ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচটি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ পানিতেই কাটছে দিনরাত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০১:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ১৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষার শুরুতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন ময়মনসিংহ সদর ও তারাকান্দা উপজেলার পাঁচটি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গত তিন মাস ধরে পানিতেই কাটছে তাদের দিনরাত। আর দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকার কারণে শিশুরা ভুগছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে।

এমনই অবস্থা সদর উপজেলার ৬ নম্বর চর ঈশ্বরদিয়া ইউপির বাজিতপুর, বড়বিলা ও আলালপুর, ৭ নম্বর চর নিলক্ষীয়া ইউপি রশিদপুর ও তারাকান্দা উপজেলার পুটামারা গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে রান্নার চুলা ও টয়লেটও পানির নিচে। এমন অবস্থায় চিড়ামুড়ি খেয়ে দিনপার করছেন তারা। যাদের সামর্থ আছে তারা পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছেন। যাদের সামর্থ নেই, তারা খেয়ে না খেয়েই দিনপার করছেন। কেউ কেউ আবার গরু-ছাগল নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালীরা সরকারি খাল-বিল দখল করে গড়ে তুলেছেন মাছের ফিসারি। যে কারণে পানি নামতে না পারার কারণে বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রশিদপুরের বাউশী বিল প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ প্রায় আড়াই কিলোমিটার যার পুরোটাই প্রভাবশলীরা দখল করে ফিসারি গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়াও কাটাখালী খালও প্রায় প্রভাবশালীদের দখলে। ফিসারির কারণে কাটাখালী খালের উত্তর পূর্ব মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে পানি নামতে পারে না।

স্থানীয়দের দাবি, কাটাখালীখাল ও বাউশীবিল দখলমুক্ত করলে তাদের কষ্ট লাগব হবে। গৃহিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের আত্মীয় বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। স্বামীকে নিয়ে দিনে একবেলা খেয়ে দিনপার করছি। রান্না ঘরের চুলাতেও পানি। পানি উঠেছে টয়লেটে। এ অবস্থায় আর পেরে উঠছি না। সরকার যদি আমাদের না দেখে, তাহলে আমাদের পানিবন্দি হয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

স্থানীয় নাঈব আলী বলেন, চারপাশে মাছের ফিসারি থাকার কারণে পানি নামতে পারে না। যার কারণেই আমাদের এত ভোগান্তি।

ওয়াহেদ আলী নামে এক যুবক বলেন, পানিবন্দি অবস্থায় আমরা সবচাইতে বেশি বিপদে আছি শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে। কেউ যদি গুরুতর অসুস্থ হলে আমরা তাদের কাঁধে করে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। এছাড়া হাস, মুরগি, গরু, ছাগলের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ফিসারি মালিক বাবুল মিয়া বলেন, ফিসারির কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এ কথাটা ঠিক না। কাটাখালী খাল যদি খনন করা হয়। তাহলে গ্রামবাসীর এ কষ্ট থাকবে না। তিনি কাটাখালী খাল খনন করার দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

রশিদপুর গ্রামের মাদরাসাশিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে আমরা পানিবন্দি জীবনযাপন করছি। আমাদের রাত কাটে সাপের আতঙ্কে, দিন কাটে শিশু সন্তান পানিতে পড়ার ভয়ে। এরইমধ্যেই তিন বছর বয়সী সন্তান পানিতে পড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকার কারণে গ্রামের শিশুরা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছে। গ্রাম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ পানি পানিবন্দি অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

এ বিষয়ে ৭ নম্বর চর নিলক্ষীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম রতন বলেন, গ্রামবাসীর দুর্ভোগের খবর পেয়ে এরইমধ্যে সদরের ইউএনও সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সদরের ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব খালগুলো উদ্ধার বা খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারি খাল-বিল (খাসজমি) দখল করে ফিসারি তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যে বা যারাই খাল-বিল দখল করে ফিসারি তৈরি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে নোটিশ দিয়ে খাস জমি উদ্ধার করা হবে। কেউ যদি আপসে খাস জমি ছেড়ে না যায়। তাহলে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচটি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ পানিতেই কাটছে দিনরাত

আপডেট টাইম : ০৩:০১:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষার শুরুতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন ময়মনসিংহ সদর ও তারাকান্দা উপজেলার পাঁচটি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গত তিন মাস ধরে পানিতেই কাটছে তাদের দিনরাত। আর দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকার কারণে শিশুরা ভুগছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে।

এমনই অবস্থা সদর উপজেলার ৬ নম্বর চর ঈশ্বরদিয়া ইউপির বাজিতপুর, বড়বিলা ও আলালপুর, ৭ নম্বর চর নিলক্ষীয়া ইউপি রশিদপুর ও তারাকান্দা উপজেলার পুটামারা গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে রান্নার চুলা ও টয়লেটও পানির নিচে। এমন অবস্থায় চিড়ামুড়ি খেয়ে দিনপার করছেন তারা। যাদের সামর্থ আছে তারা পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছেন। যাদের সামর্থ নেই, তারা খেয়ে না খেয়েই দিনপার করছেন। কেউ কেউ আবার গরু-ছাগল নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালীরা সরকারি খাল-বিল দখল করে গড়ে তুলেছেন মাছের ফিসারি। যে কারণে পানি নামতে না পারার কারণে বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রশিদপুরের বাউশী বিল প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ প্রায় আড়াই কিলোমিটার যার পুরোটাই প্রভাবশলীরা দখল করে ফিসারি গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়াও কাটাখালী খালও প্রায় প্রভাবশালীদের দখলে। ফিসারির কারণে কাটাখালী খালের উত্তর পূর্ব মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে পানি নামতে পারে না।

স্থানীয়দের দাবি, কাটাখালীখাল ও বাউশীবিল দখলমুক্ত করলে তাদের কষ্ট লাগব হবে। গৃহিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের আত্মীয় বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। স্বামীকে নিয়ে দিনে একবেলা খেয়ে দিনপার করছি। রান্না ঘরের চুলাতেও পানি। পানি উঠেছে টয়লেটে। এ অবস্থায় আর পেরে উঠছি না। সরকার যদি আমাদের না দেখে, তাহলে আমাদের পানিবন্দি হয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

স্থানীয় নাঈব আলী বলেন, চারপাশে মাছের ফিসারি থাকার কারণে পানি নামতে পারে না। যার কারণেই আমাদের এত ভোগান্তি।

ওয়াহেদ আলী নামে এক যুবক বলেন, পানিবন্দি অবস্থায় আমরা সবচাইতে বেশি বিপদে আছি শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে। কেউ যদি গুরুতর অসুস্থ হলে আমরা তাদের কাঁধে করে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। এছাড়া হাস, মুরগি, গরু, ছাগলের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ফিসারি মালিক বাবুল মিয়া বলেন, ফিসারির কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এ কথাটা ঠিক না। কাটাখালী খাল যদি খনন করা হয়। তাহলে গ্রামবাসীর এ কষ্ট থাকবে না। তিনি কাটাখালী খাল খনন করার দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

রশিদপুর গ্রামের মাদরাসাশিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে আমরা পানিবন্দি জীবনযাপন করছি। আমাদের রাত কাটে সাপের আতঙ্কে, দিন কাটে শিশু সন্তান পানিতে পড়ার ভয়ে। এরইমধ্যেই তিন বছর বয়সী সন্তান পানিতে পড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকার কারণে গ্রামের শিশুরা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছে। গ্রাম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ পানি পানিবন্দি অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

এ বিষয়ে ৭ নম্বর চর নিলক্ষীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম রতন বলেন, গ্রামবাসীর দুর্ভোগের খবর পেয়ে এরইমধ্যে সদরের ইউএনও সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সদরের ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব খালগুলো উদ্ধার বা খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারি খাল-বিল (খাসজমি) দখল করে ফিসারি তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যে বা যারাই খাল-বিল দখল করে ফিসারি তৈরি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে নোটিশ দিয়ে খাস জমি উদ্ধার করা হবে। কেউ যদি আপসে খাস জমি ছেড়ে না যায়। তাহলে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।