সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে ৬.২ ডিগ্রি আজ-কাল বৃষ্টির শঙ্কা বাড়তে পারে শীত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতে কাঁপছে দেশ। গত ৯ দিন ধরে সারা দেশে শীত জেঁকে বসলেও বুধবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হল পঞ্চগড়ে ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৯ দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বিরতি দিয়ে চললেও বুধবার থেকে ফের শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ এ মৌসুমের সব ধাপকে ছাড়িয়ে গেছে।

আবহাওয়া দফতর দেশবাসীর জন্য আরও দুঃসংবাদ দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, আজ-কালকের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর বৃষ্টি হলে তাপমাত্রার আরেক দফা কমবে। তখন শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।

এ অবস্থা চলবে আরও এক সপ্তাহ। এরই মাঝে আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) কর্মকর্তারা আশার কথা শুনিয়েছেন। তারা বলছেন, বৃষ্টির সময় সৃষ্ট মেঘমুক্ত আকাশ থেকে দিনে সূর্য অনায়াসে ধরণীকে উষ্ণ করবে। এতে বেড়ে যাবে দিনের তাপমাত্রা।

শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মধ্যরাত থেকে প্রকৃতি ঢাকা থাকছে ঘন কুয়াশায়। অনেক স্থানে এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের আলো পড়ছে না। সড়ক ও নৌ যোগাযোগ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলে আসা-যাওয়ার অন্যতম বাহন লঞ্চ চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। মাওয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের উভয় পাড়ে শত শত গাড়ি আটকে পড়েছে। সড়কে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে বাস-ট্রাক-গাড়ি।

সারা দেশেই গরম কাপড় বিক্রি বেড়ে গেছে। বেশি কষ্টে আছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। দরিদ্র মানুষের মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে গরম কাপড় বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারিভাবেও শীতবস্ত্র বিতরণের কোনো উদ্যোগ সেভাবে চোখে পড়ছে না।

তহবিল অপ্রতুল থাকায় বিভিন্ন এলাকায় চেয়ারম্যানসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। এদিকে শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়েছে। সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে শীতজনিত রোগে প্রায় ৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতজনিত রোগে মারা গেছেন ৪৪ জন। সবচেয়ে বেশি ১০ জন করে মারা গেছেন খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়ে। ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার বলছে, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৬৭ জন রোগী।

এছাড়া ২,০৫৯ জন ডায়রিয়া এবং ২,৯১৯ জন জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে এসেছেন। খাগড়াছড়ির সবাই মারা গেছেন তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে। যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, টানা শীতের কারণে উষ্ণতার খোঁজে আগুন পোহাতে গিয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিএমডির আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস যুগান্তরকে জানান, তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মাঝারি, ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র এবং আর ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।

এ হিসাবে কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল অঞ্চল এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বুধবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে দিনে দেশের অধিকাংশ স্থানে সূর্য তাপ দিতে পেরেছে। যে কারণে এদিন সারা দেশের গড় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য বেড়েছে অনেক।

এমন পরিস্থিতিতে শীতের অনুভূতি তুলনামূলক কম। জানা গেছে, বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ২১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দুই স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও ১৩ সেলসিয়াস। পার্থক্য ১০ ডিগ্রির বেশি হলে হাড় কাঁপানো শীতের অনুভূতি আর থাকে না।

বিএমডি বলছে, শৈত্যপ্রবাহ আরও অবনতি ঘটতে পারে। আজকালের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি হলে আকাশ থাকে মেঘমুক্ত। এতে ঊর্ধ্বাকাশ থেকে জেড স্ট্রিমের শীতল বায়ুর নেমে আসা সহজ হয়। পাশাপাশি হিমালয় থেকে উৎসারিত শীতল ঝঞ্ঝা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, বুধবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৬ দশমিক ২ ডিগ্রিতে নেমে আসার পাশাপাশি বেড়েছে কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস। এক সপ্তাহ ধরেই সূর্যের দেখা মিলছে না। বুধবার দুপুরে সূর্যের মুখ একঝলক দেখা গেলেও উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জেঁকে বসে শীত।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র কর্মকর্তা জীতেন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তেঁতুলিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে। তবে এবার পৌষের প্রথম দিন থেকেই পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। সঙ্গে চলে উত্তুরে হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

ঘন কুয়াশা আর উত্তুরে বাতাসে পঞ্চগড়ের সর্বত্র এখন হাড় কাঁপা শীত অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পথঘাট। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে চলায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।

জীবিকার তাগিদে যারা বের হচ্ছেন মোটা সোয়েটার কিংবা জ্যাকেট পরে বের হচ্ছেন। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, পদ্মা-যমুনা নদীবেষ্টিত পাবনায় গত ৭ দিন ধরে প্রচণ্ড শীত এবং হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মধ্যরাত থেকে প্রকৃতি ঢাকা থাকছে ঘন কুয়াশায়।

এক সপ্তাহ ধরে সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। গত ১০ দিন ধরে এ অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়লেও গত ৭ দিন থেকে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন এবং হিমেল হাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে বলে জানান আবহাওয়া অফিস।

বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ২ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ভর্তি হয়েছেন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রঞ্জন কুমার দত্ত জানান, গেল ২৪ ঘণ্টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বেড না পেয়ে অনেক আক্রান্ত নারী-পুরুষ, শিশু মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর