ঘুমের মধ্যে কোনো না কোনো সময় যৌন বিষয়ক স্বপ্ন দেখেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। কিন্তু তার মানে সেই মুহূর্তে মনে তীব্র যৌন আকাঙ্ক্ষা জেগেছে, এমন না-ও হতে পারে।
মনোবিদরা বলেন, স্বপ্ন হলো অবচেতনের জানালা। তবে সেই জানালায় উঁকি দিলে পয়লা দর্শনে অনেক সময়েই আসল অর্থ উদ্ধার করা যায় না। এমন হতেই পারে, তীব্র যৌন উন্মাদনাময় স্বপ্নের ভিত কোনও কামোত্তেজক উপাদানের মধ্যে আদৌ রাখা নেই।
ধরা যাক, স্কুলের শিক্ষিকার সঙ্গে যৌনমিলনের স্বপ্ন দেখল কোনো ছাত্র। মনোবিদদের ব্যাখ্যা, এক্ষেত্রে ওই শিক্ষিকার প্রতি কোনো যৌন আকর্ষণ নয় বরং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছেলেটির প্রবল অসন্তোষই এমন স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে। মনোবিদ হরিশ শেট্টি যৌন স্বপ্নের কয়েকটি বিশেষ দিক সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেছেন।
সবই মনের খেয়াল: স্বপ্নের মানে বোঝা দুরূহ কারণ একেক জনের ক্ষেত্রে তার অর্থ ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত কিছু মূল উপাদানের পরিবর্তন ঘটে না। যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি, তখন সারা দিন আমাদের মন কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে অবচেতন তা তুলে ধরে। সামাজিক বাধ্যবাধকতায় আটকে থাকা যৌন আকাঙ্খা অনেক সময় স্বপ্নের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। শেট্টির ব্যাখ্যা, ‘বয়ঃসন্ধির সময় যৌন ইচ্ছা প্রবল হয় এবং সুস্বাদু খাদ্য, আনন্দঘন চিন্তা বা পছন্দসই খেলাধুলোর মতো যে কোনও ভালো লাগা থেকেই স্বপ্নে যৌন ইচ্ছা জাগতে পারে।’
মানুষ কয়েকটি সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মায় যেমন- জন্মগ্রহণ, নিঃশ্বাস নেওয়া, খাদ্য গ্রহণ করা, বেদনা অনুভব করা, আনন্দ উপভোগ করা এবং যৌন কামনা। এর মধ্যে একমাত্র যৌন ইচ্ছাকেই সচেতন ভাবে রোখা যায়। শেট্টির মতে, ‘মানুষ তার যৌন কামনাকে অন্য পথে চালিত করতে শিখেছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পুরোহিতরা ধর্মাচরণের মাধ্যমে যৌন ইচ্ছা দমন করেন।’
নিষিদ্ধ চিন্তা: মনোবিদ শেট্টি জানিয়েছেন, সচেতন মন যে সমস্ত ঘটনা বা সেই সম্পর্কে চিন্তা করা অনুচিত মনে করে, অবচেতন সেই সমস্ত ‘নিষিদ্ধ’ বিষয়বস্তু উন্মুক্ত করে। স্বপ্নে রক্তপাত, প্রকাশ্যে উলঙ্গ হওয়া, সমকামিতার দৃশ্য দেখলে মনোবিদের সাহায্যে তা খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তিনি জানিয়েছেন, ‘এক সময় আমার কাছে এক রোগী এসেছিলেন যিনি প্রায়ই কলার কাঁদির স্বপ্ন দেখে আতঙ্কে মাঝরাতে জেগে উঠতেন। পরিণত বয়সেও তিনি অন্ধকার ভয় পেতেন এবং বিয়ে করার ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিলেন। ওঁর সঙ্গে কথা বলার পর জানা গেল, শৈশবে এক কাকা তাঁকে নিয়মিত যৌন পীড়ন করতেন।’
স্মৃতি কথা বলে: যদি একই স্বপ্ন বার বার দেখে আতঙ্ক জাগে এবং তা দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে তবে অবিলম্বে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আসলে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোনও পাপবোধ থেকেই এমন অবস্থা দাঁড়ায়। মনোবিদের কাজ, রোগীর মন থেকে সেই পাপবোধ মুছে ফেলা এবং তাঁর মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনুতাপের ভূত তাড়ানো। অনেক সময় অসুখী শৈশব স্মৃতি মনের গভীরে জমা থাকে যার থেকে পরবর্তীকালে অহেতুক আতঙ্ক, দুঃখ বা রাগ তৈরি হয়। এই সমস্ত অনুভূতি স্বপ্নের মাধ্যমে মুক্তি পায়। যৌন স্বপ্ন এই সমস্ত অবদমিত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবী অথবা অফিসের বসের সঙ্গে যৌন সংসর্গ: বন্ধু বা বসের চরিত্রের কোনও বৈশিষ্ট্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ এবং নিজের মধ্যে সেই গুণ ফুটিয়ে তোলার ইচ্ছা থেকেই এই স্বপ্নের সূত্রপাত।
প্রকাশ্যে যৌন মিলন: এই স্বপ্নের দু’টি অর্থ হয়। যদি স্বপ্নে দেখা ভিড়ের নজর ও মন্তব্য থেকে আত্মসচেতনতা তৈরি হয় তা হলে বুঝতে হবে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে লোকে কী ভাবছে সেই সম্পর্কে আপনি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কিন্তু যদি স্বপ্নের পরিস্থিতি আপনাকে তৃপ্ত করে তার অর্থ লাগামছাড়া যৌন জীবনের প্রতি আপনার তীব্র আসক্তি রয়েছে।
পরকীয়ার স্বপ্ন: যদি বিয়ের ঠিক আগে এমন স্বপ্ন দেখেন, তা হলে তা জীবনের আসন্ন পরিবর্তন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়। এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু স্থায়ী সম্পর্কে জড়িত থাকাকালীন অবৈধ যৌনতার স্বপ্ন দেখা মানে আপনার ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে, যা মনের ভিতর শূন্যতা তৈরি করেছে।
সমপ্রেমের স্বপ্ন: এই স্বপ্নে যা দেখা যায়, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল না-ই থাকতে পারে। স্বপ্নের অন্তর্নিহিত অর্থ, নিজের ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নারীসুলভ বা পুরুষসুলভ বৈশিষ্টগুলি সম্পর্কে আপনি গর্বিত। গর্ভবতীরা অনেক সময় সমপ্রেমের স্বপ্ন দেখেন কারণ এই সময় শরীরে নারীসত্তার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। গর্ভাবস্থায় সমপ্রেমের স্বপ্ন আসলে কোনও কামবিকৃতি অথবা যৌন মানসিকতা বদলের পরিচায়ক নয়, বরং এক নারীর পূর্ণতাপ্রাপ্তির উদযাপন।