হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী ৭ নভেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার। অবসরে যাওয়ার চারদিন আগে তিনি রোববার (৩ নভেম্বর) আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) বোর্ড সভা ডেকেছেন।
শুধু তা-ই নয়, সভার আলোচ্যসূচিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বহাল, শাস্তি মওকুফ ছাড়াও নিয়ম ভেঙে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় রয়েছে।
রেকর্ড সংখ্যক ১৮টি আলোচ্যসূচির সভাটি রোববার বিকেল ৩টায় সচিবালয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। পিডিবিএফের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত সভার নোটিশ থেকে জানা যায়, সভায় সভাপতিত্ব করবেন বোর্ড অব গভর্নর্সের সভাপতি ও সমবায় সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার।
বোর্ড মিটিং ডাকাসহ পিডিবিএফের কার্যক্রমে সচিবের হক্ষক্ষেপ না করতে আদালতের রুল রয়েছে।
অবসরে যাওয়ার চারদিন আগে আদালতের নির্দেশনা ভেঙে এত বিতর্কিত আলোচ্যসূচি নিয়ে পিডিবিএফের বোর্ড সভা করার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব জিনিস বাদ দেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে আমি সভা করছি, এটাই লিখে দেন।’
পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) ‘পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৯৯’ এর অধীনে পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব পদাধিকার বলে এ প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব গভর্নর্সের সভাপতি।
পিডিবিএফ আইনানুযায়ী সচিবের বিভিন্ন হস্তক্ষেপের কারণে নিরুপায় হয়ে গত ২৭ মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে রিট মামলা (যার নম্বর ৬০৬৫/১৯) করেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মদন মোহন সাহা। উচ্চ আদালত শুনানির পর বোর্ড সভা বন্ধসহ বেআইনি হস্তক্ষেপের বিষয়ে রুল জারি করেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সচিব কামাল উদ্দিনের পক্ষে আপিল করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানির পর ১৬ জুন আপিল বিভাগ চেয়ারম্যানের পক্ষে করা আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশটি বহাল রাখার নির্দেশনা দেন।
এছাড়া পিডিবিএফ আইন অনুযায়ী, বোর্ড মিটিং ডাকার এখতিয়ার বোর্ডের সদস্য সচিব বা পিডিবিএফ এমডির। কিন্তু আইন ভেঙে গত ৫ আগস্ট বিশেষ বোর্ড সভা এবং ২৪ আগস্ট ৭৬তম বোর্ড সভা ডাকেন সমবায় সচিব।
৩ অক্টোবরের সভার নোটিশ থেকে জানা গেছে, সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে- পিডিবিএফের প্রাক্তন অতিরিক্ত পরিচালক আ আ ম আনোয়ারুজ্জামানের আপিল আবেদন পুনর্বিবেচনা করা। মন্ত্রণালয়ের দুটি তদন্ত টিম তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আনোয়ারুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে লেখা এক চিঠিতে পিডিবিএফ সৌর প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং সাবেক প্রকল্প ব্যবস্থাপক আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সৌরশক্তি প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। পরে এর পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিচ্যুত হন আনোয়ারুজ্জামান। পরে তিনি চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেন।
শেষ মুহূর্তে সচিব সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ওই কর্মকর্তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় শাস্তি হিসেবে কিশোরগঞ্জের সহকারী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেনকে পদাবনতি করে সিনিয়র মাঠ কর্মকর্তা করা হয়। তার শাস্তিও মওকুফের আবেদন উঠছে সমবায় সচিবের শেষ সভায়।
দুর্নীতির দায়ে উপ-পরিচালক মো. শফিউল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট বাতিল করা হয়। তার শাস্তিও মওকুফের আবেদন উঠছে রোববারের সভায়।
যুগ্ম পরিচালক মনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তাকেসহ যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম, সাহেদুর রহমান খান, রাশেদুজ্জামানের অতিরিক্ত পরিচালক পদে পদোন্নতির প্রস্তাব উঠছে রোববারের বোর্ড সভায়। যদিও এদের চেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন, তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়নি বলে পিডিবিএফের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।
এছাড়া নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত পরিচালক মো. সোলেমানকে পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তাবও উঠছে সভায়। পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য অতিরিক্ত পরিচালক পদে পাঁচ বছর চাকরি করার বিধান থাকলেও তিনি তিন বছর ধরে এ পদে আছেন।
আলোচ্যসূচির মধ্যে আরও আছে, প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক জুলাই/২০১৯ মাসে প্রদত্ত পদোন্নতি পর্যালোচনা এবং গ্রেডেশন তালিকা চূড়ান্তকরণ বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; পিডিবিএফ কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা সংশোধন; পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ ও চাকরি প্রবিধানমালা অনুমোদন; পিডিবিএফের পদোন্নতি নীতিমালা অনুমোদন; ‘দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৯৯’ সংশোধন; পিডিবিএফ প্রধান কার্যালয়ের জন্য জমি/বাড়ি ক্রয়; পিডিবিএফ সম্প্রসারণ প্রকল্পের কর্মচারীদের চাকরিকাল গণনাসহ পিডিবিএফে আত্মীকরণ; পিডিবিএফের দৈনিক ভিত্তিক/চুক্তি ভিত্তিক/পিডিবিএফ সৌরশক্তি প্রকল্পের কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ বিষয়ে পর্যালোচনা; নিয়োগের ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা অন্তর্ভুক্তি।
বিবিধ আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাপস কান্তি চন্দের অপরাধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; পিডিবিএফ কর্তৃক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি বাবদ ব্যয় ব্যক্তিগত দায় থেকে অব্যাহতি।
জাগো নিউজ