একনেকে ৪৩২৪ কোটি ব্যয়ে ৯ প্রকল্প অনুমোদন

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যানযট নিরসনে হাতিরঝিলের সঙ্গে চট্টগ্রাম রোড মোড় এবং তারাবো লিংক মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। ফলে কম সময়েই হাতিরঝিল হয়ে চিটাগাং রোডে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ জন্য ১ হাজার ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সভায় আরও ৮ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা খরচ করা হবে। একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেও ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গুলোতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশয় থেকেই প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। একই সঙ্গে যন্ত্রপাতি চালাবার ক্ষেত্রে দক্ষ লোক আছে কিনা তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। যাতে কেনার পর এগুলো পড়ে না থাকে। এক্ষেত্রে দক্ষ জনবল রয়েছে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অন্যদের দক্ষ করার কথা রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সচিব আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি দক্ষ জনবলের অভাবে যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে না বলেও জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় ট্রেনিংয়ের জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ এবং সব জায়গায় ড্রেজিং কাজে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে পানির অপচয় যাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

যানযট নিরসনে পিপিপি’র ভিত্তিতে হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু বনশ্রী-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক (চিটাগাংরোড মোড় এবং তারাবো লিংক মহাসড়ক) চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।

প্রকল্প প্রসঙ্গে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান সাইফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, হাতিরঝিল-বনশ্রী হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত চারলেন সড়ক হবে। ফলে ঢাকা শহর থেকে বের হওয়ার উন্নত করিডর তৈরি হবে। হাতিরঝিল থেকে চট্টগ্রাম রোডে কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে।

প্রকল্পের ব্যয়েে মধ্যে রয়েছেÑ প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করা। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পরামর্শক এবং স্বাধীন প্রকৌশল পরামর্শক সেবার মাধ্যমে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম সুপারভাই বা তদারকি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটার সামগ্রী, ভাড়াভিত্তিক যানবাহন ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৭২ জন সরকারী কর্মকর্তা বিদেশ সফর করবেন। তাদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা বরাদ্দ।

সড়ক বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে। সড়কটি হাতিরঝিল সংলগ্ন রামপুরা সেতুর কাছ থেকে শুরু হয়ে বনশ্রী-মেরাদিয়া- শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা পর্যন্ত যাবে। সড়কটির একটি অংশ ডেমরা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোডে শেষ হবে। আরেকটি অংশ সুলতানা কামাল সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো লিংক মহাসড়ককে যুক্ত করবে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুসারে, অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ হবে।

আলোচ্য সড়কটি চারলেনে উন্নীত হলে প্রতিদিন ১১ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগর চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ অন্য জেলা সংযোগ করবে। প্রস্তাবিত রুটটি গুলশান, বাড্ডা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বনানী, রামপুরা ও উত্তরার যানবাহনক আকৃষ্ট করবে। এছাড়া, এটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

আলোচ্য সড়কের মূল প্রকল্পের তিনটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরা সার্কেল। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ডেমরা সার্কেল থেকে চিটাগাং রোড। আর তৃতীয়টি ডেমরা থেকে তারাব মোড় পর্যন্ত। প্রথম অংশটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। সড়কটি রামপুরা থেকে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত এক কিলোমিটার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত। বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও জনপথের আওতাভুক্ত। রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত বর্তমানে সড়কের পাশে লেক রয়েছে। লেক ও বিদ্যমান সড়কের মধ্যে অব্যবহৃত সড়ক ঢালে পিয়ারের মাধ্যমে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করা হবে।

হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু বনশ্রী-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প ছাড়াও একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছেÑ রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প, খরচ ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ প্রকল্প, খরচ ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প, খরচ ধরা হয়েছে ৯৫৮ কোটি ৮৫ কোটি টাকা। মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্প, খরচ ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ লিংক সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, খরচ ধরা হয়েছে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার আওতাধীন সুরমা নদীর ডান তীরে অবস্থিত দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লক্ষীবাউর ও বেতুরা এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদী তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

একনেক সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর