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে স্থানীয় বিচারকে অস্বীকার করতে পারে। ক্যানবেরাকে এমন পরামর্শই দেয়া হয়েছে।

এর আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদনে অস্ট্রেলীয়দের জন্য শক্ত ও কঠিন সংবাদ নিয়ে আসতে পারে।

যখন এই প্রতিবেদন গুরুতর সংশোধন করা হয়, তখন এই অভিযোগও যুক্ত করা হয় যে, নিরস্ত্র আফগানদের হত্যায় বিশেষ বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তদন্তে বলা হয়, একজন বন্দিকে হত্যা সিনিয়র টহল কমান্ডারদের অনুমতি নিতে হবে সেনাদের।

‘যখন কোনো একজন নিরস্ত্র আফগান হত্যার শিকার হতেন, তখন হত্যায় দায়ীরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা দিতে বিদেশি অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি দিয়ে একটা কৃত্রিম লড়াইয়ের দৃশ্যপট সাজিয়ে ফেলতেন।’

এসব ঘটনা আর কখনই প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হতো না। গোপনীয়তার সংস্কৃতি ও বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভাজনের কারণে টহল দলের মধ্যে সেই তথ্য সীমাবদ্ধ থেকে যেত।

আর গোপনীয়তার এই পর্দার কারণে অভিযোগ আলোর মুখ দেখতে অনেক দীর্ঘ সময় নেয়।

এর আগে এসব ঘটনার গোপন নথি অস্ট্রেলীয় সম্প্রচার কর্পোরেশনকে দেয়ায় সাবেক সামরিক আইনজীবী ডেভিড ম্যাকব্রিডের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি স্বীকার করে বলেন, জাতীয় স্বার্থেই তিনি এ কাগজ সরবরাহ করেছেন।

নিউ সাউথ ওয়েলসের বিচারক পল ব্রেরেটন চার বছর ধরে এই তদন্ত পরিচালনা করেন। ২০০৩ ও ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে প্রতিরক্ষা মহাপরিদর্শক তাকে নিয়োগ দেন।

তদন্তের জন্য ২০ হাজার নথি ও ২৫ হাজার ছবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আর শপথের ভিত্তিতে ৪২৩ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

সফল বিচার করা না গেলেও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসেবে ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ান সেনারা অবস্থান করছেন। দেশটিতে এখনও তাদের দেড় হাজার সেনা রয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন জানায়, তদন্তাধীন বছরগুলোতে যেসব অন্যায় ঘটেছে, এই প্রতিবেদন তা তুলে ধরতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছে।