ভারত একটি নোংরা দেশ: ডোনাল্ড ট্রাম্প

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় গতকাল সকাল ৮টা) টেনেসি অঙ্গরাজ্যের নাশভিলের বেলমন্ট ইউনিভার্সিটিতে চ‚ড়ান্ত বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। শুরুতেই করোনাভাইরাস নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন দুই প্রার্থী। পাশাপাশি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে ভারতের দায়বদ্ধতা নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন তিনি।

বিতর্কে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসা প্রসঙ্গে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘চীনের অবস্থা দেখুন। কী রকম নোংরা একটি দেশ। রাশিয়া বা ভারতকে দেখুন। কী নোংরা, দূষিত বাতাস।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের বাতাসেই নোংরা রয়েছে।’ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক বসিয়ে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্যের পরিপন্থী আচরণেরও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে বাইডেনের সঙ্গে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে ট্রাম্প প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভারতে করোনায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও। আমেরিকায় কোভিডে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীর প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি যখন সংখ্যা নিয়ে কথা বলছেন তা হলে বলি, আপনি জানেনই না চীনে কত মানুষ মারা গিয়েছেন। আপনি জানেন না, ভারতে কত জন মারা গিয়েছেন। তারা কেউই সঠিক তথ্য দেয় না।’ আমেরিকা প্রতিযোগিতা মূলক আবহে বিশ্বাস করে জানিয়ে ট্রাম্পের দাবি, ‘আমি প্যারিস চুক্তি রক্ষা করতে গিয়ে লাখ লাখ চাকরি, হাজার হাজার সংস্থাকে ছাড়তে পারব না।’ তার অভিযোগ, ভারত ও চীনের কলকারখানাগুলি দূষণ ছড়ালেও সেগুলি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক তৎপরতা নেই। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে আমেরিকাকে চাপে ফেলার চেষ্টা চলছে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য ঘিরে মোদির সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের টুইট, ‘ট্রাম্প: বন্ধুত্বের ফল।

ঘটনাচক্রে, গত ফেব্রæয়ারি মাসে দু’দিনের ভারত সফরে এসে সেখানে পুনর্নির্মিত মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম (সর্দার পটেল স্টেডিয়াম) উদ্বোধনে গিয়েছিলেন ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতে মোদি দাবি করেছিলেন, তিনি এবং ট্রাম্প মিলে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন। তবে কেন হঠাৎ অবস্থান বদলালেন রিপাবলিকান নেতা? রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এ বার ২০ লাখ অনাবাসী ভারতীয় ভোটের বড় অংশই যে ডেমোক্র্যাটরা পেতে চলেছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। বাইডেন তার ‘রানিং মেট’ হিসেবে ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত কমলা হ্যারিসকে বেছে এ বিষয়ে টেক্কা দিয়েছেন ট্রাম্পকে। ফলে কট্টরপন্থী শ্বেতাঙ্গ ভোটের লক্ষ্যেই ট্রাম্পের এই ভোলবদল। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্যের সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য মোদির কাছে আহŸান জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক তেহসিন পুনেওয়ালা। তার টুইট, ‘মনে করুন কী ভাবে আমাদের প্রয়াত লৌহমানবী ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকা সফরে গিয়ে (বাংলাদেশ যুদ্ধপর্বে) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং পররাষ্ট্রসচিব হেনরি কিসিঞ্জারকে তাদের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।’
বিতর্কে জো বাইডেন বলেছেন, দেশের দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর দায়িত্ব যিনি নিতে পারেন না তার দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকার কোনো অধিকার নেই। মহামারি মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি আবার লকডাউনের পক্ষে নন। লকডাউন নয় ভাইরাসকে বন্ধ করতে হবে। করোনাভাইরাসকে নিয়েই মার্কিনরা বাঁচতে শিখেছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তবে, বিতর্কমঞ্চের শুরুতে দুই প্রার্থীর কেউ কাউকে বাধা দেননি। বিতর্ক ভালোভাবে পরিচালনার জন্য সঞ্চালক ক্রিস্টেন ওয়েকারের প্রশংসাও করেন ট্রাম্প। বিভিন্ন ইস্যুতে দুই প্রার্থীর মধ্যে বিতর্ক চলে। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেছেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা যে দেশই করবে তাদের মূল্য দিতে হবে। এটা আমেরিকার সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।’ জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে জো বাইডেন সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, রাশিয়াসহ অন্য সব দেশের ওপর তিনি যথেষ্ট কঠোর। চীনে ট্রাম্পের ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাইডেন। ট্রাম্পের কর পরিশোধ না করার সমালোচনা করেন বাইডেন। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি লাখ লাখ ডলার কর আগেই পরিশোধ করেছেন। আগের অবস্থানে অনড় থেকে ট্রাম্প বলেন, তিনি আইআরএস অডিট করার পর ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করবেন। তবে তা কবে করবেন তা জানাননি। ইউক্রেনে বাইডেনের ছেলের ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ ছুড়ে দেন ট্রাম্প। বাইডেন বলেন, এ বিতর্ক ট্রাম্প বা তার পরিবারের নয়। এ বিতর্ক আমেরিকার জনগণের স্বার্থ নিয়ে। ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে তার সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। এ নিয়ে সমালোচনা করেন বাইডেন। জো বাইডেন ওবামা কেয়ারকে শক্তিশালী করে ওষুধের মূল্য কমানো ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করার পরিকল্পনার কথা বলেন। ট্রাম্প জানান, তিনি আইন করে ওবামা কেয়ারের বিতর্কিত বিষয় বাতিল করতে পেরেছেন। ওবামা কেয়ার বাতিল করে আরেকটি ভালো স্বাস্থ্যসেবা আইন চালু করার পরিকল্পনার কথা জানান ট্রাম্প। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, টাইমস নাউ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর