ঢাকা ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেক সৎ বান্দা আল্লাহ পাকের নিকটবর্তী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৩১ বার

হাওর বাত্রা ডেস্কঃ পরম করুণাময় ও দয়াময় আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করা ও অস্তিত্ব দান করার ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তিনি সকল বস্তু সৃষ্টি করেন এবং তিনি অস্তিত্বহীনকে অস্তিত্ব দান করেন। আল কোরআনে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। যথা (ক) ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কোনো বস্তুকে অস্তিত্ব দানের ইচ্ছা করলে তিনি বলেন ‘কুন’ (হয়ে যাও) সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসিন : আয়াত ৮২)। (খ) এরশাদ হয়েছে, আল্লাহপাক ব্যতীত অন্য কোনো ¯্রষ্টা আছে কি? তিনি তোমাদের আসমান ও যমীন হতে রিযিক প্রদান করেন। (সূরা ফাতির : আয়াত ৩)। (গ) এরশাদ হয়েছে, তিনি আল্লাহ সৃষ্টিকারী অস্তিত্বদানকারী আকার-অবয়ব ও চিত্র অঙ্কনকারী। (সূরা হাশর : আয়াত ২৪)। (ঘ) মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে, অস্তিত্ব দান করা, সৃষ্টি করা, উদ্ভাবন করা, আবিষ্কার করা ইত্যাদি মহান আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি। আকল অর্থাৎ জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক এবং নকল অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, মহান রাব্বুল আলামিন সৃষ্টি জগতের একমাত্র ¯্ষ্টা, অস্তিত্ব দানকারী ও রূপায়ণকারী। (শরহে আকাইদ : ৬৪)।আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরশোপরি সমাসীন। তবে তার জন্য স্থান ও আসমানের আবশ্যকতা নেই। কেননা, তিনি স্থান ও আসন হতে মুক্ত ও পবিত্র। তাছাড়া তার আরশে সমাসীন হওয়ার রূপ ও ধরন কী এবং কেমন তা আমাদের জানা নেই। মূলত আরশ এবং গাইরে আরশ সকল সৃষ্টি জগতের তিনি একক সংরক্ষক, বিধায়ক ও পরিচালনাকারী।এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে পরিষ্কারভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যথা (ক) এরশাদ হয়েছে, রহমান তথা আল্লাহ আরশোপরি সমাসীন। (সূরা তাহা : আয়াত ৫)। (খ) আল্লাহপাক আরশ ও অন্য সবকিছু হতে মুখাপেক্ষীহীন। আরশ এবং তার ওপরে-নিচে যা কিছু আছে সব কিছুকে তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন। সৃষ্টিকুল তাকে বেষ্টন করতে সম্পূর্ণ অক্ষম। (আকীদায়ে তাহাবিয়্যা মায়াশ শহরে : পৃষ্ঠা ২৮০)। (গ) একবার ইমাম মালেক রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আরশের ওপর আল্লাহপাকের আরোহণ ও অবস্থানের অর্থ কি? তিনি প্রশ্নের এক চমৎকার উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন, আল্লাহ আরশোপরি সমাসীন এ কথাটি জ্ঞাত বা জানা হয়েছে। কারণ, তিনি এ কথাটি জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সমাসীন এর রূপ, কাইফিয়ত ও অবস্থা অজ্ঞাত। কারণ, তিনি এ বিষয়ের বিশ্লেষণ প্রদান করেননি। সুতরাং এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা বিদআত। কিন্তু এর প্রতি ঈমান আনয়ন করা অপরিহার্য দায়িত্ব।মহান রাব্বুল আলামীন সঙ্গদান ও সান্নিধ্যদানের গুণে গুণান্বিত ও বিভূষিত। আল্লাহপাক সাথে আছেন এর অর্থ হলো, তিনি স্বীয় জ্ঞান, দর্শন, শ্রবণ এবং বেষ্টনের দিক থেকে মানুষ ও সকল সৃষ্টির সাথে আছেন। একে সাধারণ সঙ্গদান বা ব্যাপক সঙ্গদান বলে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআন পরিষ্কারভাবে পথ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথে আছেন, তিনি তোমাদের আমল বা কাজ প্রত্যক্ষ করেন। অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি সর্বদা সৃষ্টির সাথে আছেন। (সূরা নিসা : আয়াত ১০৮)।
এই আয়াতে কারীমার মর্মের প্রতি লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে, সকল সৃষ্টিকুল সময় ও সুযোগমতো মানুষ থেকে আত্মগোপন করতে পারে অথবা মানুষও অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে আত্মগোপন বা পলায়ন করতে পারে। কিন্তু আল্লাহপাক থেকে আত্মগোপন করতে পারে না। কেননা, তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞাতা। আর দ্বিতীয় প্রকার সঙ্গদান হলো, বিশেষ সঙ্গদান। এই সঙ্গদান কেবলমাত্র মুমিন পুণ্যকর্মশীলদের জন্য নির্ধারিত। তখন ‘আল্লাহ সাথে আছেন’ অর্থ হলো, তিনি নেক আমলকারী ঈমানদার বান্দাদের সাহায্য করেন, হেফাজত করেন, ভালোবাসেন। এই হেফাজত, সাহায্য ও ভালোবাসার দুয়ার আল্লাহপাক সর্বদাই অবারিত রেখেছেন।এ প্রসঙ্গে বহু আয়াত আল কোরআনে আছে। তন্মধ্যে একটি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক মুমিনদের রক্ষা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল দাগাবাজ কাফেরদের কখনো ভালোবাসেন না। (সূরা আল হাজ্জ : আয়াত ৩৮)। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, রাসূল সা. বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা থাম, নিশ্চয়ই তোমরা কোনো বধিরকে অথবা কোনো অনুপস্থিতকে আহ্বান করছ না। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন। তিনি সর্বশ্রোতা, অতি নিকটে। (সহীহ বুখারী : ১/৪২০)।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নেক সৎ বান্দা আল্লাহ পাকের নিকটবর্তী

আপডেট টাইম : ০৮:৩৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বাত্রা ডেস্কঃ পরম করুণাময় ও দয়াময় আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করা ও অস্তিত্ব দান করার ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তিনি সকল বস্তু সৃষ্টি করেন এবং তিনি অস্তিত্বহীনকে অস্তিত্ব দান করেন। আল কোরআনে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। যথা (ক) ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কোনো বস্তুকে অস্তিত্ব দানের ইচ্ছা করলে তিনি বলেন ‘কুন’ (হয়ে যাও) সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসিন : আয়াত ৮২)। (খ) এরশাদ হয়েছে, আল্লাহপাক ব্যতীত অন্য কোনো ¯্রষ্টা আছে কি? তিনি তোমাদের আসমান ও যমীন হতে রিযিক প্রদান করেন। (সূরা ফাতির : আয়াত ৩)। (গ) এরশাদ হয়েছে, তিনি আল্লাহ সৃষ্টিকারী অস্তিত্বদানকারী আকার-অবয়ব ও চিত্র অঙ্কনকারী। (সূরা হাশর : আয়াত ২৪)। (ঘ) মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে, অস্তিত্ব দান করা, সৃষ্টি করা, উদ্ভাবন করা, আবিষ্কার করা ইত্যাদি মহান আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি। আকল অর্থাৎ জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক এবং নকল অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, মহান রাব্বুল আলামিন সৃষ্টি জগতের একমাত্র ¯্ষ্টা, অস্তিত্ব দানকারী ও রূপায়ণকারী। (শরহে আকাইদ : ৬৪)।আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরশোপরি সমাসীন। তবে তার জন্য স্থান ও আসমানের আবশ্যকতা নেই। কেননা, তিনি স্থান ও আসন হতে মুক্ত ও পবিত্র। তাছাড়া তার আরশে সমাসীন হওয়ার রূপ ও ধরন কী এবং কেমন তা আমাদের জানা নেই। মূলত আরশ এবং গাইরে আরশ সকল সৃষ্টি জগতের তিনি একক সংরক্ষক, বিধায়ক ও পরিচালনাকারী।এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে পরিষ্কারভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যথা (ক) এরশাদ হয়েছে, রহমান তথা আল্লাহ আরশোপরি সমাসীন। (সূরা তাহা : আয়াত ৫)। (খ) আল্লাহপাক আরশ ও অন্য সবকিছু হতে মুখাপেক্ষীহীন। আরশ এবং তার ওপরে-নিচে যা কিছু আছে সব কিছুকে তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন। সৃষ্টিকুল তাকে বেষ্টন করতে সম্পূর্ণ অক্ষম। (আকীদায়ে তাহাবিয়্যা মায়াশ শহরে : পৃষ্ঠা ২৮০)। (গ) একবার ইমাম মালেক রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আরশের ওপর আল্লাহপাকের আরোহণ ও অবস্থানের অর্থ কি? তিনি প্রশ্নের এক চমৎকার উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন, আল্লাহ আরশোপরি সমাসীন এ কথাটি জ্ঞাত বা জানা হয়েছে। কারণ, তিনি এ কথাটি জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সমাসীন এর রূপ, কাইফিয়ত ও অবস্থা অজ্ঞাত। কারণ, তিনি এ বিষয়ের বিশ্লেষণ প্রদান করেননি। সুতরাং এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা বিদআত। কিন্তু এর প্রতি ঈমান আনয়ন করা অপরিহার্য দায়িত্ব।মহান রাব্বুল আলামীন সঙ্গদান ও সান্নিধ্যদানের গুণে গুণান্বিত ও বিভূষিত। আল্লাহপাক সাথে আছেন এর অর্থ হলো, তিনি স্বীয় জ্ঞান, দর্শন, শ্রবণ এবং বেষ্টনের দিক থেকে মানুষ ও সকল সৃষ্টির সাথে আছেন। একে সাধারণ সঙ্গদান বা ব্যাপক সঙ্গদান বলে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআন পরিষ্কারভাবে পথ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথে আছেন, তিনি তোমাদের আমল বা কাজ প্রত্যক্ষ করেন। অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি সর্বদা সৃষ্টির সাথে আছেন। (সূরা নিসা : আয়াত ১০৮)।
এই আয়াতে কারীমার মর্মের প্রতি লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে, সকল সৃষ্টিকুল সময় ও সুযোগমতো মানুষ থেকে আত্মগোপন করতে পারে অথবা মানুষও অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে আত্মগোপন বা পলায়ন করতে পারে। কিন্তু আল্লাহপাক থেকে আত্মগোপন করতে পারে না। কেননা, তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞাতা। আর দ্বিতীয় প্রকার সঙ্গদান হলো, বিশেষ সঙ্গদান। এই সঙ্গদান কেবলমাত্র মুমিন পুণ্যকর্মশীলদের জন্য নির্ধারিত। তখন ‘আল্লাহ সাথে আছেন’ অর্থ হলো, তিনি নেক আমলকারী ঈমানদার বান্দাদের সাহায্য করেন, হেফাজত করেন, ভালোবাসেন। এই হেফাজত, সাহায্য ও ভালোবাসার দুয়ার আল্লাহপাক সর্বদাই অবারিত রেখেছেন।এ প্রসঙ্গে বহু আয়াত আল কোরআনে আছে। তন্মধ্যে একটি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক মুমিনদের রক্ষা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল দাগাবাজ কাফেরদের কখনো ভালোবাসেন না। (সূরা আল হাজ্জ : আয়াত ৩৮)। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, রাসূল সা. বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা থাম, নিশ্চয়ই তোমরা কোনো বধিরকে অথবা কোনো অনুপস্থিতকে আহ্বান করছ না। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন। তিনি সর্বশ্রোতা, অতি নিকটে। (সহীহ বুখারী : ১/৪২০)।