হাওর বার্তা ডেস্কঃ জঙ্গি অর্থায়নের উৎস খুঁজতে বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। টাস্কফোর্সের কার্যক্রম সমন্বিতভাবে জোরদার করতে ৭ অক্টোবর সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ নভেম্বর পরিকল্পনা বিভাগ চিঠি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর এবং সংস্থার কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে। পাশাপাশি কোথাও কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।
টাস্কফোর্সের সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমরা আগে থেকেই এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি। ইতিমধ্যে বেশকিছু কাজও হয়েছে। এই টাস্কফোর্সকে গতিশীল করতে তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছি। তারা কাজ করছে। আশা করছি জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে আমরা সফল হব।
পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর তা কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দফতরের অধীন যারা কর্মরত রয়েছেন সবাইকে অবহিত করেছি।
এতে তারা নিজেরা যেমন সতর্ক থাকবেন, তেমিন কোথাও কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়লে তা টাস্কফোর্স বা আমাকেও জানাতে পারবেন। জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সচিব হিসেবে বিষয়টি সবাইকে জানানো আমরা দায়িত্ব। কেননা সরকার জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ থেকে পাঠানো চিঠির সঙ্গে প্রজ্ঞাপনের একটি কপিও পাঠানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে- ২৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও জোরদার এবং এ কার্যক্রম অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ২২ সদস্যের টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন : অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব।
এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক রয়েছেন। আরও আছেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) হেড, জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেলের পরিচালক এবং জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি)।
টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান যুগান্তরকে বলেন, এই টাস্কফোর্স আগেও ছিল। এখন সেটি সংস্কার করা হয়েছে। আমি চিঠিও পেয়েছি। তবে এখনও কোনো বৈঠক হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। এটা অনেক বড় এবং শক্তিশালী টাস্কফোর্স। এটি মূলত যে কাজ করবে তা হল- জঙ্গি অর্থায়নের উৎস খুঁজে বের করা।
তাছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে এই টাস্কফোর্স। কোথাও সন্দেহজনক কিছু হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের টাস্কফোর্স বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশে জঙ্গিবাদের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও জোরদারকরণ এবং এই কার্যক্রম অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস বা জোগানদাতার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ প্রণয়ন করতে হবে। জঙ্গি তৎপরতা রোধে নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত যে কোনো অপতৎপরতা দমনে আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে এবং টাস্কফোর্সের সভা প্রয়োজন অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে।