হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢা কা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই শাখার নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এমন আভাস দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈঠকে নেত্রী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রসঙ্গে কথা তোলেন। তিনি উপস্থিত নেতাদের কাছে জানতে চান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারো কোনো সুপারিশ আছে কি না। কিন্তু উপস্থিত নেতাদের কেউই মুখ খোলেননি। তখন নেত্রী কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, মহানগরের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে কাকে বাদ দিয়ে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে সে বিষয়ে নেত্রী কিছু বলেননি।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের সাংগঠনিক বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা কয়েকটি সমস্যার কথা নেত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। নেত্রী আমাদের সেই সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।’
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, দলের শক্তিকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদেই পরিবর্তন আসছে। ওই নেতারা জানান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। নানা সময়ে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং অধীনস্থ বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠন নিয়ে বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। বর্তমান নেতৃত্বের আমলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। এসব নিয়ে অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি। ফলে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি শাখাকেই ঢেলে সাজাতে চান। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে মহানগরের কমিটি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে। এর আগের সম্মেলনেও মহানগরের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে থাকেন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘সব সম্মেলনের মধ্য দিয়েই কমিটিতে পরিবর্তন আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি হবে বলে আমি মনে করি। যারা দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যারা দলের জন্য কাজ করেছে, যারা জনপ্রিয়, দায়িত্ব পালনে সক্ষম এমন নেতাদের দিয়েই কমিটি করা হবে।’
দলের কেন্দ্র ও মহানগরের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারা হবেন তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হুমায়ূন কবির।
নজিবুল্লাহ হিরু ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ডিএসসিসি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। প্রবীণ নেতা আবু আহমেদ মান্নাফী দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। তিনি দীর্ঘদিন সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগে সাঈদ খোকন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলে তাঁকে আসন্ন ডিএসসিসি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী হুমায়ূন কবির দীর্ঘদিন বৃহত্তর লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন।
এ অংশে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আখতার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ওমর বিন আব্দুল আজিজ। আরো আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার ও মোর্শেদ কামাল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলিমুজ্জামান আলম।
শাহে আলম মুরাদ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন।
ওমর বিন আজিজ অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের সন্তান। এই পরিবারের প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশেষ সহানুভূতি আছে বলে মনে করেন দলের অনেকেই।
দিলীপ কুমার রায় ‘এক-এগারো’র সময় দলীয় সভাপতির মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আখতার হোসেনের নেতাকর্মীদের মাঝে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা আছে। ডা. নজরুল ইসলাম বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি স্বাচিপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নজরুল ইসলাম লেখালেখি ও গবেষণার সঙ্গেও যুক্ত। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবীর আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন।
আজ সম্মেলন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত। স্বাগত ভাষণ দেবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ্। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ। অনুষ্ঠানে ১৩ হাজার আমন্ত্রিত অতিথি থাকছেন। দলের নেতাকর্মীসহ ৩০ হাজার অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকছে।