হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাশরাফি বিন মর্তুজা একজন বীর যোদ্ধা। একজন বীর সেনাপতি। একজন নেতা। একজন ক্রিকেটার এবং সব মিলিয়ে একজন অসাধারণ মানুষ। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ টস করেই বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ও অধিনায়ক মাশরাফি চিরস্থায়ী হচ্ছেন ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি পাতায়। ক্রিকেট ইতিহাসে টাইগার অধিনায়কই একমাত্র ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক, যিনি সংসদ সদস্য হয়ে বিশ্বকাপ খেলছেন। হাঁটুতে সাত-সাতটি অস্ত্রোপচার। দুই অ্যাংকেলে ১০ বার কাটাছেঁড়া। প্রতিটি ম্যাচ শেষে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হাঁটু থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে বের করতে হয় জমে থাকা বিষাক্ত রস।
সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্য আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতো দাঁড়াতে পারেন না। বিছানায় বসে হাঁটু ভাঁজ করে দিনের শুরু করতে হয়। খেলার আগে ৩০-৪০ মিনিট সময় নিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধতে হয় দুই হাঁটুতে। এত সব প্রতিকূলতা, পাহাড়সম বাধা। এরপরও ৩৫ বছর বয়সী মাশরাফি ক্রিকেট খেলছেন। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষুধার্ত বাঘের মতো। অপ্রতিরোধ্য বীর সেনানি হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন প্রতিপক্ষের ওপর। বুনো হাতির তেজে খেলছেন লাল-সবুজ পতাকার মানসম্মান রাখতে। বীর সেনাপতি হয়ে ঝড়-ঝঞ্ঝা সামলে খেলাচ্ছেন সতীর্থদের। অসাধারণ একজন ক্রিকেটার হিসেবে একের পর এক জয় উপহার দিচ্ছেন প্রিয় বাংলাদেশকে।
জন্ম ১৯৮৫ সালে। লাল-সবুজ পতাকাতলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ২০০১ সাল থেকে। ১৮ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইনজুরির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা মাশরাফি এখন আর টেস্ট খেলছেন না। অবসর নিয়েছেন টি-২০ থেকে। তবে নিয়মিত খেলছেন ওয়ানডে ক্রিকেট। শুধু খেলছেন বলে ভুল হবে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সোনার বাংলাকে উদ্ভাসিত করছেন দিনের পর দিন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোকে পেছনে ফেলে খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল। হাঁটুর ইনজুরি, অ্যাংকেলের সমস্যা- এরপরও মাশরাফি মাঠে যেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। তিনি খেলেন বাঘের তেজে। মাঠে একজন নেতা। ম্যাচ শেষে তিনি একজন মানুষ। হারজিত মেনে নেন আবেগ দিয়ে।
২০০৩, ২০০৭, ২০১৫ সালের পর এবার চতুর্থবার বিশ্বকাপ খেলছেন মাশরাফি। এই প্রথম বাংলাদেশের স্বপ্ন আকাশছোঁয়ার। আগের তিন আসরে ১৬ ম্যাচ খেলে আলো ছড়িয়েছেন কখনো বল হাতে, কখনো আবার ব্যাট হাতে। এবার সব আলো টেনে এনেছেন কৌশলী নেতৃত্বগুণে। একটি দলকে কীভাবে এক সুতোয় গাঁথতে হয়, তা ক্রিকেটবিশ্বকে দেখিয়েছেন মাশরাফি। অসাধারণ ক্রিকেটার মাশরাফিকে নিয়ে তাই অনায়াসে লেখা যায় মহাকাব্য। কাটখোট্টা হিসেবে পরিচিত সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে মহাবীর মাশরাফিকে, ‘নেতা, মানুষ আর খেলোয়াড়-এই তিনটি শব্দ যোগ করলে মাশরাফির মতো কোনো ক্রিকেটার এর আগে ক্রিকেটবিশ্ব দেখেনি।’