ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হলি আর্টিজান হামলার ৪ বছর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২০:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
  • ১৯৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে। পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোদের উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর একজন পাচক নিহত হন। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি দশা। রেস্তোরাঁর আটক আরেক কর্মী পরে হাসপাতালে মারা যান।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন জন নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।

হামলার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার (১ জুলাই) সকাল থেকে নিহতদের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানাবে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে সীমিত পরিসারে শিডিউল মেনে জাপান, ইতালি এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতগণ শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন।

সেই রাতে যা ঘটেছিল 
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে যেদিন ওই হামলা হয়, সেদিন ছিল শুক্রবার। পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে পাঁচ তরুণ রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই ক্যাফেতে ঢুকে শুরু করে নৃশংসতা।

গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান গুলশান থানা পুলিশের সদস্যরা। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলির খবর মুহূর্তেই পুলিশের ওয়্যারলেসে ছড়িয়ে পড়ে।

থানা পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব, সদ্য গঠিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ সব সদস্য ছুটে আসেন। সবার দৃষ্টি চলে যায় এই রেস্তোরাঁ ঘিরে। সবাই নিশ্চিত হয় এটা জঙ্গিদের হামলা।

রাতেই তাদের দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন এবং গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম মারা যান। আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য।

এরপর কিছুটা পিছু হটে ওই বেকারি ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে রাখেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাতভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকের পর বৈঠক চালিয়ে যান।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। তাদের বরাত দিয়ে হামলাকারী এবং সেখানে নিহতদের ছবিও প্রকাশ করে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে; তখনও অনেকে হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে ছিলেন।

রুদ্ধশ্বাস রাত পেরিয়ে ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা নামে অভিযানে; ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের সেই অভিযানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। তখনই দেখা যায়, রাতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। বেকারির ভেতর থেকে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়।

যে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাজ ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হলি আর্টিজান হামলার ৪ বছর

আপডেট টাইম : ১০:২০:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে। পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোদের উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর একজন পাচক নিহত হন। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি দশা। রেস্তোরাঁর আটক আরেক কর্মী পরে হাসপাতালে মারা যান।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন জন নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।

হামলার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার (১ জুলাই) সকাল থেকে নিহতদের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানাবে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে সীমিত পরিসারে শিডিউল মেনে জাপান, ইতালি এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতগণ শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন।

সেই রাতে যা ঘটেছিল 
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে যেদিন ওই হামলা হয়, সেদিন ছিল শুক্রবার। পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে পাঁচ তরুণ রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই ক্যাফেতে ঢুকে শুরু করে নৃশংসতা।

গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান গুলশান থানা পুলিশের সদস্যরা। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলির খবর মুহূর্তেই পুলিশের ওয়্যারলেসে ছড়িয়ে পড়ে।

থানা পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব, সদ্য গঠিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ সব সদস্য ছুটে আসেন। সবার দৃষ্টি চলে যায় এই রেস্তোরাঁ ঘিরে। সবাই নিশ্চিত হয় এটা জঙ্গিদের হামলা।

রাতেই তাদের দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন এবং গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম মারা যান। আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য।

এরপর কিছুটা পিছু হটে ওই বেকারি ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে রাখেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাতভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকের পর বৈঠক চালিয়ে যান।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। তাদের বরাত দিয়ে হামলাকারী এবং সেখানে নিহতদের ছবিও প্রকাশ করে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে; তখনও অনেকে হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে ছিলেন।

রুদ্ধশ্বাস রাত পেরিয়ে ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা নামে অভিযানে; ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের সেই অভিযানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। তখনই দেখা যায়, রাতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। বেকারির ভেতর থেকে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়।

যে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাজ ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।