ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুগল দেখে কাস্টমার কেয়ারে ফোন, গায়েব লাখ লাখ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৫০ বার

বাইরের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পালা। বেশ ক্লান্ত। তাই লোকাল বাসের চেয়ে ক্যাবই ভালো হবে। মোবাইল অ্যাপ দিয়ে ক্যাব বুক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু হচ্ছে না। ব্লক দেখাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে গুগলে সেই অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর খুঁজে ফোন করলেন।

কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভের সঙ্গে কথা হয়। জানা যায়, কখনো ক্যাব বুক করে ক্যানসেল করেছেন। ওই ক্যানসেলের জন্য নির্দিষ্ট টাকা জমা দিলেই ফের চালু হবে অ্যাপ। এগজিকিউটিভের কথা মতো সেই টাকা দেয়ার পরই দেখা গেল, অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা কয়েক মিনিটের মধ্যে গায়েব!

সম্প্রতি এভাবেই অ্যাকাউন্ট থেকে বহু টাকা গায়েব হয়ে গেছে কলকাতা এবং শহরতলির বহু মানুষের। এ ধরনের একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে।

নিউটাউনের বাসিন্দা মিশুক দাস ঠিক একইভাবে খুইয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তিনি বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, অসুস্থ বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করার চেষ্টা করি। কিন্তু বুক করতে গিয়ে ব্লক দেখায়। এরপরই তিনি গুগল সার্চ করে সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর জোগাড় করেন এবং সেখানে ফোন করেন।

তার দাবি, ফোন করতে কাস্টমার কেয়ার এগজিগিউটিভ বলেন, এর আগে আমি বুকিং ক্যানসেল করেছিলাম। তার জন্য আমাকে পাঁচ টাকা দিতে হবে এরপর তিনি ফোনে ওই এগজিকিউটিভের নির্দেশ মতো ‘এনি ডেস্ক’ (anydesk) নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন। পরে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্টার করে একটি এইপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস) আইডিতে নিজের ডেবিট কার্ড নথিভুক্ত করেন। তখন তিনি তার কার্ড নম্বর এবং সিভিভি নম্বরও দেন। মিশুকের দাবি, এরপরই দু’মিনিটের মধ্যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা গায়েব হয়ে যায়।

একইভাবে ভুয়ো অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে প্রায় ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন কেস্টপুরের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা আচার্য। তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে নিউটাউনে ছেলের স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাব ক্যাব বুক করি। নামার সময় দেখি, বুক করার সময় আমাকে যে ভাড়া জানানো হয়েছিল, তার থেকে ১১৪ টাকা বেশি দেখাচ্ছে ভাড়া। আমি অভিযোগ দায়ের করার জন্য গুগল থেকে নম্বর জোগাড় করে ক্যাব সংস্থার নামে দেয়া কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ তাকে বাড়তি টাকা তার অ্যাকাউন্টে ফেরত যাবে বলে নিশ্চিত করেন। এক্ষেত্রেও ওই এগজিগিউটিভের নির্দেশ মতো তিনি একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন এবং এইপিআই-তে ডেবিট কার্ডের তথ্য দেন। এরপরই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা গায়েব হয়ে যায়। শর্মিষ্ঠাও বিধাননগর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এছাড়া কলকাতার বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার এক ব্যবসায়ীও এই পদ্ধতিতে প্রতারিত হয়েছেন। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার এক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে এ রকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি।

শুধু অ্যাপ ক্যাবের নম্বর নয়, গুগল সার্চে আমাজনের মতো অন্যান্য সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর খুঁজে ফোন করে, অনেকে একই রকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বিধাননগর পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলো আদৌ ওই সংস্থার নম্বর নয়। ওগুলো সবই ভুয়া কাস্টমার কেয়ারের ফোন নম্বর। প্রতারকদের নম্বর।

পুলিশের ধারণা, এই নয়া প্রতারণার পিছনে রয়েছে কোন সংগঠিত চক্র। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোনো চক্র পরিকল্পনা মাফিক ভুয়া কাস্টমার কেয়ার নম্বরগুলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে তালিকার উপরের দিকে রাখছে। এর ফলে কেউ গুগলে সার্চ করলে, ভুয়া নম্বরগুলোই আগে আসছে। সেখানে ফোন করে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোন সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর পেতে হলে সেই সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা উচিত। তার আগে ভাল করে দেখে নেয়া দরকার, ওয়েবসাইটটি আসল কি না। ঠিক একইভাবে অজানা অ্যাপ ডাউনলোড করতেও বারণ করছেন সাইবার এক্সপার্টরা। তবে এই প্রতারণার পিছনে কারা, সেই সম্পর্কে এখনো পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গুগল দেখে কাস্টমার কেয়ারে ফোন, গায়েব লাখ লাখ টাকা

আপডেট টাইম : ১১:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯

বাইরের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পালা। বেশ ক্লান্ত। তাই লোকাল বাসের চেয়ে ক্যাবই ভালো হবে। মোবাইল অ্যাপ দিয়ে ক্যাব বুক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু হচ্ছে না। ব্লক দেখাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে গুগলে সেই অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর খুঁজে ফোন করলেন।

কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভের সঙ্গে কথা হয়। জানা যায়, কখনো ক্যাব বুক করে ক্যানসেল করেছেন। ওই ক্যানসেলের জন্য নির্দিষ্ট টাকা জমা দিলেই ফের চালু হবে অ্যাপ। এগজিকিউটিভের কথা মতো সেই টাকা দেয়ার পরই দেখা গেল, অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা কয়েক মিনিটের মধ্যে গায়েব!

সম্প্রতি এভাবেই অ্যাকাউন্ট থেকে বহু টাকা গায়েব হয়ে গেছে কলকাতা এবং শহরতলির বহু মানুষের। এ ধরনের একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে।

নিউটাউনের বাসিন্দা মিশুক দাস ঠিক একইভাবে খুইয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তিনি বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, অসুস্থ বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করার চেষ্টা করি। কিন্তু বুক করতে গিয়ে ব্লক দেখায়। এরপরই তিনি গুগল সার্চ করে সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর জোগাড় করেন এবং সেখানে ফোন করেন।

তার দাবি, ফোন করতে কাস্টমার কেয়ার এগজিগিউটিভ বলেন, এর আগে আমি বুকিং ক্যানসেল করেছিলাম। তার জন্য আমাকে পাঁচ টাকা দিতে হবে এরপর তিনি ফোনে ওই এগজিকিউটিভের নির্দেশ মতো ‘এনি ডেস্ক’ (anydesk) নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন। পরে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্টার করে একটি এইপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস) আইডিতে নিজের ডেবিট কার্ড নথিভুক্ত করেন। তখন তিনি তার কার্ড নম্বর এবং সিভিভি নম্বরও দেন। মিশুকের দাবি, এরপরই দু’মিনিটের মধ্যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা গায়েব হয়ে যায়।

একইভাবে ভুয়ো অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে প্রায় ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন কেস্টপুরের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা আচার্য। তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে নিউটাউনে ছেলের স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাব ক্যাব বুক করি। নামার সময় দেখি, বুক করার সময় আমাকে যে ভাড়া জানানো হয়েছিল, তার থেকে ১১৪ টাকা বেশি দেখাচ্ছে ভাড়া। আমি অভিযোগ দায়ের করার জন্য গুগল থেকে নম্বর জোগাড় করে ক্যাব সংস্থার নামে দেয়া কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ তাকে বাড়তি টাকা তার অ্যাকাউন্টে ফেরত যাবে বলে নিশ্চিত করেন। এক্ষেত্রেও ওই এগজিগিউটিভের নির্দেশ মতো তিনি একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন এবং এইপিআই-তে ডেবিট কার্ডের তথ্য দেন। এরপরই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা গায়েব হয়ে যায়। শর্মিষ্ঠাও বিধাননগর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এছাড়া কলকাতার বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার এক ব্যবসায়ীও এই পদ্ধতিতে প্রতারিত হয়েছেন। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার এক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে এ রকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি।

শুধু অ্যাপ ক্যাবের নম্বর নয়, গুগল সার্চে আমাজনের মতো অন্যান্য সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর খুঁজে ফোন করে, অনেকে একই রকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বিধাননগর পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলো আদৌ ওই সংস্থার নম্বর নয়। ওগুলো সবই ভুয়া কাস্টমার কেয়ারের ফোন নম্বর। প্রতারকদের নম্বর।

পুলিশের ধারণা, এই নয়া প্রতারণার পিছনে রয়েছে কোন সংগঠিত চক্র। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোনো চক্র পরিকল্পনা মাফিক ভুয়া কাস্টমার কেয়ার নম্বরগুলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে তালিকার উপরের দিকে রাখছে। এর ফলে কেউ গুগলে সার্চ করলে, ভুয়া নম্বরগুলোই আগে আসছে। সেখানে ফোন করে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোন সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর পেতে হলে সেই সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা উচিত। তার আগে ভাল করে দেখে নেয়া দরকার, ওয়েবসাইটটি আসল কি না। ঠিক একইভাবে অজানা অ্যাপ ডাউনলোড করতেও বারণ করছেন সাইবার এক্সপার্টরা। তবে এই প্রতারণার পিছনে কারা, সেই সম্পর্কে এখনো পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।