হাওর বার্তা ডেস্কঃ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ আইনে চালকেরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা জানালেও নতুন সড়ক পরিবহন আইনের জেরে যানবাহনের মালিক-চালকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এর কার্যালয়ে। বাড়তি এই চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ জানিয়েছে আইন কার্যকরের আগে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছেন তারা। আগামী সপ্তাহে মামলা-জরিমানার নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা হবে।
গাড়ির ডিজিটাল নাম্বর প্লেট, ফিটনেস সনদ ও লাইসেন্স সংগ্রহ করতে চালকেরা ভিড় করছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্টরা জানান নতুন আইন হওয়ার আগে এত লম্বা লাইন হতো না। নতুন আইনে শাস্তি বেশি হওয়ায় পরিবহন মালিক ও চালকের মধ্যে একধরনের ভয় কাজ করছে। তাদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। এ কারণে সব ধরনের গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স সংগ্রহ ও আবেদন করতে বিআরটিএ-তে মানুষের ভিড় অনেক বেড়েছে।
বিআরটিএর আনসার ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ওয়াহেদ মিয়া জানান, বিআরটিএ-তে এসে মানুষ যেন সঠিক সেবা পায় সেজন্য আমরা কাজ করছি, অনেক সময় ভেতরে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। তবে গত দুই দিনে ১৪-১৫ জনকে ধরে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নতুন আইন বিষয়ক বাস মালিক-শ্রমিক সমিতি, চালক ও হেলপারদের নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। মঙ্গলবার তিনটি সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ।
দুপুর সাড়ে এগারোটায় ট্রাফিক উত্তর বিভাগের আওতাধীন আব্দুল্লাহপুরে এবং সাড়ে বারোটায় এয়ারপোর্ট ট্রাফিক জোনের এয়ারপোর্ট ট্রাফিক বক্সের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বলেন, চালক ও হেলপারদের নির্ধারিত বাস স্টপেজে বাস থামানো, চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখা, ঘুমঘুম চোখে গাড়ি না চালানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি না চালানো, গাড়ি চালানোর আগে গাড়ির অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক আছে কিনা তা দেখে নেয়া, মহাসড়কে দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালানো ও পথচারীদের রাস্তা পারাপারে (ফুটওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার) ইত্যাদি বিষয় মেনে চলার জন্য চালক, হেলপার ও পথচারীদের আহ্বান জানান হয়েছে।
ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ প্রতি সকলকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ জানান।
সচেতনতা কর্মসূচিতে ঢাকা সিটি-বাস মালিক, চালক ও হেলপারসহ প্রায় ৭০/৮০ জন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সিটি-বাস মালিক, চালক, হেলপার ও যাত্রীদের মাঝে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের প্রকাশিত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে গুলিস্তান, হাইকোর্ট, শাহবাগ, চানখারপুল ও আজিমপুর এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালায় ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগ।
লালবাগ ট্রাফিক জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার মনতোষ বিশ্বাস বলেন, সকালে জনসাধারণ, গাড়ির চালক ও কন্ডাক্টরদের সচেতন করতে এ প্রচারণা চালানো হয়।
এদিকে নতুন ট্রাফিক আইন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে চালকেরা। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের আব্দুল রহিম নামের বাসচালক বলেন, নতুন আইনে জরিমানা বেশি করা হয়েছে বলে শুনেছি। এমন হলে তো বসত ভিটা বিক্রি করতে হবে।
বাইক চালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, নতুন আইনকে সাধুবাদ জানাই। তবে ঢাকা সিটির ভেতর যদি শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোর মোটর বাইক অনুমোদন দেয়া যেত সেটা অনেক সুবিধা বয়ে আনত।
নতুন আইন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘নতুন আইন সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা করা দরকার, সংশ্লিষ্টরা অনেকেই বিষয়টি জানে না। তবে সঠিকভাবে আইন বাস্তবায়ন করলে সুফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চলতি সপ্তাহে নতুন আইনে কোনো মামলা হবে না। আইন কার্যকরের আগে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছে ডিএমপি। সচেতন করা হচ্ছে, প্রচারণা চালানো হচ্ছে, লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মামলা-জরিমানার নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা হবে।