বিএনপির সব পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, যিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।বৃহস্পতিবার তিনি জানান, অবসরে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একটি ‘চিঠি’ লিখেছেন। বুধবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ওই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
“আমি যুদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধা। শারীরিকভাবে এখন আর রাজনীতি করার মতো অবস্থায় নেই। এ কারণে বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকেই তা কার্যকর হবে।”
বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন একাত্তরে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন। মেজর পদে থাকা অবস্থায় তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শমসের মবিন চৌধুরীকে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে দুই বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান।
২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। সে সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি।
২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিল হলে শমসের মবিনকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। কখনো নির্বাচনে অংশ না নিলেও গত কয়েকবছর তিনি বিএনপির মূল ক্ষমতাকেন্দ্রের খুব কাছাকাছিই ছিলেন।
চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি ও শরিকদের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন শমসের মবিন। গত মে মাসে জামিনে মুক্তি পেলেও এর পর আর তাকে রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় দেখা যায়নি।
শমসের মবিন চৌধুরী
শমসের মবিন চৌধুরী
প্রোস্টেট ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “চিকিৎসার জন্য আমার বিদেশে যাওয়া জরুরি। এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও আমাকে তা দেওয়া হয়নি।”
তার পদত্যাগের খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, “তিনি প্রবীণ নেতা হিসেবে অনেক শ্রম দিয়েছেন, মেধা দিয়েছেন। তিনি অবসরে গেলে দলের অনেক ক্ষতি হবে। আমি শুনেছি আমাদের চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপিতে ‘যারা এখনো মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী’ আছেন, তাদের অনেকেই একে একে বেরিয়ে এসে দলটিকে ‘ঢেলে সাজাবেন’ বলে তার বিশ্বাস।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে একই ধরনের কথা বলেছেন হানিফসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের দাবি, বিএনপির ‘নাশকতার রাজনীতির’ সঙ্গে একমত হতে না পেরে ‘অনেক বিবেকবান’ নেতাই এখন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ‘মুখ ফিরিয়ে’ নিয়েছেন।
অন্যদিকে সরকারই ‘বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করছে’ অভিযোগ করে খালেদা জিয়া গত জুলাইয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। সেজন্য একে শেষ করতে তারা (সরকার) উঠে পড়ে লেগেছে।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের সম্ভাবনাও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে, যদিও বিএনপি নেতারা তা নাকচ করে আসছেন।
সম্প্রতি এই জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যদিও বিএনপির অবস্থান ভিন্ন।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের উদ্যোগকে ‘সরকারের নতুন ষড়যন্ত্র’ বলে আসছে বিএনপি। তবে এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো ‘জোটগতভাবে করা সম্ভব নয়’ বলেই তারা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।