হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘ সাত বছর পর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন (কংগ্রেস) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ নভেম্বর। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকায় সম্মেলনকে ঘিরে জনমনে রয়েছে কৌতূহল। কাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে যুবলীগের আগামীর নেতৃত্ব। সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে থাকবে সংগঠনের ইমেজ পুনরুদ্ধারের বাড়তি দায়িত্ব।
ক্যাসিনোকাণ্ডের কারণেই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে সব থেকে বেশি আলোচনায় ছিল যুবলীগের নাম। এরই জের ধরে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রভাবশালী আরো কিছু নেতা জেলেও রয়েছেন। আর যারা বহিষ্কার কিংবা গ্রেফতার হননি তারাও আছেন আতঙ্কে। এ কারণে এবারের কংগ্রেসে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাই চুপসে গেছেন। তবে এর মধ্যে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা অনেকটাই চাঙা হয়ে উঠেছে। তারা নানা মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান দিচ্ছেন প্রার্থিতার।
চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করে সপ্তম জাতীয় সম্মেলন (কংগ্রেসের) প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আলোচনা শুরু হয়েছে কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে। সম্ভাব্য পদ প্রত্যাশীরা নিজেদের মতো করে লবিং করছেন, চলছে দৌড়ঝাঁপ, চেষ্টা করছেন নেত্রীর নজরে আসতে।
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে যুবলীগকে নিয়ে আসার জন্য। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে এবার সন্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য বসয়সীমা শিথিল নাও হতে পারে।
আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম বলেছেন, যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সভানেত্রী দলের জন্য যা ভালো মনে করবেন তাই ভালো। দলের জন্য ক্লিন ইমেজ,পরীক্ষিত ত্যাগী, কর্মীবান্ধব, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শে অনুসারী এমন নেতা নেতৃত্বে আসলে ভালো হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের নেতৃত্বের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৫ বছর বেঁধে দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এবারের সম্মেলন বিবেচনায় কিছুটা শিথিলতাও আসতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা উঠেছে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় আছেন- শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনিরের ছেলে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তার ছোট ভাই শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১২ আসন থেকে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে যুবলীগের অনেক শীর্ষ নেতা বিতর্কিত হওয়ায় ক্লিন ইমেজের নেতা শেখ ফজলে শামস পরশ চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় আছেন।
পরশের পাশাপাশি শীর্ষ পদের আলোচনায় রয়েছেন শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাইম। তারা দু’জনই শেখ সেলিমের ছেলে। দু’জনই যুবলীগের সদস্য, সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের পদও রয়েছে তাদের।
আলোচনায় রয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ২০১৬ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহ দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে যুব রাজনীতিতে পদার্পণ করেন।
আতাউর রহমান, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এরআগে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, জাতীয় পরিষদ সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এস এম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, যুবলীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক। ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মহিউদ্দিন মহি সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি।
সুব্রত পাল, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যুবলীগের প্রচার সম্পাদক এবং ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
মনজুর আলম শাহীন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক। এর আগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম। এর আগে যুবলীগের সহ প্রচার সম্পাদক, সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া আলোচনা আছেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, ফারুক হাসান তুহিন, প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের (১৯৯৩-১৯৯৭) দায়িত্ব পালন করেছেন।