ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ইস্যু: উস্কানিতেও ধৈর্য দেখানোর ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০২০
  • ২১৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চীনের একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপ আছে। এটাকে বলা হয় বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বি.আর.আই। অনেকটা ঐতিহাসিক সিল্ক রোডের আদলে তৈরি। এ প্রকল্পকে ধরা হয় শি জিনপিংয়ের সবচে উচ্চবিলাসী স্বপ্ন হিসেবে। চীনকে শক্তিশালীকরণ, অর্থনীতিকে তাগড়া করা এবং বিশ্বের অন্য দেশের ওপর রাজনৈতিক ছড়ি ঘুরানোর উদ্দেশ্য সফল হবে এ প্রকল্প দিয়ে।

লাভবান হবে প্রকল্পে অংশ নেয়া বিশ্বের অন্য দেশগুলোও। বিআরআই চীনকে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্তবাণিজ্যের নতুন নেতা হতে সাহায্য করবে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টিপিপি থেকে সরিয়ে আনতেও এটি সহায়ক হবে। অর্থাৎ এ রোডম্যাপের মধ্য দিয়ে আগামী বিশ্বের নেতা হতে চায় চীন।নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের এমন আরেকটি রোডম্যাপের পরিকল্পনা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। শুরুতে ধীরে চললেও, তাদের ওষুধেই বৈশ্বিক এ ঘাঁ সারুক, এমন একটা প্রেসক্রিপশন চীন সাজিয়ে রেখেছে। এ ইস্যুতে বিশ্বের অন্য কোন দেশকে মুরব্বির ভূমিকায় রাখতে চায় না তারা।

তাই মিত্র দুই দেশ মিয়ানমার ও বাংলাদেশ-কাউকে না খেপিয়ে সমস্যা সমাধানে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে চীন, সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে এমন ইঙ্গিতই পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, আগে মিয়ানমারের প্রতি কোন রকম পক্ষপাত থাকলেও সেখান থেকে সরে আসছে চীন।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে আজ?
সবশেষ খবর হলো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোন করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার আগে অবশ্য মিয়ানমারের কাছ থেকে আরেক দফা নিয়েছেন প্রতিশ্রুতি। সে খবর জানাতে ঢাকায় করা তার ফোনালাপ থেকে জানা গেছে, নভেম্বরে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন শেষে দুই দফা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে চীন।

প্রথম বৈঠকটি হবে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে। পরের বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে। সবচে বড় কথা, শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত নেয়া হবে, মিয়ানমারের বরাত দিয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে চীন।

এ ঘটনার ঠিক দিন দশেক আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে দেখা করেছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরু না হওয়ায় সেখানেও উদ্বেগ জানান রাষ্ট্রদূত।রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির ভিত্তিহীন মিথ্যাচারে সমালোচনার ঝড়! | ইউনিভার্সাল  ২৪ নিউজ
রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মিয়ানমারের পরেই সমালোচিত দেশ চীন। মানুষের ধারণা, চীনের আস্কারাতেই মিয়ানমার এত কিছু করে পার পেয়ে যাচ্ছে।  তার প্রমাণও দেখেছে বিশ্ববাসী। যতবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, প্রতিবারই বাগড়া দিয়েছে চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের সক্রিয় বিরোধিতার কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি সূচির দেশের বিরুদ্ধে।

সেই চীন কি এমন জাদুমন্ত্রে এখন প্রত্যাবাসনের পক্ষে সক্রিয় হয়ে কাজ করছে? এমন প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের কাছে।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : 'শঙ্কা' নিয়েই প্রস্তুত বাংলাদেশ
দীর্ঘদিন চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মুন্সী ফয়েজ আহমদ মনে করেন, প্রত্যাবাসন চীনের কোন নতুন চাওয়া নয়। চীন শুরু থেকেই চেয়েছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হোক। তবে তারা যেটি আগেও চায়নি, এখনও চায় না- সেটি হলো এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার কোনো রকম বিপদে পড়ুক। দ্বিপাক্ষিকভাবে, প্রয়োজনে তারাসহ ত্রিপাক্ষিকভাবে সমস্যার সমাধান হবে, এটাই ছিলো চীনের চাওয়া। এখনো সে পথেই হাঁটছে তারা।জাতিসংঘ: রাখাইনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত হচ্ছে না | Dhaka Tribune  Bangla
মিয়ানমারকে বিপদে ফেলতে না চাওয়ার পেছনে চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সরাসরি জড়িত। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি নাইপিদোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ কয়েক শ কোটি ডলারের ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রবল চাপে থাকা মিয়ানমারের সঙ্গে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করেছে চীন।

প্রস্তাবিত চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে চীন সংযুক্ত হচ্ছে। এর ফলে মালাক্কা প্রণালী দিয়ে সাগরপথে চীনের বাণিজ্য রুটের বাইরেও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছার পথ পাচ্ছে চীন। এটি তার জ্বালানি পরিবহন ও বাণিজ্যকে অনেক সাশ্রয়ী ও সুসংহত করবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউয়ে চীনের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে সিতুয়ে ভারত নির্মিত বন্দরের গুরুত্ব কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ দেশেও চীনের স্বার্থ কম নয়। বাংলাদেশে চীনের বর্তমান বিনিয়োগ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। ২০১৬ সালে শি জিনপিং ঢাকা সফর করার সময় রেকর্ড ২ হাজার কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সখ্যতা, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি অবস্থান—এসব কিছু বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে চীনকে।রোহিঙ্গা আগমনের ৩ বছর
তাহলে কার পক্ষ নেবে চীন? মিয়ানমার নাকী বাংলাদেশ! প্রশ্নটি তোলায় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশেরই বন্ধু চীন। ফলে দেশটি চায় রোহিঙ্গাদের মতো একটি স্পর্শকাতর ইস্যুর সমাধানে দুই দেশই লাভবান হোক। এক্ষেত্রে কোনো দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না চীন। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চীন নিজস্ব রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে”।

রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের পক্ষ নেয়ায় চীনের প্রতি সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশে এমন কথা চালু আছে, চীন যা বলে মিয়ানমার সেই অনুযায়ী কাজ করে। এ থেকে ধারণা তৈরি হয়েছে, অর্থনৈতিক কারণে চীন বোধহয় সব সময় মিয়ানমারের পক্ষে থাকছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল”।রোহিঙ্গা সংকটে প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: ইউএনএইচসিআর
“মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। কী করতে হবে সেটা তাদের বলার অধিকার চীনের নেই। আমরা কোনো দেশকে এমন কোনো কাজ করতে বাধ্য করি না, যেটা তারা করতে চায় না।”

তবে চীন যে তার অবস্থান থেকে সরছে সেটা বুঝা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করেছে তারা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে নাইপিদোতে বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তিও হয়েছে চীনের তত্ত্বাবধানে। এর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশ সফর করেই কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।রোহিঙ্গা সংকটের প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: ইউএনএইচসিআর – শেয়ার বিজ
চলতি মাসে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বেগান ঢাকা সফরকালেই চীন ও ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলো দিয়েই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ অবস্থায় কূটনীতিকরা মনে করছেন, চীনের এ ইতিবাচক অবস্থা কাজে লাগাতে হবে বাংলাদেশকে। রোহিঙ্গা সমস্যা এর মধ্যেই গলার কাটা হয়ে উঠেছে, তাই এ বোঝা দীর্ঘদিন আর বয়ে চলা সম্ভব নয়, এমন ইঙ্গিত এর মধ্যেই সেগুনবাগিছা থেকে স্পষ্ট করা হচ্ছে।  তাই দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে, সেটাকে চীনকে সাথে নিয়েই।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই সন্ত্রাসী কারা
পররাষ্ট্র বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চমৎকার প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে, সীমান্তে বারবার সেনা মোতায়েন, বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ড্রোন প্রবেশ করানোসহ নানা ঘটনায় ধৈর্য দেখিয়েছে ঢাকা। কোন রকম উস্কানিতে বাংলাদেশ পা না দেয়ায় এখন সেটার সুফল আসতে শুরু করেছে। চীনকে আস্থায় নিয়ে বাংলাদেশ যতটা এগুতে পারে, ততটাই লাভ হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোহিঙ্গা ইস্যু: উস্কানিতেও ধৈর্য দেখানোর ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চীনের একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপ আছে। এটাকে বলা হয় বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বি.আর.আই। অনেকটা ঐতিহাসিক সিল্ক রোডের আদলে তৈরি। এ প্রকল্পকে ধরা হয় শি জিনপিংয়ের সবচে উচ্চবিলাসী স্বপ্ন হিসেবে। চীনকে শক্তিশালীকরণ, অর্থনীতিকে তাগড়া করা এবং বিশ্বের অন্য দেশের ওপর রাজনৈতিক ছড়ি ঘুরানোর উদ্দেশ্য সফল হবে এ প্রকল্প দিয়ে।

লাভবান হবে প্রকল্পে অংশ নেয়া বিশ্বের অন্য দেশগুলোও। বিআরআই চীনকে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্তবাণিজ্যের নতুন নেতা হতে সাহায্য করবে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টিপিপি থেকে সরিয়ে আনতেও এটি সহায়ক হবে। অর্থাৎ এ রোডম্যাপের মধ্য দিয়ে আগামী বিশ্বের নেতা হতে চায় চীন।নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের এমন আরেকটি রোডম্যাপের পরিকল্পনা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। শুরুতে ধীরে চললেও, তাদের ওষুধেই বৈশ্বিক এ ঘাঁ সারুক, এমন একটা প্রেসক্রিপশন চীন সাজিয়ে রেখেছে। এ ইস্যুতে বিশ্বের অন্য কোন দেশকে মুরব্বির ভূমিকায় রাখতে চায় না তারা।

তাই মিত্র দুই দেশ মিয়ানমার ও বাংলাদেশ-কাউকে না খেপিয়ে সমস্যা সমাধানে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে চীন, সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে এমন ইঙ্গিতই পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, আগে মিয়ানমারের প্রতি কোন রকম পক্ষপাত থাকলেও সেখান থেকে সরে আসছে চীন।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে আজ?
সবশেষ খবর হলো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোন করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার আগে অবশ্য মিয়ানমারের কাছ থেকে আরেক দফা নিয়েছেন প্রতিশ্রুতি। সে খবর জানাতে ঢাকায় করা তার ফোনালাপ থেকে জানা গেছে, নভেম্বরে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন শেষে দুই দফা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে চীন।

প্রথম বৈঠকটি হবে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে। পরের বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে। সবচে বড় কথা, শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত নেয়া হবে, মিয়ানমারের বরাত দিয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে চীন।

এ ঘটনার ঠিক দিন দশেক আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে দেখা করেছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরু না হওয়ায় সেখানেও উদ্বেগ জানান রাষ্ট্রদূত।রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির ভিত্তিহীন মিথ্যাচারে সমালোচনার ঝড়! | ইউনিভার্সাল  ২৪ নিউজ
রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মিয়ানমারের পরেই সমালোচিত দেশ চীন। মানুষের ধারণা, চীনের আস্কারাতেই মিয়ানমার এত কিছু করে পার পেয়ে যাচ্ছে।  তার প্রমাণও দেখেছে বিশ্ববাসী। যতবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, প্রতিবারই বাগড়া দিয়েছে চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের সক্রিয় বিরোধিতার কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি সূচির দেশের বিরুদ্ধে।

সেই চীন কি এমন জাদুমন্ত্রে এখন প্রত্যাবাসনের পক্ষে সক্রিয় হয়ে কাজ করছে? এমন প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের কাছে।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : 'শঙ্কা' নিয়েই প্রস্তুত বাংলাদেশ
দীর্ঘদিন চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মুন্সী ফয়েজ আহমদ মনে করেন, প্রত্যাবাসন চীনের কোন নতুন চাওয়া নয়। চীন শুরু থেকেই চেয়েছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হোক। তবে তারা যেটি আগেও চায়নি, এখনও চায় না- সেটি হলো এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার কোনো রকম বিপদে পড়ুক। দ্বিপাক্ষিকভাবে, প্রয়োজনে তারাসহ ত্রিপাক্ষিকভাবে সমস্যার সমাধান হবে, এটাই ছিলো চীনের চাওয়া। এখনো সে পথেই হাঁটছে তারা।জাতিসংঘ: রাখাইনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত হচ্ছে না | Dhaka Tribune  Bangla
মিয়ানমারকে বিপদে ফেলতে না চাওয়ার পেছনে চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সরাসরি জড়িত। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি নাইপিদোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ কয়েক শ কোটি ডলারের ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রবল চাপে থাকা মিয়ানমারের সঙ্গে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করেছে চীন।

প্রস্তাবিত চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে চীন সংযুক্ত হচ্ছে। এর ফলে মালাক্কা প্রণালী দিয়ে সাগরপথে চীনের বাণিজ্য রুটের বাইরেও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছার পথ পাচ্ছে চীন। এটি তার জ্বালানি পরিবহন ও বাণিজ্যকে অনেক সাশ্রয়ী ও সুসংহত করবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউয়ে চীনের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে সিতুয়ে ভারত নির্মিত বন্দরের গুরুত্ব কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ দেশেও চীনের স্বার্থ কম নয়। বাংলাদেশে চীনের বর্তমান বিনিয়োগ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। ২০১৬ সালে শি জিনপিং ঢাকা সফর করার সময় রেকর্ড ২ হাজার কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সখ্যতা, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি অবস্থান—এসব কিছু বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে চীনকে।রোহিঙ্গা আগমনের ৩ বছর
তাহলে কার পক্ষ নেবে চীন? মিয়ানমার নাকী বাংলাদেশ! প্রশ্নটি তোলায় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশেরই বন্ধু চীন। ফলে দেশটি চায় রোহিঙ্গাদের মতো একটি স্পর্শকাতর ইস্যুর সমাধানে দুই দেশই লাভবান হোক। এক্ষেত্রে কোনো দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না চীন। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চীন নিজস্ব রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে”।

রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের পক্ষ নেয়ায় চীনের প্রতি সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশে এমন কথা চালু আছে, চীন যা বলে মিয়ানমার সেই অনুযায়ী কাজ করে। এ থেকে ধারণা তৈরি হয়েছে, অর্থনৈতিক কারণে চীন বোধহয় সব সময় মিয়ানমারের পক্ষে থাকছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল”।রোহিঙ্গা সংকটে প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: ইউএনএইচসিআর
“মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। কী করতে হবে সেটা তাদের বলার অধিকার চীনের নেই। আমরা কোনো দেশকে এমন কোনো কাজ করতে বাধ্য করি না, যেটা তারা করতে চায় না।”

তবে চীন যে তার অবস্থান থেকে সরছে সেটা বুঝা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করেছে তারা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে নাইপিদোতে বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তিও হয়েছে চীনের তত্ত্বাবধানে। এর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশ সফর করেই কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।রোহিঙ্গা সংকটের প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: ইউএনএইচসিআর – শেয়ার বিজ
চলতি মাসে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বেগান ঢাকা সফরকালেই চীন ও ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলো দিয়েই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ অবস্থায় কূটনীতিকরা মনে করছেন, চীনের এ ইতিবাচক অবস্থা কাজে লাগাতে হবে বাংলাদেশকে। রোহিঙ্গা সমস্যা এর মধ্যেই গলার কাটা হয়ে উঠেছে, তাই এ বোঝা দীর্ঘদিন আর বয়ে চলা সম্ভব নয়, এমন ইঙ্গিত এর মধ্যেই সেগুনবাগিছা থেকে স্পষ্ট করা হচ্ছে।  তাই দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে, সেটাকে চীনকে সাথে নিয়েই।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই সন্ত্রাসী কারা
পররাষ্ট্র বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চমৎকার প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে, সীমান্তে বারবার সেনা মোতায়েন, বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ড্রোন প্রবেশ করানোসহ নানা ঘটনায় ধৈর্য দেখিয়েছে ঢাকা। কোন রকম উস্কানিতে বাংলাদেশ পা না দেয়ায় এখন সেটার সুফল আসতে শুরু করেছে। চীনকে আস্থায় নিয়ে বাংলাদেশ যতটা এগুতে পারে, ততটাই লাভ হবে।