১৫০০ টন পেঁয়াজ নামলো বন্দরে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সরকারের অনুরোধে সাড়া দেয়া বড় শিল্পগ্রুপগুলোর আমদানিকরা পেঁয়াজ অবশেষে সমুদ্রপথে দেশে আসতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক বিএসএম গ্রুপ ৭০০ টন; ঢাকার মেঘনা গ্রুপ এনেছে ৮০০ টন। এই দুই প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছোট আমদানিকারকদের পেঁয়াজ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়েছে একাধিক জাহাজ।

বাকি শিল্পগ্রুপগুলোর মধ্যে সিটি গ্রুপের পেঁয়াজ আসছে দুদিন পর; এস আলম গ্রুপের পেঁয়াজ আসছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। অর্থ্যাৎ ধারণা করা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে নিয়মিতই পেঁয়াজ আসবে চট্টগ্রাম দিয়ে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথমবার বড় পেঁয়াজের চালান আমদানির পর বুধবার ও বৃহস্পতিবার সারাদিনই আলোচনার বিষয় ছিল বিএসএম গ্রুপের পেঁয়াজ। আজ খাতুনগঞ্জে পৌঁছার পর বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আজ চীনের পেঁয়াজের দাম কেজি ১০ টাকা কমে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজের দামও কেজি ১০ টাকা কমেছে।

জানতে চাইলে বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা পেঁয়াজ আমদানি করি না; সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়েই এই পেঁয়াজ এনেছি। বৃহস্পতিবার রাতে বন্দর থেকে ছাড় নিয়ে ২০০ টন পেঁয়াজ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছেছে; শুক্রবারও পৌঁছবে আরও ৫০০ টন। আসার পথে রয়েছে আরও পেঁয়াজ। কিন্তু সরবরাহ দিতে গিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে দেশে পেঁয়াজের চাহিদার চেয়ে সরবরাহে অনেক ফাঁরাক। ছোট-বড় আমদানিকারকরা মিলে যদি ধারাবাহিকভাবে সরবরাহ বাড়ায় তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রনে আসতে বাধ্য।

জানা গেছে, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপগুলো বিদেশ থেকে সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। এরমধ্যে সবচে বেশি ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেয় এস আলম গ্রুপ। সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপও আড়াই হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেসব পেঁয়াজ আসতে দেরি হওয়ায় সরকার আকাশপথে উড়োজাহাজে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। বিমানে এস আলম গ্রুপ প্রতিদিন একশ টন করে পেঁয়াজ আনছে; তা ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নামছে।

কিন্তু সব শীর্ষ শিল্পগ্রুপগুলোকে পেছনে ফেলে চট্টগ্রামভিত্তিক বিএসএম গ্রুপ প্রথম সমুদ্রপথে জাহাজে পেঁয়াজ নিয়ে আসে; গত ২৫ নভেম্বর সেটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে যায়। বিএসএম গ্রুপ মোট তিন জাহাজে মোট ৭০২ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামিয়েছে। এছাড়া গতকাল বৃহষ্পতিবার বন্দর জেটিতে ভিড়া ‘ওইএল স্ট্রেইট’ জাহাজে মেঘনা গ্রুপ এনেছে ৫৪০ টন।

চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তা বলছেন, আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়েছে দুটি জাহাজ একটি হচ্ছে ‘ওইএল স্ট্রেইট’; আরেকটি হচেছ ‘মাউন্ট কেলেট’। দুটি জাহাজেই ৭৭৪ টন পেঁয়া রয়েছে। এছাড়া বুধবার জেটিতে ভিড়ে জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে ৯শ টন। মিসর, চীন, তুরস্ক থেকে এসেছে এসব পেঁয়াজ।

বন্দর কর্মকর্তা বলছেন, বৃহস্পতিবার আরও তিনটি জাহাজ বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। এসব জাহাজে আরও পেঁয়াজ রয়েছে; তবে পরিমান এখনও জানা যায়নি।

এদিকে এস আলম গ্রুপ মোট সাড়ে ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে; এরমধ্যে কিছু উড়োজাহাজে এবং কিছু পেঁয়াজ সমুদ্রপথে জাহাজে করে আসবে। প্রতিদিন কার্গো উড়োজাহাজে ১শ টন করে পেঁয়াজ ঢাকা বিমানবন্দরে নামছে। আর এস আলম গ্রুপের পেঁয়াজ কবে আসবে জানতে চাইলে মিসরে অবস্থানরত গ্রুপের শীর্ষ এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, মিসর থেকে তিন হাজার টন এবং তুরস্ক থেকে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ নিয়ে একটি খোলা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।

বড় শিল্পগ্রুপগুলোর পেঁয়াজ আসার পর খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছুটা প্রভাব পড়েছে তবে পুরোপুরি প্রভাব পড়েনি; মিসর ও অন্যদেশ থেকে পেঁয়াজ আসলে প্রভাব পড়বে; দাম আরও কমবে। আজ মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং চীনের পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১শ টাকা। ‌আজ মিয়ানমার থেকে ট্রাকে করে ৪শ টন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে। তবে মিসর ও তুরস্কের কোন পেঁয়াজ ঢুকেনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর