ঢাকা ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়তি দামে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
  • ২৪৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা বিশ্বে এখন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। ফলে এখন মানুষ অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি ওষুধ কিনছে। যেহেতু করোনার নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, তাই করোনাকালে মানুষ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি ও জিংকজাতীয় ওষুধ কিনছে সবচেয়ে বেশি।

এছাড়া বিক্রির তালিকায় রয়েছে জ্বর ও শরীর ব্যথার ওষুধও। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি দাম রাখছে ওষুধের। ওষুধ হচ্ছে অসুখ থেকে নিরাময় পাওয়ার প্রধান উপায়। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যদি নকল বা ভেজাল হয়, তাহলে ভালো হওয়ার পরিবর্তে মানুষের আরও ক্ষতি হবে। ইদানীং সারা দেশে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের খবর আমাদের মনে ভয় জাগিয়ে তুলছে।

এখন জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ ছড়িয়ে পড়েছে। আর এসব ওষুধ সরল বিশ্বাসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এখানে নাগরিকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে এটাও সত্য। কারণ বেশিরভাগ সময়ই ওষুধের মেয়াদ দেখা হয় না। কোথায় ওষুধের মেয়াদ লেখা থাকে, সাধারণ মানুষ তা জানেও না। বাস্তবতা হল, প্রায় সব মানুষই অল্পস্বল্প রোগে আক্রান্ত হলে সবার আগে যায় নিজ নিজ এলাকার ফার্মেসিতে। বিক্রেতার কাছে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিনে তা সেবন করে। আর এই সুযোগটাই নেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা সচেতনভাবে ওইসব রোগীকে দিয়ে দেয় ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। অবশ্য শুধু গ্রামে নয়, দেশের নগর-মহানগরসহ প্রায় সব জায়গায় এমনটি ঘটছে।

এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণ মানুষ খুব সহজেই ওষুধের ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রশিক্ষণ না নিয়েই গড়ে তুলছে ওষুধের দোকান। আবার কখনও কখনও ওষুধের দোকানদার নিজেই চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রতারণা করে মানুষের সঙ্গে।

তারা লাভের আশায় বিক্রি করে ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। বাজারে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হল, ওষুধ রিপ্রেজেন্টেটিভরা নামসর্বস্ব কোম্পানির ওষুধ বিক্রিতে বেশি মনোযোগী। এক্ষেত্রে তারা সেবার পরিবর্তে অর্থ উপার্জনকে প্রাধান্য দেয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হয়। রাজধানীর ফার্মেসিগুলোরই যখন এ অবস্থা, তখন অন্যান্য স্থানের ফার্মেসিগুলোতে কত ধরনের অনিয়ম হয়, তা সহজেই অনুমেয়।

দেশে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ)-এর ১(ঙ) ধারায় খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল মেশালে বা বিক্রি করলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে আইনে এমন শাস্তির বিধান থাকলেও আমরা কখনও শুনিনি খাদ্যে ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে কারও মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

এর প্রতিকার রয়েছে সরকারের হাতেই। প্রয়োজন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা। যারা বাড়তি দাম নিচ্ছে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ভেজাল ও নিুমানের ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তা না হলে নানা কৌশলে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির চেষ্টা সবসময় চালিয়ে যাবে।

আমাদের ওষুধ শিল্প উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। তবে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে ওষুধ শিল্পের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই প্রশাসনের উচিত অতি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।

সাহাদা: ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাড়তি দামে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

আপডেট টাইম : ১১:১৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা বিশ্বে এখন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। ফলে এখন মানুষ অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি ওষুধ কিনছে। যেহেতু করোনার নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, তাই করোনাকালে মানুষ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি ও জিংকজাতীয় ওষুধ কিনছে সবচেয়ে বেশি।

এছাড়া বিক্রির তালিকায় রয়েছে জ্বর ও শরীর ব্যথার ওষুধও। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি দাম রাখছে ওষুধের। ওষুধ হচ্ছে অসুখ থেকে নিরাময় পাওয়ার প্রধান উপায়। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যদি নকল বা ভেজাল হয়, তাহলে ভালো হওয়ার পরিবর্তে মানুষের আরও ক্ষতি হবে। ইদানীং সারা দেশে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের খবর আমাদের মনে ভয় জাগিয়ে তুলছে।

এখন জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ ছড়িয়ে পড়েছে। আর এসব ওষুধ সরল বিশ্বাসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এখানে নাগরিকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে এটাও সত্য। কারণ বেশিরভাগ সময়ই ওষুধের মেয়াদ দেখা হয় না। কোথায় ওষুধের মেয়াদ লেখা থাকে, সাধারণ মানুষ তা জানেও না। বাস্তবতা হল, প্রায় সব মানুষই অল্পস্বল্প রোগে আক্রান্ত হলে সবার আগে যায় নিজ নিজ এলাকার ফার্মেসিতে। বিক্রেতার কাছে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিনে তা সেবন করে। আর এই সুযোগটাই নেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা সচেতনভাবে ওইসব রোগীকে দিয়ে দেয় ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। অবশ্য শুধু গ্রামে নয়, দেশের নগর-মহানগরসহ প্রায় সব জায়গায় এমনটি ঘটছে।

এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণ মানুষ খুব সহজেই ওষুধের ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রশিক্ষণ না নিয়েই গড়ে তুলছে ওষুধের দোকান। আবার কখনও কখনও ওষুধের দোকানদার নিজেই চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রতারণা করে মানুষের সঙ্গে।

তারা লাভের আশায় বিক্রি করে ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। বাজারে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হল, ওষুধ রিপ্রেজেন্টেটিভরা নামসর্বস্ব কোম্পানির ওষুধ বিক্রিতে বেশি মনোযোগী। এক্ষেত্রে তারা সেবার পরিবর্তে অর্থ উপার্জনকে প্রাধান্য দেয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হয়। রাজধানীর ফার্মেসিগুলোরই যখন এ অবস্থা, তখন অন্যান্য স্থানের ফার্মেসিগুলোতে কত ধরনের অনিয়ম হয়, তা সহজেই অনুমেয়।

দেশে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ)-এর ১(ঙ) ধারায় খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল মেশালে বা বিক্রি করলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে আইনে এমন শাস্তির বিধান থাকলেও আমরা কখনও শুনিনি খাদ্যে ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে কারও মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

এর প্রতিকার রয়েছে সরকারের হাতেই। প্রয়োজন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা। যারা বাড়তি দাম নিচ্ছে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ভেজাল ও নিুমানের ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তা না হলে নানা কৌশলে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির চেষ্টা সবসময় চালিয়ে যাবে।

আমাদের ওষুধ শিল্প উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। তবে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে ওষুধ শিল্পের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই প্রশাসনের উচিত অতি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।

সাহাদা: ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক