ঢাকা ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

কাশ্মীরে কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২১৩ বার

(FILES) In this file picture taken on August 26, 2012, Kashmiri chefs butcher meat as they prepare dishes for a wedding reception in Srinagar. - India's decision in early August, 2019 to scrap Kashmir's autonomy and impose a ban on phone and internet communications has left the region reeling, cutting off its eight-million-strong population from the outside world. (Photo by RAVEENDRAN / AFP) / TO GO WITH India-Kashmir-Pakistan-marriage,FOCUS by Jalees Andrabi

বিয়ের সময় নির্ধারণের বছরখানেক পর আরশি নিসারের বিবাহ পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেল। অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের চাপিয়ে দেয়া যোগাযোগ অচলাবস্থা ও ধরপাকড়ে অতিথিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় এই বাগদত্তাকে তার বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে।

হিমালয় উপত্যকাটির বাসিন্দারা এখন ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ মেকআপ অনুষ্ঠান ও কনসার্টসহ ৭০০ অতিথি ধরতে পারে এমন শামিয়ানায় ১০ থেকে ১৫ পদের ভোজের আয়োজন করার কথা ছিল তার। কাশ্মীরিদের ঐতিহ্যানুসারে যেটি ওয়াজওয়ান নামে পরিচিত।-খবর এএফপির

হাজার হাজার পরিবারের মতো আরশিও তার বিয়ের অনুষ্ঠান কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছেন। কাজেই ৭০০ থেকে অতিথিদের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ৪০ জনে। যদিও ভয় হয়, এই কয়েকজন অতিথিও ঠিকমতো বিয়েতে হাজির হতে পারবেন কিনা।

২৯ বছর বয়সী এই তরুণী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, একটি বিশাল বিয়ের অনুষ্ঠানের স্বপ্ন নিয়েই আমি বড় হয়েছিলাম। যেখানে অনেক উৎসব ও আয়োজন থাকবে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা আর করা হলো না।

তিনি বলেন, এখন আমরা একটা সাধারণ অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা ভাবছি। কিন্তু এই উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আত্মীয়স্বজনরা চলাচল করতে পারব কিনা, তা নিয়েও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

আগস্টের শুরুতে কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয় ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার। এর আগে রাজ্যটির ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং স্থানীয় অধিবাসীদের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।

এর পর সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের শত শত সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। কাঁটাতারের কুণ্ডলী ও স্টিলের ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকারি বাহিনী। একই সময়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বাধা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এতে অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি।

ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে কাশ্মীরে। আগে থেকেই পাঁচ লাখের অধিক সেনা মোতায়েন করা রয়েছে রাজ্যটিতে। এবার নতুন করে কয়েক হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

কিন্তু এই সময়ে কাশ্মীরের বিবাহ অনুষ্ঠান কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক প্রবাহও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার লোক তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করে কৃচ্ছ্রতার পথ অবলম্বন করেছেন।

কাশ্মীরিরা পারিবারিক মর্যাদার ব্যাপারে খুবই সচেতন। আতিথেয়তার জন্যও তাদের খ্যাতি রয়েছে। কাজেই তাদের সম্পদ ও উদারতার পরিচয়ও বহন করে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে।

কাশ্মীরের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথি দেড় হাজারের বেশি থাকে। যাতে খরচ পড়ে ৩০ হাজার ডলারে বেশি।

নামের আদ্যাক্ষরে পরিচিতি পেতে চাওয়া বিলাল নামের এক যুবক বলেন, বিয়েতে নিজেদের মর্যাদাকে জাহির করতে পরিবারগুলো বছরের পর বছর কিংবা দশক ধরেও অর্থ জমাতে থাকে। জন্মের পরেই সন্তানদের বিয়ের প্রস্তুতি নেন বাবা-মা।

চলতি মাসে তার ভাইয়ের বিয়েতে মাত্র ১৫ শতাংশ অতিথি অংশ নিতে পেরেছিলেন, যা তার পরিবারের জন্য খুবই হতাশার ঘটনা।

অন্যান্য যারা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অচলাবস্থার দরুন সরবরাহকারী ও অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেননি।

বোন তাহমিনার বিয়ের কয়েক দিন আগে বিয়ের খাটসহ সোনা-গহনা ও পোশাক সংগ্রহে খাবি খেতে হয়েছে মোন্তাজিরকে।

৪১ বছর বয়সী এই কাশ্মীরি বলেন, আমি একটি খাট ও বিয়ের পোশাকের ফরমাশ করেছি। কিন্তু দুটি দোকানই এখন বন্ধ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই।

এমনকি পাচক ও কসাইকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠান জীবনভর স্মরণ করে রাখতে চায় সবাই। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী আয়োজনগুলো বাদ দিয়ে বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হওয়ায় খুব অসহায় বোধ করছি।

আরশি নিসারও দুঃখভরা কণ্ঠে সেই কথাই বলছিলেন, কাশ্মীরে কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

কাশ্মীরে কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই

আপডেট টাইম : ১২:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিয়ের সময় নির্ধারণের বছরখানেক পর আরশি নিসারের বিবাহ পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেল। অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের চাপিয়ে দেয়া যোগাযোগ অচলাবস্থা ও ধরপাকড়ে অতিথিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় এই বাগদত্তাকে তার বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে।

হিমালয় উপত্যকাটির বাসিন্দারা এখন ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ মেকআপ অনুষ্ঠান ও কনসার্টসহ ৭০০ অতিথি ধরতে পারে এমন শামিয়ানায় ১০ থেকে ১৫ পদের ভোজের আয়োজন করার কথা ছিল তার। কাশ্মীরিদের ঐতিহ্যানুসারে যেটি ওয়াজওয়ান নামে পরিচিত।-খবর এএফপির

হাজার হাজার পরিবারের মতো আরশিও তার বিয়ের অনুষ্ঠান কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছেন। কাজেই ৭০০ থেকে অতিথিদের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ৪০ জনে। যদিও ভয় হয়, এই কয়েকজন অতিথিও ঠিকমতো বিয়েতে হাজির হতে পারবেন কিনা।

২৯ বছর বয়সী এই তরুণী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, একটি বিশাল বিয়ের অনুষ্ঠানের স্বপ্ন নিয়েই আমি বড় হয়েছিলাম। যেখানে অনেক উৎসব ও আয়োজন থাকবে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা আর করা হলো না।

তিনি বলেন, এখন আমরা একটা সাধারণ অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা ভাবছি। কিন্তু এই উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আত্মীয়স্বজনরা চলাচল করতে পারব কিনা, তা নিয়েও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

আগস্টের শুরুতে কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয় ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার। এর আগে রাজ্যটির ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং স্থানীয় অধিবাসীদের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।

এর পর সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের শত শত সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। কাঁটাতারের কুণ্ডলী ও স্টিলের ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকারি বাহিনী। একই সময়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বাধা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এতে অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি।

ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে কাশ্মীরে। আগে থেকেই পাঁচ লাখের অধিক সেনা মোতায়েন করা রয়েছে রাজ্যটিতে। এবার নতুন করে কয়েক হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

কিন্তু এই সময়ে কাশ্মীরের বিবাহ অনুষ্ঠান কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক প্রবাহও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার লোক তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করে কৃচ্ছ্রতার পথ অবলম্বন করেছেন।

কাশ্মীরিরা পারিবারিক মর্যাদার ব্যাপারে খুবই সচেতন। আতিথেয়তার জন্যও তাদের খ্যাতি রয়েছে। কাজেই তাদের সম্পদ ও উদারতার পরিচয়ও বহন করে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে।

কাশ্মীরের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথি দেড় হাজারের বেশি থাকে। যাতে খরচ পড়ে ৩০ হাজার ডলারে বেশি।

নামের আদ্যাক্ষরে পরিচিতি পেতে চাওয়া বিলাল নামের এক যুবক বলেন, বিয়েতে নিজেদের মর্যাদাকে জাহির করতে পরিবারগুলো বছরের পর বছর কিংবা দশক ধরেও অর্থ জমাতে থাকে। জন্মের পরেই সন্তানদের বিয়ের প্রস্তুতি নেন বাবা-মা।

চলতি মাসে তার ভাইয়ের বিয়েতে মাত্র ১৫ শতাংশ অতিথি অংশ নিতে পেরেছিলেন, যা তার পরিবারের জন্য খুবই হতাশার ঘটনা।

অন্যান্য যারা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অচলাবস্থার দরুন সরবরাহকারী ও অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেননি।

বোন তাহমিনার বিয়ের কয়েক দিন আগে বিয়ের খাটসহ সোনা-গহনা ও পোশাক সংগ্রহে খাবি খেতে হয়েছে মোন্তাজিরকে।

৪১ বছর বয়সী এই কাশ্মীরি বলেন, আমি একটি খাট ও বিয়ের পোশাকের ফরমাশ করেছি। কিন্তু দুটি দোকানই এখন বন্ধ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই।

এমনকি পাচক ও কসাইকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠান জীবনভর স্মরণ করে রাখতে চায় সবাই। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী আয়োজনগুলো বাদ দিয়ে বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হওয়ায় খুব অসহায় বোধ করছি।

আরশি নিসারও দুঃখভরা কণ্ঠে সেই কথাই বলছিলেন, কাশ্মীরে কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই।