আবার এলো ভর্তি মৌসুম সরকারি হাইস্কুলে এবার এমসিকিউতে পরীক্ষা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বছর ঘুরে আবার এসেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘ভর্তি-মৌসুম’। প্রতিবছর নভেম্বরে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।

চলে ডিসেম্বর অবধি। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন নেয়া শুরু হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ভর্তির সার্কুলার জারি করা হবে। রাজধানীর অন্য বেসরকারি স্কুলগুলোয়ও নভেম্বরের প্রথমদিকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে।

সরকারি হাইস্কুলের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে ডিসেম্বরে। তবে ইতিমধ্যে ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এসব স্কুলে লিখিত পরীক্ষার বদলে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কোটা ২ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই খসড়া নীতিমালা পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, বছরের শেষের দিকে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকের পেরেশানি নতুন নয়। বিষয়টি সামনে রেখে সরকার প্রতিবছর জনবান্ধব নীতি ও কৌশল তৈরি করে থাকে। এবারও আমরা ভর্তি মৌসুম সামনে রেখে নীতিমালা তৈরি করছি। ইতিমধ্যে সরকারি স্কুলের নীতিমালার খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি বিদ্যালয়ের জন্য নীতিমালার খসড়া তৈরির কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্কুলে ভর্তি নিয়ে রীতিমতো অভিভাবকদের মধ্যে দারুণ স্নায়ুচাপ তৈরি হয়ে থাকে। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরে নামকরা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখা যায়। এ কারণে স্কুলের ভর্তি কার্যক্রমে মন্ত্রণালয়ও জড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ভর্তি নীতিমালা হচ্ছে।

প্রতিবছর ভর্তি নিয়ে দু’ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে- ঘোষিত আসনের তুলনায় অতিরিক্ত ভর্তি। আরেকটি, ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। অতিরিক্ত ভর্তির ক্ষেত্রে অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগ আছে।

এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ঘষামাজা করে শিক্ষার্থী ভর্তির মতো জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে। ফলে এসব নৈরাজ্য ঠেকাতে মন্ত্রণালয় ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর মধ্যে আছে- গতবছর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নতুন বছরে অতিরিক্ত ভর্তি প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ দুটি বিষয় এ বছর ভর্তি কার্যক্রমের প্রথমদিন থেকে মনিটরিং করবে মাউশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নীতিমালায় এবার সব সরকারি হাইস্কুলে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব আছে। এ ধরনের স্কুলে মোট আসনের ৫৯ শতাংশ কোটা ছিল। এগুলো হচ্ছে- ‘এলাকা’, ‘সরকারি প্রাইমারি স্কুল’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘প্রতিবন্ধী’ এবং ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী’ কোটা।

স্কুলে আবেদনের ফি বাড়ানোর কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানা গেছে। এর সঙ্গে এবার বাড়বে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সংরক্ষিত ৫ শতাংশ এবং শিক্ষা বিভাগের জন্য আরও ১ শতাংশ।

সরকারি এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর ঢাকায় গড়ে ২ লাখের বেশি শিশু প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু মাত্র ৪৫-৫০ হাজার শিশু পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। অপরদিকে ঢাকা শহরে প্রায় অর্ধলাখ কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে।

আছে তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অবশ্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলো অভিভাবকদের পছন্দের বিচারে সামনের দিকে নেই। তবে এসব স্কুল আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।

সম্প্রতি আলাপকালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার স্কুলগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হবে। পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলের প্রতি এলাকাবাসীকে আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকার স্কুলের পর বাইরের স্কুলগুলো নিয়েও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা বিচারে হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্তর থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে রাজধানীর বেশির ভাগ সরকারি ও কিছু বেসরকারি হাইস্কুল পছন্দের শীর্ষে। সে কারণে ঢাকার ৪৫টি সরকারি হাইস্কুল এবং অর্ধশতাধিক নামকরা বেসরকারি হাইস্কুলে অভিভাবকরা ভর্তি মৌসুমে একপ্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোয় সরকারি হাইস্কুল অভিভাবকদের কাছে পছন্দের বিচারে শীর্ষে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল আবেদন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠান হাতে হাতে আবার কোনোটিতে অনলাইনে আবেদন করতে হচ্ছে। অভিভাবকদের পছন্দের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন ২৩ অক্টোবর ভর্তির সার্কুলার জারি করছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া।

বেসরকারি হাইস্কুলে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, ৬ ও এর বেশি বয়সীরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারছে। এর কম বয়সীদেরও বিভিন্ন স্কুল ভর্তি নিচ্ছে। সাধারণত রাজধানীর বিখ্যাত ও মানসম্মত স্কুলের বেশির ভাগে প্রাক-প্রাথমিক স্তর আছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে কোথাও শিশু শ্রেণি আবার কোথাও প্লে বা নার্সারি স্তর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। এমন স্কুলগুলোর একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত এক একটি স্কুলের নির্দিষ্ট দর্শন আছে। শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো করে ছোট থেকেই গড়ে তুলতে কেউ কেউ প্রথম শ্রেণির আগে থেকে ভর্তি নেয়। আমরাও শিশুশ্রেণিতে শিক্ষার্থীর এন্ট্রি পয়েন্ট করেছি।’

তিনি বলেন, এবার কেজি স্তর থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে এবং কোনো কোনো শ্রেণিতে ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি নেয়া হবে। ২৩ অক্টোবর শেষ হচ্ছে এই স্কুলে অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম।

২৬ অক্টোবর অনলাইন আবেদনের প্রিন্ট কপি জমা দিতে হবে স্কুলে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে এখনও ভর্তির আবেদন নেয়ার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা।

উইলস লিটল স্কুল ও কলেজেও এখন পর্যন্ত আবেদন নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন জানান, আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর