হাইভোল্টেজ অ্যাকশন আসছে দুর্নীতি দমন কমিশন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘হাইভোল্টেজ’ অ্যাকশনে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে একজন পরিচালকের নেতৃত্বে আরো একটি টিম গঠন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এ টিম আরো অন্তত: ১৯ জনের বিরুদ্ধে শিঘ্রই অনুসন্ধানে নামবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ইতোমধ্যেই তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অ্যাকাউন্টে স্থগিত করবে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের দেশত্যাগে জারি করবে নিষেধাজ্ঞা। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।

তবে দুদকের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনোকা-ে জড়িতদের নিয়ে নতুন কোনো তালিকা করছে না দুদক। ৪৩ জনের যে তালিকা রয়েছে তাতেই যুক্ত হচ্ছে নতুন কিছু নাম। এর মধ্যে জোটের একজন শরীক নেতা ও ঢাকা থেকে নির্বাচিত এমপি, সরকারদলীয় তিনজন সাবেক মন্ত্রী, নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত একজন সরকারদলীয় এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা, যুবলীগের একজন সাবেক শীর্ষ নেতা, ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা, কয়েকজন সরকারদলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, দু’জন সাবেক আমলা, মহাজোটের বিগত সরকারের একজন মন্ত্রী, সদ্য ওএসডি হওয়া একজন আমলা, একজন প্রকৌশলী রয়েছেন। এদের কেউ কেউ সরাসরি ক্যাসিনো থেকে আর্থিক সুবিধাভোগী। কয়েকজন রয়েছেনÑ দখল, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতার দায়ে অভিযুক্ত। সরকার ও দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তালিকা করে। ক্যাসিনো ছাড়াও গত ১১ বছরে পদ-পদবি ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তালিকা করা হয় তাদেরও। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তালিকা ধরে সম্প্রতি দুদকও মাঠে নামে। একজন পরিচালকের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করে। টিমটি ইতোমধ্যে টেন্ডারবাজির সঙ্গে যুক্ত কথিত যুবলীগ নেতা জি. কে. শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলা করেছে ক্যাসিনোকা-ের সঙ্গে জড়িত খালেদ মাহমুদ ভুইয়ার বিরুদ্ধে। এছাড়া সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সরকারদলীয় এমপি শামশুল হক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভুইয়া, তাদের দুই সহযোগী হারুনুর রশিদ, আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, তার সহযোগী এনামুল হক আরমান, সাবেক যুবলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভুইয়া, তার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান), একেএম মমিনুল হক সাঈদ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, কাকরাইলস্থ জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন, সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অনুন্ধান চালাচ্ছে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় রেকর্ডপত্র সংগ্রহে ২৪টি দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়ে তাদের সম্পদ বিবরণী চাইবে দুদক।

এ প্রক্রিয়া চলমান থাকতেই আরো ‘হাইপ্রোফাইল’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে মাঠে নামছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর মধ্যে সরকারদলীয় একাধিক সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন। ব্যাংকের অনুমোদন নেয়া, ওই জনবল নিয়োগের নামে অর্থ গ্রহণ, ব্যাংকের আমানত থেকে ঋণ গ্রহণ, কর্মকর্তাদের অর্থলোপাটের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন একজন সাবেক মন্ত্রী। গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে দুদক তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেক সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন ইস্যুতে শ্রমিকদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেয়া, শ্রমিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরকারের কাছ থেকে দাবি-দাওয়া আদায় এবং পরে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া, রিয়েল এস্টেটের নামে অভিনব পদ্ধতিতে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং মন্ত্রী থাকাকালে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। সরকারি দলের সম্পাদকীয় পদে থাকা আরেকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে হাইব্রিডদের কাছে দলীয় পদ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনেক তথ্য দেন গোয়েন্দা সংস্থাকে। আরেক সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্বে থাকাকালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পাওয়ায় এখন রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের এমপি’ বিরুদ্ধে রয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। এছাড়া ভূমি দস্যুতা, দুর্নীতিবাজ দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রারদের অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে অন্য যেকোনো অভিযোগই থাকুক না কেন দুদক শুধু তাদের অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, সরকারি অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ, অর্থ পাচারের অংশটুকু অনুসন্ধান করবে। বাকি অপরাধের তদন্ত করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য শাখা।

হাইভোল্টেজ কার কার বিষয়ে দুদক কাজ করছেÑ জানতে চাইলে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত ‘ইনকিলাব’কে বলেন, দুদক আইনে ‘হাইভোল্টেজ’ বলে কিছু নেই। অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ পেলে যে কারও বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান করতে পারে। এটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর