মোটা শরীর নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে অহরহ। আর সেই সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য অনেকেই অনেক রকমের পদ্ধতি অবলম্বন করে। কিন্তু যথাযথ প্রকৃয়ায় নিজের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা বলেই তাদের অনেকে মোটা শরীর নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ে।
আজকাল প্রায় কমবেশী সকল নারীই স্বাস্থ্য সচেতন। সকলেই এখন চেষ্টা করেন স্লিম থাকতে, পাশাপাশি নিজের শরীরের নানান অঙ্গগুলো সুগঠিত রাখতে। শরীরের একেকটি অঙ্গ সুন্দর করতে চাই ভিন্ন ভিন্ন ব্যায়াম। ডায়েটিং করে ওজন তো কমানো যায়, কিন্তু এর অনেক খারাপ প্রভাব পড়ে দেহের সৌন্দর্যের ওপরে।
কিশোর কিশোরি থেকে তরুণ সবাই এখন ছুটছে স্লিম ফিগারের পেছনে। আমাদের অনেকের জীবনেই স্থূলতা বা বাড়তি ওজন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি ওজন শুধু শারীরিক নয় বিভিন্ন মানসিক ও সামাজিক সমস্যারও কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাই আমরা বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ দেহ আর কাঙ্ক্ষিত ফিগার পেতে চাই। এটা সত্যি চাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কার্পণ্য নেই তবে সমস্যা দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত সেই গোলে যেতে আমরা যে পথ অবলম্বন করি সেখানে।
এটা বলছি এজন্য যে, আমরা ওজন নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম যা করি তা হচ্ছে খাবার নিয়ন্ত্রণ। আমাদের বাড়তি ওজনের জন্য যত শত্রুতা যেন শুধু খাবারের সঙ্গে। কয়েক দিন না খেয়ে থেকে অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে যাই, আর কেউ কেউ এক সপ্তাহেও কোনো পরিবর্তন না দেখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে আবার আগের মতোই খেতে শুরু করেন। অতএব ফলাফল হয় শুন্য।
আসুন প্রথমে তিন মাস টার্গেট নিয়ে চেষ্টা করি ওজন কমানোর। এই তিনমাস একটু কষ্ট হলেও নিয়মগুলো মেনে চলি, তারপর ওজন মেপে দেখি। আসুন আমরা Slim Figure পাওয়ার গোপন রহস্য কয়েকটি টিপস সহজভাবে জেনে নেই:
১. হালকা নাস্তার অভ্যাস:
আমরা অনেকেই ডায়েট করছি ঠিকই কিন্তু দেখা যায় সন্ধ্যার নাস্তার টেবিলে পেট ভর্তি করে আহার করে ফেলি। সন্ধ্যার নাস্তায় অনেক ভারী খাবার খেয়ে ফেলি। এই বাজে অভ্যাসটির কারণে আপনার ওজন আরও দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার নাস্তাটি হালকাভাবে সেরে নেয়ার। একেবারেই না হলেই না এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনি যদি নাস্তা করার অভ্যাসটি বাদ দিতে পারলে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
২. রাতের খাবারের পর অন্যকিছু না খাওয়া :
রাতের খাবারের পর অনেকের অভ্যাস থাকে আরও কিছু খেয়ে ফেলা। অনেকেই খাবারের পরপর মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে অনেক বেশি পছন্দ করেন। এই ধরনের অভ্যাস থেকে থাকলে তা থেকে যত শীঘ্রই সম্ভব নিজেকে মুক্ত করুন। রাতের খাবারের পর আর কিছুই খাবেন না। প্রয়োজনে পানি খেতে পারেন।
৩. হালকা শারীরিক ব্যায়াম:
রাতের খাবারের পর একটু সময় নিয়ে হালকা ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন একেবারে রাতের খাবারের পরপর ব্যায়াম না করে একটু সময় বিশ্রাম নিয়ে তারপর ব্যায়াম করুন। এভাবে প্রতিদিন রাতে হালকা ধরনের কয়েকটি ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এর ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
৪. তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস:
অনেকেই রাত জাগতে পছন্দ করে। এতে করে রাতে ক্ষুধার প্রবণতা বাড়ে এবং অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে থাকে। আবার রাত জাগার ফলে অযথা শরীর খারাপ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই রাত জাগার এই বদ অভ্যাসটি বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে এবং আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে যাবে। আর তখন স্লিম ফিগার নিয়ে আপনিও থাকবেন অনেক বেশি ফুরফুরে মুডে।
খেতে হবে প্রচুর পানি পান করুন প্রতিবার খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে একগ্লাস পানি পান করুন উচ্চ শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য যেমন—চাল, আলু খেতে হবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে কম ক্যালরিযুক্ত তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে পারেন প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন সাধারণ চা বা কফির পরিবর্তে সবুজ চা পান করুন শসা ও ভিটামিন সি জাতীয় টক ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে। এগুলো বেশি খেতে পারেন।
তিক্ত স্বাদযুক্ত সবজি বিশেষ করে করলা বাড়তি ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকর মসলাজাতীয় খাবার যেমন: আদা, দারচিনি, কালো মরিচ ওজন কমাতে সাহায্য শীতের সবজি বাঁধাকপি খেলে ওজন কমে কাঁচা বা রান্না যেভাবে ইচ্ছা বেশি পরিমাণে খান খাওয়া যাবে না খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ খেলে এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে উচ্চক্যালরি ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন মিষ্টি শরবত, কোমল পানীয়, সব রকম মিষ্টি, তেলে ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, শুকনা ফল, ঘি, মাখন, পনির, দুধের সর এসব খাবার যত পছন্দেরই হোক বাদ দিতে হবে রাতে খাবারের পর অনেকেই অতিরিক্ত কিছু খেতে পছন্দ করেন অপ্রয়োজনীয় এ খাবারটুকু একদম বাড়তি ওজন যোগ করে আমাদের শরীরে কোনো সফলতা সেলিব্রেট করার সময় পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে খাবার খাওয়ার প্লান বাদ দিয়ে বরং কোথাও ঘুরে আসুন কায়িক শ্রম ব্যায়াম একটি কথা মনে রাখা দরকার, শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণই আমাদের ওজন কমাতে পারে না।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে যদি ৫০০ ক্যালরি কমাতে পারি তাহলে ওজন কমে প্রতিসপ্তাহে আধা কেজি। কিন্তু আমরা প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে হাঁটি, সাইকেল চালাই অথবা সাঁতার কাটি তখন দেখবেন ওজন কমছে ২ গুণ। তবে যারা কায়িক শ্রম বেশি করেন তাদের ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই।
সময়ের অভাবে যারা আলাদা করে এক্সারসাইজ করতে পারেন না, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসেই কিছু ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিন। আর কাছাকাছি দূরত্বে কোথাও যেতে হলে হেঁটে যান, ওপরে উঠতে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়িতে চলুন। এক গ্লাস পানি বা প্রিন্ট দেওয়া কাগজ আনতে কাউকে না বলে নিজেই উঠে গিয়ে নিয়ে নিন। শরীরের বাড়তি ওজন এক সপ্তাহে বাড়েনি, তাই খুব অল্প দিনে কমে যাবে এটা ভাবা ঠিক নয়, দীর্ঘ তিন মাসের পরিকল্পনা করুন, ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন স্বপ্নের সেই হারানো কাঙ্ক্ষিত ফিগার পেয়ে যাবেন মাত্র তিন মাসে।