ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে শহরে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৬২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরিয়ার যুদ্ধবিধস্ত শহর কাফর নাবল। শহরটিতে কয়েকবছর আগেও প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। তবে এখন বসবাস করেন মাত্র ১০০ জনের মত মানুষ। আর থাকে হাজারখানেক বিড়াল ও কিছু সংখ্যক কুকুর। নিস্তব্ধ এ শহরে মানুষগুলোর সঙ্গে বোবা প্রাণীগুলোর এক অন্যরকম মায়ার বন্ধন গড়ে উঠেছে।

 

সম্প্রতি বিবিসির সাংবাদিক মাইকেল টমসন ভুতুড়ে এ শহরটিতে গিয়েছিলেন। তিনি দেখেন, শহরটিতে এখন মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং রুশ সৈন্যদের বোমাবর্ষণের কারণে বাকিরা পালিয়ে গেছে। ফলে কাফর নাবল এখন প্রায় জনশূন্য।

শহরটিতে যাওয়ার পর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ৩২ বছরের যুবক সালাহর সঙ্গে পরিচয় ঘটে মাইকেল টমসনের। যুবকটির সঙ্গে সবসময় ৭ থেকে ৮টি বিড়াল ঘোরাফেরা করে। সালাহ বলেন, বিড়ালগুলো সাথে থাকলে কিছুটা ভরসা পাওয়া যায়। বোমাবর্ষণ যখন শুরু হয়, তখন ভয় কিছুটা হলেও কম লাগে।

তিনি বলেন, বিড়ালগুলোকে দেখাশোনা করার মত শহরে কেউ নেই। তাদের দেখাশোনা করার জন্য হলেও কিছু মানুষ দরকার। যারা এদের খাবার দেবে, পানি দেবে। যে সব বাড়িতে এখনো মানুষ আছে, বিড়ালগুলো যেসব বাড়িতে গিয়ে ভিড় করছে।

তিনি আরো বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমরা যখন শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বের হই, তখন ২০ থেকে ৩০টি বিড়াল আমাদের পিছু নেয়। তাদের মধ্যে কতগুলো আবার আমাদের সাথে বাড়িতে ঢুকে পড়ে।’ মানুষ আছে এমন প্রত্যেকটি বাড়িতে এখন কমপক্ষে ১৫টি করে বিড়াল রয়েছে।

siria town new

সন্ধ্যা নামার পর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুকুরের ডাক শোনা যায়। তাদের এখন থাকার মত জায়গা নেই, ক্ষুধার্ত। দিনের বেলায় রাস্তার আনাচেকানাচে পড়ে থাকে। আর রাত হলেই খাবার ও শোয়ার জায়গা নিয়ে বিড়ালের সঙ্গে রেষারেষি লেগে যায়। তবে সংখ্যায় বেশি থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত বিড়ালই জেতে।

যুদ্ধের ভয়াবহতা আর বর্বরতার মধ্যে বিড়াল ও মানুষের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিড়ালগুলো একসময় গৃহপালিত ছিল। মালিকের বাড়িতে আরামে থাকত। কিন্তু সৈন্যরা শহরটিতে বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকেই মানুষজন পালাতে শুরু করে। ফেলে যায় তাদের বিড়ালগুলো। তারা এখন নতুন আশ্রয় খুঁজে ফিরছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে শহরে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি

আপডেট টাইম : ০৭:৩৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরিয়ার যুদ্ধবিধস্ত শহর কাফর নাবল। শহরটিতে কয়েকবছর আগেও প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। তবে এখন বসবাস করেন মাত্র ১০০ জনের মত মানুষ। আর থাকে হাজারখানেক বিড়াল ও কিছু সংখ্যক কুকুর। নিস্তব্ধ এ শহরে মানুষগুলোর সঙ্গে বোবা প্রাণীগুলোর এক অন্যরকম মায়ার বন্ধন গড়ে উঠেছে।

 

সম্প্রতি বিবিসির সাংবাদিক মাইকেল টমসন ভুতুড়ে এ শহরটিতে গিয়েছিলেন। তিনি দেখেন, শহরটিতে এখন মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং রুশ সৈন্যদের বোমাবর্ষণের কারণে বাকিরা পালিয়ে গেছে। ফলে কাফর নাবল এখন প্রায় জনশূন্য।

শহরটিতে যাওয়ার পর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ৩২ বছরের যুবক সালাহর সঙ্গে পরিচয় ঘটে মাইকেল টমসনের। যুবকটির সঙ্গে সবসময় ৭ থেকে ৮টি বিড়াল ঘোরাফেরা করে। সালাহ বলেন, বিড়ালগুলো সাথে থাকলে কিছুটা ভরসা পাওয়া যায়। বোমাবর্ষণ যখন শুরু হয়, তখন ভয় কিছুটা হলেও কম লাগে।

তিনি বলেন, বিড়ালগুলোকে দেখাশোনা করার মত শহরে কেউ নেই। তাদের দেখাশোনা করার জন্য হলেও কিছু মানুষ দরকার। যারা এদের খাবার দেবে, পানি দেবে। যে সব বাড়িতে এখনো মানুষ আছে, বিড়ালগুলো যেসব বাড়িতে গিয়ে ভিড় করছে।

তিনি আরো বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমরা যখন শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বের হই, তখন ২০ থেকে ৩০টি বিড়াল আমাদের পিছু নেয়। তাদের মধ্যে কতগুলো আবার আমাদের সাথে বাড়িতে ঢুকে পড়ে।’ মানুষ আছে এমন প্রত্যেকটি বাড়িতে এখন কমপক্ষে ১৫টি করে বিড়াল রয়েছে।

siria town new

সন্ধ্যা নামার পর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুকুরের ডাক শোনা যায়। তাদের এখন থাকার মত জায়গা নেই, ক্ষুধার্ত। দিনের বেলায় রাস্তার আনাচেকানাচে পড়ে থাকে। আর রাত হলেই খাবার ও শোয়ার জায়গা নিয়ে বিড়ালের সঙ্গে রেষারেষি লেগে যায়। তবে সংখ্যায় বেশি থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত বিড়ালই জেতে।

যুদ্ধের ভয়াবহতা আর বর্বরতার মধ্যে বিড়াল ও মানুষের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিড়ালগুলো একসময় গৃহপালিত ছিল। মালিকের বাড়িতে আরামে থাকত। কিন্তু সৈন্যরা শহরটিতে বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকেই মানুষজন পালাতে শুরু করে। ফেলে যায় তাদের বিড়ালগুলো। তারা এখন নতুন আশ্রয় খুঁজে ফিরছে।