শেখ হাসিনার কাছে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা ব্যাপক বেড়েছে। দলের সুবিধাবাদীদের কাছে কোনঠাসা হয়ে থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করছে যে, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলে পরিণত হচ্ছিল সেখান থেকে উত্তরন করা যাবে। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বাড়বে।

ঢাকা এবং কেন্দ্রে এই অভিযান নিয়ে অনেক অস্বস্তি থাকলেও তৃণমূল এই অভিযানে অত্যন্ত খুশি। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই সারাদেশ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী, অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন অপকর্মকারীদের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। এই অপকর্মের ফিরিস্তি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাচ্ছিল। কিন্তু তাতে লাভ হবে না ভেবে এখন সেই অভিযোগ পাঠাচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

প্রধানমন্ত্রীর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেছেন, যদিও প্রথমদিকে এই অভিযোগের সংখ্যা কম ছিল। ক্রমশ এই অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী এই অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া ও তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে যে অভিযোগ আসবে তা ফাইলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তার সময়সুযোগ বুঝে অভিযোগগুলোতে নজর দেবেন। যে অভিযোগগুলো আরো তদন্তের দরকার, তা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যেটা সত্য মনে করছেন, তা ব্যক্তিগত ডাইরীতে টুকে রাখছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এই অভিযোগগুলো আগামী কাউন্সিলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তৃণমূল থেকে যে ধরণের অভিযোগ আসছে তা মূলত দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং দলের ভাবমূর্তী নষ্ট সংক্রান্ত। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, একক অভিযোগের বদৌলতে গোষ্ঠীবদ্ধ অভিযোগ বেশি আসছে। একজন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি বা প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলবেধে অভিযোগনামা পাঠাচ্ছেন। এই সমস্ত অভিযোগের পক্ষে দলিলপত্র, প্রমানাদি হাজির করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠসূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। প্রায় দুই শতাধিক অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসেছে। একই এমপির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেক অভিযোগকারীরা তাদের নিজেদের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। গত দশ বছরে কিভাবে তারা দলে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। কিভাবে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। সেটিও তারা উল্লেখ করছেন। পাশাপাশি কারা কারা দলের ভাবমূর্তী নষ্ট করছেন এবং কি কি ধরণের সন্ত্রাস এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড করছেন সে ব্যাপারে তথ্য প্রমাণও দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের যারা অভিযোগ পাঠিয়েছেন তারা স্বীকার করেছেন দলে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কাউকেই বিশ্বাস করেন না।  এজন্য তারা এই বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিচ্ছেন। দিনাজপুর থেকে একজন তৃণমূলের নেতা জানিয়েছেন যে, এই অভিযোগগুলো তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদককে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কাজেই তারা এখন অনন্যোপায় হয়েই শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ পেশ করছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাই আমাদের আশা ভরসা। তিনি ছাড়া তৃণমূলের দিকে তাকানোর কেউ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও তাঁর নিজস্ব টিম দিয়ে জানেন যে তৃনমূলের মধ্যে অনেক ক্ষোভ, হতাশা জমে ছিল এবং এই শুদ্ধি অভিযান ঘটানোর এটিই অনেক বড় কারণ বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো বলছে, শুধুমাত্র এই অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই নয় তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে এবং তৃণমূলের ক্ষমতায়ন করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেবেন বলে জানা গেছে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে যে, যেসমস্ত জেলাগুলোতে কোন্দল এবং বিভক্তি এবং অনুপ্রবেশকারীদের দাপট বেশি সেসবে তিনি সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে এসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের অভাব অভিযোগগুলো শুনবেন বলে জানা গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, যে অভিযোগগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাঁর সবই যে সত্য তা না। অনেক অভিযোগ আছে দলীয় কোন্দলের ফসল। একপক্ষ আরেকপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তারা অভিযোগ দিচ্ছেন। তবে অভিযোগ যাই হোক না কেন যারা আওয়ামী লীগে বিতর্কিত, যারা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাঁদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপরে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টিম এই ব্যাপারগুলো অনুসন্ধান করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করবে।

আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাঁদেরকে আগামী কাউন্সিলে রাখা হবে না এবং এই কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ আওয়ামী লীগ উপহার দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তারই প্রক্রিয়া হিসেবে এটি শুরু হচ্ছে।

সুত্র : বাংলা ইনসাইডার

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর