যেভাবে ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধিতে ভূষিত হন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  হাওরের কাদা-মাটি-জলে গড়াগড়ি খেয়ে তিনি বড় হয়েছেন। দুরন্ত শৈশবে মাটি স্পর্শ না করে এক নাগাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পানির উপর ভেসে ছিলেন। বর্ষার পানিতে সাঁতরে হাঁসের পিছনে ছুটতে ছুটতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফের হাঁস ধরে বাড়িতে গিয়েছেন। মিঠামইন বাজার থেকে কামালপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রায়ই সাঁতরে বাড়ি ফিরেছেন। শুকনো মৌসুমে প্রতিদিন নদী-ওপার করতেন অসংখ্যবার।

হাওরের জল-হাওয়ায় বেড়ে ‘ভাটির শার্দুল’ খ্যাত মো. আবদুল হামিদ আজ দেশের টানা দুইবারের প্রেসিডেন্ট। কিভাবে তিনি পেয়েছিলেন ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি? সেটি এতদিন ছিল অনেকেরই অজানা। সেই অজানা বিষয়টি এবার জানালেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।

এক সপ্তাহের কিশোরগঞ্জ সফরর প্রথম দিন বুধবার (৯ অক্টোবর) প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তাড়াইল উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নবনির্মিত স্বাধীনতা ‘৭১ ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ মাঠে তাড়াইল নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তাঁর বক্তব্যে জানান ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি পাওয়ার পিছনের কথা। অত্যন্ত সরল আর সহজাত ভঙ্গিতে তিনি উপাধিতে ভূষিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, তাড়াইলে আমার বহুকালের অনেক স্মৃতি রয়েছে। ছাত্রজীবনে সর্বপ্রথম তাড়াইলে আমি জনসভা করেছি। সেটা তাড়াইলের পুরুড়া হাইস্কুলে। ১৯৬৯ সালে তখন ছাত্র আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নিল। পুরুড়া হাইস্কুলের আব্দুর রাশিদ আমার কাছে এসে বললো, হামিদ ভাই, পুরুড়া হাইস্কুলে আমরা একটি জনসভা করতে চাই। তো আমরা তো ছাত্রসভা করেছি, জনসভা জীবনে করিনি। তখন রাশিদ বললো, ঢাকা থেকে বড় নেতা আনতে হবে। ’৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় ঢাকা থেকে কোন নেতা যে এখানে এসে মিটিং করবে, বক্তৃতা দেয়ার জন্য আসবে, সে পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব ছিল না।

তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহিউদ্দিন সাহেব। রাশিদকে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তুমি বড় নেতা খুঁজতেছো, আমাদের হামিদ কি কম বড় নেতা নাকি? তাকে নিয়ে যাও। একথা বলার পর রাশিদ বললো, টাইটেল কি দিবো? তিনি বললেন, নাম লেখবা, টাইটেল লাগবে কেন? আর যদি টাইটেল দিতে চাও লেখবা, ‘ভবিষ্যৎ মন্ত্রী’। আমি বললাম ‘ভবিষ্যৎ মন্ত্রী’ এটা কেন লেখবা, এটা লেখা যাবে না।

তখন মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, ব্যাটা, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের বঙ্গশার্দুল। তিনি তখন বঙ্গবন্ধু টাইটেল পাননি, তাঁকে বঙ্গশার্দুল ডাকা হতো। তোমাদের তাড়াইলও ভাটি, হামিদের বাড়িও ভাটি। সে হলো ‘ভাটির শার্দুল’।

প্রেসিডেন্ট স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই পুরুড়া হাইস্কুল মাঠে তখন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। সেখানে আমি একাই সোয়া দুই ঘন্টা বক্তৃতা দিয়েছিলাম। মিটিং শেষে যখন রাস্তায় মানুষজনের সাথে দেখা হয়, মুরুব্বীরাও তখন সালাম দেয় আর বলেন, ‘ভাটির শার্দুল’ সাব আপনি কেমন আছেন? তখন জানতাম না, ’৭০ এ আমি ইলেকশন করব।

’৭০ এ যখন ইলেকশন করলাম তখন দেখা গেল, পোস্টারের মধ্যেও একই টাইটেল। তখন আমি অ্যাডভোকেটও হইনি। পোস্টারে লেখা হয়, প্রার্থী ভাটির শার্দুল মো. আবদুল হামিদকে ভোট দিন। এই হয়ে গেলাম ‘ভাটির শার্দুল’। ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধিটা আমার তাড়াইল থেকেই পাওয়া, তাড়াইল থেকেই দেওয়া, তাড়াইল থেকেই শুরু।

প্রেসিডেন্ট ১৯৭০ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও তাড়াইল এই চারটি থানা। মিঠামইন তখন পূর্ণাঙ্গ থানা হয়নি। আমি ভোটের দিকে চার থানার মধ্যে তাড়াইলের প্রথম হয়েছিলাম। সুতরাং তাড়াইলের সাথে আমার আলাদা একটি সম্পর্ক রয়েছে। সারাজীবন এটা আমার মনে আছে এবং মনে থাকবে।

বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমি আপনাদের সহযোগিতা পেয়েছি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব দলের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। আমি আজকে এসেছি বক্তৃতা দেয়ার জন্য নয়, আপনাদের দেখার জন্য এসেছি। বক্তৃতা দেবেন যারা রাজনীতি করেন তারা। আমি এখন রাজনীতি করি না। আমি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে আজকে এসেছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর