হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাদেক বাচ্চু। অনেক আগেই তার চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৫০০ পেরিয়েছে। এখনো ইন্ডাস্ট্রির জন্য পরিশ্রম করেই যাচ্ছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে তার শুরু থেকে অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘসময় আড্ডা দিয়েছেন বিনোদন প্রতিদিনের সঙ্গে। এ আড্ডায় উঠে আসে অনেক অজানা কথা। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন নুরুল করিম।
চলচ্চিত্রের জন্য মনটা খুব কাঁদে। নিজের জীবনের সেরা ও পরিশ্রমের সময়গুলো এখানে দিয়েছি। এখানে কাটিয়েছি। সেই জায়গাটার এমন দুরবস্থা দেখে সত্যি খুব কষ্ট হয়।
—সাদেক বাচ্চু
চলচ্চিত্রের কারণেই আপনি আজকের সাদেক বাচ্চু। কিন্তু এ ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার শুরু গল্পটা অনেকেই জানেন না…
চলচ্চিত্রে আসার গল্পটা অনেকটা হুট করেই। তখন আমি নিয়মিত মঞ্চ ও টিভি নাটকে অভিনয় করি। আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম সে সময়ে একজন বিখ্যাত প্রযোজক ছিলেন। নির্ভরযোগ্য গুজবে প্রভাস নামের একটি নাটকে একক অভিনয় করতাম আমি। এটি প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের। তো এ নাটকটি দেখতে উনি মহিলা সমিতির মঞ্চে আসেন। উনি আমার নাটকটি দেখে আমাকে ডেকে পাঠালেন, কিছু ভুল-ক্রুটি দেখিয়ে দিয়ে বললেন, পরবর্তী শোতে এগুলো ঠিক করার চেষ্টা করো, দর্শক তোমাকে আরো ভালোভাবে গ্রহণ করবে। উনিই আমাকে টিভি নাটকে ভালো একটা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন, এটা ১৯৭৬ সালের ঘটনা। তবে ছোটবেলা থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে আমার সম্পৃক্ততা ছিল।
দর্শকরা আপনাকে কোন ধরনের চরিত্রে দেখতে চায়?
টেলিভিশন এবং মঞ্চে আমি গল্পের মূল চরিত্রে থেকে সফট ক্যারেক্টার করতাম। কিন্তু চলচ্চিত্রে যখন আমি প্রথম কাজ করি তখন পজেটিভ ক্যারেক্টারই করেছি। তৃতীয় ছবিতে গিয়ে খল-চরিত্রে অভিনয় করি। সিনেমার নাম সুখের সন্ধানে। এরপর যে ছবিটা আমাকে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত করে তুললো সেটা হলো চাঁদনী। তখন চলচ্চিত্রের একটা স্থবির অবস্থা চলছিল। এ চলচ্চিত্র মুক্তির পর ইন্ডাস্ট্রিতে একটা জোয়ার চলে এলো, এরপর একে একে সালমান শাহ, মৌসুমী, পপি, শাকিল, রিয়াজ, শাকিব খানদের আগমনে সমৃদ্ধ হয়েছে। অবাক করা বিষয় হলো, যে সবসময় সফট চরিত্র করতো সে চাঁদনীতে কঠিন একটা ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে চলচ্চিত্রের অভিনেতা হয়ে গেল। তারপরের গল্প তো অনেকেরই জানা। প্রচুর ছবিতে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করলাম, দর্শকরাও সেভাবে গ্রহণ করতে লাগলো।
ঢাকা চলচ্চিত্রের বাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
এখন তো সিনেমা নির্মাণ অনেক কমে গেছে। যে ক’টি নির্মিত হচ্ছে সেখানে আমার মতো সিনিয়র শিল্পীদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। যারা বোঝেন, জানেন তারা ডাকেন। এর বাইরে টুকটাক নাটকে কাজ করছি। এই তো, এভাবেই চলে যাচ্ছে। তবে চলচ্চিত্রের জন্য মনটা খুব কাঁদে। নিজের জীবনের সেরা ও পরিশ্রমের সময়গুলো এখানে দিয়েছি, এখানে কাটিয়েছি। সেই জায়গাটার এমন দুরবস্থা দেখে সত্যি খুব কষ্ট হয়।
জসিম, সালমান শাহ, মান্না, শাকিব, কে বেশি সার্থক?
আমি বলবো, প্রত্যেকেই সার্থক। আমি ৪ জনের সঙ্গেই কাজ করেছি। সবাইকে কাছ থেকে দেখেছি। সবাই সফল।
মান্না ও শাকিব খানের সঙ্গে অসংখ্য সিনেমায় আপনি কাজ করেছে। তাদের প্রসঙ্গে আপনার অভিমত শুনতে চাই—
প্রত্যেকটা মানুষেরই আলাদা আলাদা স্বত্ব থাকে। মান্না সাহেব যে সব ফ্লেভারের সিনেমাগুলো করেছেন, বিশেষ করে কাজী হায়াত্, মালেক আফসারী, এফআই মানিকের এগুলো এক ধরনের মাপের ছবি। বলতে গেলে উনি এন্ট্রি হিরো। খল-নায়কের মতোই অভিনয় করেছেন, কিন্তু মূল কাজটাই হলো সমাজ সংস্কারের। শাকিব প্রতিবাদী ও রোমান্টিক চরিত্রের মাধ্যমেই কিন্তু আজকের সুপারস্টার। মান্না ও শাকিব দু’জনই অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন।
শাকিব-মিশা জুটি হলো, কিন্তু শাকিব-সাদেক বাচ্চু কেন হলো না?
(হাসি) শাকিবের সঙ্গে তো আমারই প্রচুর কাজ ছিল। মিশা আমার ছেলের অভিনয় করতো, শাকিবের সঙ্গে মূল ভিলেনের অভিনয় করতাম। এখন কথা হলো, বয়স তো একটা ব্যাপার। পরবর্তীতে দেখা গেল, অনেক ছবিতে শাকিবের বাবার ক্যারেক্টার করা শুরু করলাম। কিন্তু পরের ছবিতেই যখন আবার শাকিবের সামনে ভিলেন হয়ে দাঁড়াবো তখন বিষয়টা কেমন হয়ে যায় না? তখনই আমি মিশার বাবা হয়ে যাই! তখন মিশাকেই শাকিবের মুখোমুখি হতে হয়।
নায়ক-খলনায়ক জুটি হলে তা কতটা সহায়ক?
কয়েকটা ছবি যদি একই নায়ক-খলনায়ক একসঙ্গে কাজ করেন তাহলে দু’জন-দু’জনের কেমিস্ট্রি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। কাজগুলোও একটু অন্য মাত্রা পায়। এটা ঠিক জুটি বাঁধা নয়, তবে এটা খারাপ হয় না।
এই সময়ে আপনাকে নায়ক করলে নায়িকা হিসেবে কাকে চাইবেন?
এখন নায়ক হলে আমাকে তো যাদের বয়স হয়ে গেছে তাদের কথাই বলতে হয়। সেটা মনেই থাক!
জীবনে কোনো আক্ষেপ আছে কী?
নাহ, আমি তৃপ্ত। তবে একটা জায়গা একটু আক্ষেপ আছে। এখন যে চিত্রনাট্যগুলো হচ্ছে সেগুলো আমাদের অভিনয়ের জন্য মানানসই নয়।
অবসর যাপনের জন্য কোথায় যেতে চান বারবার?
আমাদের দেশটাকেই আমি পুরোটা দেখতে পারিনি। যতটুকু শুটিংয়ের সুবাদে বা পারিবারিক ভ্রমণে দেখতে গিয়েছি, আমার মনে হয় আমি তেমন কিছুই দেখিনি। এছাড়া আমার পুরনো জিনিস দেখার শখ রয়েছে, যেমন পিরামিড, রোম নগরী এগুলোর প্রতি আমার আকর্ষণ আছে। আমাদের দেশেও অনেককিছু আছে। সেগুলো দেখতে চাই।