ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৬ জেলায় বন্যার থাবা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০২:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
  • ২০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদনদীর পানি। বাঁধ ভেঙে প্রতিদিনই ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। ইতিমধ্যে দেশের ২৬ জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বন্যার্তরা। বন্যা আক্রান্ত
জেলাগুলো হলো- সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা,  কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, লক্ষ্মীপুর। শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলার দশ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ৭টি উপজেলার ৬৭৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে: কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে বুড়িরহাট ও গাবুর হেলান স্পার ভাঙন রোধে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল সকালে ভাঙন কবলিত গাবুর হেলান স্পারে ঘণ্টাখানিক মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষদের রক্ষার জন্য এই এলাকায় নদী খনন ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এ এলাকাবাসী জানান, ১৯৯৮ সালে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ স্পারটি তিস্তার ভাঙন রোধে নির্মাণ করা হয়। গত ৮ দিন ধরে এখানে ভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও তারা গাফিলতি করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বালু সংগ্রহ করে বস্তায় ভরালেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন দুর্ভোগ কবলিত এলাকায় এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন না। তারা বস্তাগুলো শেলাই করে স্পারের মাথায় ফেলার ব্যবস্থা করছে না। ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজের দাবিতে মানববন্ধন আয়োজন করে এলাকাবাসী।
৩য় দফা বন্যার ফাঁদে চিলমারী
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি না নামতেই তৃতীয় দফার বন্যার ফাঁদে চিলমারী। প্রায় ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। পানি কমতে শুরু না করতেই আবারো পানি বৃদ্ধি জনজীবনে বিপর্যয় এনে দিয়েছে। বন্যা থেকে রক্ষার স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা না থাকার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের গাফলতির কারণে সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে ডুবে আছে পানির নিচে। দিনে পর দিন বাড়িঘর ছেড়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় নেয়া বানভাসিদের যেন কষ্টের সীমা নেই। জানা গেছে, জুন মসের শেষের দিকে প্রথম দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয় চিলমারী। সেই পানি নেমে যেতে না যেতে আবারো বৃদ্ধি পায় ব্রহ্মপুত্রের পানি। প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় উপজেলা সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম। নিম্নাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী মানুষ প্রায় ৩ সপ্তাহের অধিক সময় এবং সদরের মানুষ প্রায় ২ সপ্তাহ থেকে পানিবন্দি। বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মানুষজন ছোটে আশ্রয়ের সন্ধানে আবারো কমতে শুরু করে পানি কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ বন্যার কবলে পড়ে উপজেলা সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম। বাড়িঘর ছাড়া মানুষজন ঘরে ফেরার আগেই আবারো বাড়তে শুরু করে ব্রহ্মপুত্রের পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে তৃতীয় দফা বন্যার ফাঁদে পড়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী।
মাদারগঞ্জে বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত
মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের নাদাগাড়ী গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পানির চাপে ভেঙে গেছে বাঁধটি। শুক্রবার সকালের দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। এর ফলে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ করে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন শত শত মানুষ। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৮টি পরিবারের কাঁচা-পাকা ৫০টি ঘর পানির তোড়ে ভেসে যায়। অপরদিকে দেখা দিয়েছে ব্যাপকহারে ভাঙন। ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও তাদের থাকার বসতভিটার শেষটা রক্ষা করতে পারছেন না। তবে যমুনার পানি গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পানিমাপক আব্দুল মান্নান।
স্থানীয়রা জানান, তৃতীয় দফা বন্যায় যমুনা নদীর পানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে বিকট শব্দে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার ধসে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই প্রবল পানির স্রোতে ঐ এলাকার ৫০টিরও বেশি কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায় রাক্ষুসী যমুনা। এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না অসহায় মানুষদের। আশপাশের শ্রায় ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম আবারো নতুন করে প্লাবিত হয়। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় বিশ হাজার মানুষ।
ফকির আলী বলেন, শুক্রবার ভোরবেলা ঘুম থেকেই একটা বিকট শব্দ পাই। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই পানি ঢুকে বাড়ি-ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমরা কেউ ঘর থেকে একটি সুতাও বের করে নিতে পারি নাই। আমাদের কষ্টের কথা কি আর বলবো। পানিতেই জীবন-যাপন করতে হবে মনে হয়।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি খবর পেয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হককে সঙ্গে নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করি। স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। তবে তাদের এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করার ব্যবস্থা করা হবে।
শিবচরে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু নিয়ে রাস্তায় আশ্রয়
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: শিবচরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। চর এলাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় গবাদিপশু নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে অনেকেই। আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে কৃষক পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই গরু-ছাগল লালন-পালন করে থাকে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে গবাদিপশু লালন-পালন হয়। চলতি বছর বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এসব গরু-ছাগল নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তায় কোরবানির গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। রাতদিন সেখানেই থাকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের মালেরহাট, বেপারীকান্দি, কাজিরসূরা এলাকাসহ বন্যাকবলিত আশেপাশের এলাকার শতাধিক পরিবার তাদের গবাদিপশু নিয়ে মালেরহাট হাওলাদারকান্দি রাস্তাসহ আশেপাশের উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারে রয়েছে একাধিক গরু-ছাগল। যা চলতি বছর কোরবানিতে বিক্রির লক্ষ্যে পালন করা হচ্ছে।
বন্যার কারণে রাস্তায় আশ্রয় নেয়া একাধিক পরিবারের সদস্য জানান, ‘বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ঘরের ভেতরও পানি ওঠায় রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে এসব পরিবার। তবে প্রত্যেক পরিবারেই কোরবানির বিক্রিযোগ্য গরু থাকায় এসব গবাদিপশু নিয়ে রাস্তায় দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানিবৃদ্ধিতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও এ সকল এলাকার চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তাসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া তথ্যানুযায়ী উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০ জন, চরজানাজাতে ১৮৭০ জন, বন্দরখোলা ইউনিয়নে ২৭ শত, মাতবরেরচরে ৯শত এবং সন্যাসীরচরে ১৬শ সহ মোট পানিবন্দি রয়েছে ৮ হাজার ১২০ জন মানুষ। এদিকে পানিবন্দি এলাকায় চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী এমপির পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

নওগাঁয় দ্বিতীয় দফায় বন্যা
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় দ্বিতীয় দফায় বন্যায় আত্রাই, রানীনগর, মান্দা ও সাপাহার উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে নতুন করে প্লাবিত হযেছে। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোয় আবার নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষরা। সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. সোহরাব হোসেন জানান, সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার পর্ণভবা নদীর বাঁধ উপচে ওই উপজেলার কলমুডাঙ্গাসহ তিনটি গ্রাম তলিয়ে হেছে। এসব এলাকার ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় রাণীনগর উপজেলার শলিয়া, দেউলিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম ও রাস্তা-ঘাট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ করে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, পুর্নভবা নদী ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরো কয়েকদিন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

২৬ জেলায় বন্যার থাবা

আপডেট টাইম : ০৫:০২:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদনদীর পানি। বাঁধ ভেঙে প্রতিদিনই ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। ইতিমধ্যে দেশের ২৬ জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বন্যার্তরা। বন্যা আক্রান্ত
জেলাগুলো হলো- সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা,  কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, লক্ষ্মীপুর। শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলার দশ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ৭টি উপজেলার ৬৭৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে: কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে বুড়িরহাট ও গাবুর হেলান স্পার ভাঙন রোধে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল সকালে ভাঙন কবলিত গাবুর হেলান স্পারে ঘণ্টাখানিক মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষদের রক্ষার জন্য এই এলাকায় নদী খনন ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এ এলাকাবাসী জানান, ১৯৯৮ সালে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ স্পারটি তিস্তার ভাঙন রোধে নির্মাণ করা হয়। গত ৮ দিন ধরে এখানে ভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও তারা গাফিলতি করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বালু সংগ্রহ করে বস্তায় ভরালেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন দুর্ভোগ কবলিত এলাকায় এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন না। তারা বস্তাগুলো শেলাই করে স্পারের মাথায় ফেলার ব্যবস্থা করছে না। ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজের দাবিতে মানববন্ধন আয়োজন করে এলাকাবাসী।
৩য় দফা বন্যার ফাঁদে চিলমারী
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি না নামতেই তৃতীয় দফার বন্যার ফাঁদে চিলমারী। প্রায় ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। পানি কমতে শুরু না করতেই আবারো পানি বৃদ্ধি জনজীবনে বিপর্যয় এনে দিয়েছে। বন্যা থেকে রক্ষার স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা না থাকার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের গাফলতির কারণে সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে ডুবে আছে পানির নিচে। দিনে পর দিন বাড়িঘর ছেড়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় নেয়া বানভাসিদের যেন কষ্টের সীমা নেই। জানা গেছে, জুন মসের শেষের দিকে প্রথম দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয় চিলমারী। সেই পানি নেমে যেতে না যেতে আবারো বৃদ্ধি পায় ব্রহ্মপুত্রের পানি। প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় উপজেলা সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম। নিম্নাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী মানুষ প্রায় ৩ সপ্তাহের অধিক সময় এবং সদরের মানুষ প্রায় ২ সপ্তাহ থেকে পানিবন্দি। বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মানুষজন ছোটে আশ্রয়ের সন্ধানে আবারো কমতে শুরু করে পানি কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ বন্যার কবলে পড়ে উপজেলা সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম। বাড়িঘর ছাড়া মানুষজন ঘরে ফেরার আগেই আবারো বাড়তে শুরু করে ব্রহ্মপুত্রের পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে তৃতীয় দফা বন্যার ফাঁদে পড়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী।
মাদারগঞ্জে বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত
মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের নাদাগাড়ী গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পানির চাপে ভেঙে গেছে বাঁধটি। শুক্রবার সকালের দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। এর ফলে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ করে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন শত শত মানুষ। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৮টি পরিবারের কাঁচা-পাকা ৫০টি ঘর পানির তোড়ে ভেসে যায়। অপরদিকে দেখা দিয়েছে ব্যাপকহারে ভাঙন। ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও তাদের থাকার বসতভিটার শেষটা রক্ষা করতে পারছেন না। তবে যমুনার পানি গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পানিমাপক আব্দুল মান্নান।
স্থানীয়রা জানান, তৃতীয় দফা বন্যায় যমুনা নদীর পানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে বিকট শব্দে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার ধসে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই প্রবল পানির স্রোতে ঐ এলাকার ৫০টিরও বেশি কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায় রাক্ষুসী যমুনা। এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না অসহায় মানুষদের। আশপাশের শ্রায় ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম আবারো নতুন করে প্লাবিত হয়। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় বিশ হাজার মানুষ।
ফকির আলী বলেন, শুক্রবার ভোরবেলা ঘুম থেকেই একটা বিকট শব্দ পাই। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই পানি ঢুকে বাড়ি-ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমরা কেউ ঘর থেকে একটি সুতাও বের করে নিতে পারি নাই। আমাদের কষ্টের কথা কি আর বলবো। পানিতেই জীবন-যাপন করতে হবে মনে হয়।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি খবর পেয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হককে সঙ্গে নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করি। স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। তবে তাদের এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করার ব্যবস্থা করা হবে।
শিবচরে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু নিয়ে রাস্তায় আশ্রয়
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: শিবচরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। চর এলাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় গবাদিপশু নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে অনেকেই। আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে কৃষক পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই গরু-ছাগল লালন-পালন করে থাকে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে গবাদিপশু লালন-পালন হয়। চলতি বছর বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এসব গরু-ছাগল নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তায় কোরবানির গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। রাতদিন সেখানেই থাকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের মালেরহাট, বেপারীকান্দি, কাজিরসূরা এলাকাসহ বন্যাকবলিত আশেপাশের এলাকার শতাধিক পরিবার তাদের গবাদিপশু নিয়ে মালেরহাট হাওলাদারকান্দি রাস্তাসহ আশেপাশের উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারে রয়েছে একাধিক গরু-ছাগল। যা চলতি বছর কোরবানিতে বিক্রির লক্ষ্যে পালন করা হচ্ছে।
বন্যার কারণে রাস্তায় আশ্রয় নেয়া একাধিক পরিবারের সদস্য জানান, ‘বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ঘরের ভেতরও পানি ওঠায় রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে এসব পরিবার। তবে প্রত্যেক পরিবারেই কোরবানির বিক্রিযোগ্য গরু থাকায় এসব গবাদিপশু নিয়ে রাস্তায় দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানিবৃদ্ধিতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও এ সকল এলাকার চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তাসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া তথ্যানুযায়ী উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০ জন, চরজানাজাতে ১৮৭০ জন, বন্দরখোলা ইউনিয়নে ২৭ শত, মাতবরেরচরে ৯শত এবং সন্যাসীরচরে ১৬শ সহ মোট পানিবন্দি রয়েছে ৮ হাজার ১২০ জন মানুষ। এদিকে পানিবন্দি এলাকায় চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী এমপির পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

নওগাঁয় দ্বিতীয় দফায় বন্যা
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় দ্বিতীয় দফায় বন্যায় আত্রাই, রানীনগর, মান্দা ও সাপাহার উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে নতুন করে প্লাবিত হযেছে। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোয় আবার নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষরা। সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. সোহরাব হোসেন জানান, সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার পর্ণভবা নদীর বাঁধ উপচে ওই উপজেলার কলমুডাঙ্গাসহ তিনটি গ্রাম তলিয়ে হেছে। এসব এলাকার ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় রাণীনগর উপজেলার শলিয়া, দেউলিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম ও রাস্তা-ঘাট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ করে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, পুর্নভবা নদী ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরো কয়েকদিন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।