অবসর কল্যাণের ৪% কর্তন, ৫% ইনক্রিমেন্ট, হিসাবের লাভ-লোকসানে বেসরকারি শিক্ষকসমাজ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ “সর্বনাশ হয়ে গেছে। টাকা নিয়ে গেছে। সরকার শিক্ষকদের বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ধর, ধর, ধর। প্রথম সাজু-সাদীকে ধর। ধইরা ধইরা। সরকারটাকেই ধর।” ক’দিন যাবৎ এ রকম প্রচারণা চলছে, চলছে তোলপাড়। কতিপয় শিক্ষক চালাচ্ছেন। ভাষার পাটকেল নিক্ষেপ করছেন, বাক্যের ধনুক দিয়ে শব্দের তীর নিক্ষেপ করছেন। এ আঘাত সয়।

কিন্তু ফেসবুকে শিক্ষক লেবাসের কয়েকজন তাদের শ্লেষাত্মক বস্তির-খিস্তি নিক্ষেপিত শব্দ-বাক্যের বিকশিত রূপ-লাবণ্যে আমি অন্তত ভূপাতিত। এককথায় ভয়াবহ। বাক্যবাণ নিক্ষেপকারীগণ তাদের আত্মপরিচিতি, বংশপরিচিতি ও চারিত্রিক পরিচিতির বিস্তারিত জানান দিচ্ছেন। তারা অভিধান বহির্ভূত শব্দের সদ্ব্যবহার করছেন। এ কথা ঠিক, বলার স্বাধীনতার নাম বাকস্বাধীনতা। মুখ দিয়ে খিস্তিখেউড় উচ্চারণ করাও কি বাক-স্বাধীনতা? এও কি গণতন্ত্র? কবি নির্মলেন্দু গুণের “আমি স্বাধীনতা পেয়ে গেলে পরাধীন হতে ভালোবাসি” ধরণের স্বাধীনতা দিয়ে ফায়দা কী?
“প্রেম এসে যাযাবর গলায় চুমু খেলেও ওরা বিরহ কাতর হয়ে গালাগাল করে সুখ পায়”।

আমরা জাতিকে শিক্ষা দিই, জ্ঞান দিই। আমরা পথ দেখাই।
আমরা শিক্ষক।
আমরা কারিগর। ভাষারও কারিগর। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর উত্তরসূরী। আমরা এ প্রজন্মের সক্রেটিস, আ্যারিস্টেটল, প্লেটো। আমরা গ্যালিলিও, নিউটন, আর্কিমিডিস। আমরা জেসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, মুনির চৌধুরী। আমরা তাদের উত্তরাধিকার। আহা, আমাদের সে-কী ভাষা! রবিঠাকুর, নজরুল এসো শিখে যাও, ফেসবুক ভাষা ও সাহিত্য শিখে যাও।

কী পেলাম, কী পাইনি?
৪% সব নিয়ে গেলো?

২২০০০ টাকা স্কেল। অতিরিক্ত ৪% কর্তন। প্রতি মাসে কাটা টাকা ৮৮০। বছরে ১০৫৬০।
৫% ইনক্রিমেন্ট ১টি যোগ হওয়ায় অর্থাৎ স্কেল ২৩১০০/ হওয়ায় প্রথম বছর অবসর+কল্যাণ বৃদ্ধি পায় ৯৯০০০/টাকা।

২৯০০০/টাকা স্কেল। অতিরিক্ত ৪% কর্তনে বছরে ১৩৯২০/টাকা কেটে রাখা হয়।
৫% ইনক্রিমেন্ট ১টি ধরে স্কেল হয় ৩০৪৫০/টাকা। এতে অতিরিক্ত বছরে পাই ১৩০৫০০/টাকা।

৫০০০০/ স্কেল। ৪% এ কর্তন বছরে ২৪০০০/
১টা ইনক্রিমেন্টে ৫২৫০০/টাকা স্কেল হওয়ায় অবসর কল্যাণে অতিরিক্ত পাই ২২৫০০০/

তারপরেও ফেসবুক সাহিত্যিকগণ(?) বিশেষতঃ আমাদের দু’জনকে তিরস্কার বকাঝকা নোংরা শব্দবাক্যবাণে জর্জরিত করছেন, রেহাই দিচ্ছেন না মাননীয় মন্ত্রী সচিবকেও। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সরকার যদি রিঅ্যাক্ট করে, যদি সিদ্ধান্ত নেয় অবসর ও কল্যাণের হিসাব করা হবে মূল বেতন স্কেল অনুযায়ী, তাহলে? অপরিণামদর্শী আন্দোলনকারী নেতারা শিক্ষকদের কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন?

আমরা এখন কী চাই?

এ বছর চাই পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, চাই বাড়ি ভাড়া। আদায়ও করতে পারতাম। এগুলো আদায়ের পর অবশেষে জাতীয়করণ। আমরা আমাদের কৌশলে এগুচ্ছিলাম। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলও নমনীয় ছিলো। কিন্তু কতিপয়ের বাচালতা ও বাগাড়ম্বরতা সে পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সাধারণ শিক্ষকদের কাছে আমার বিনয়াবনত আরজ, আসুন আপনাদের অবসর ও কল্যাণ অফিসে দেখে যান। দেখে-শুনে পর্যালোচনা করে আমাদেরকে তিক্ত শব্দে, তীব্র ভাষায় সমালোচনা করুন, মেনে নেবো।
আইনে বলা আছে, কেউ যদি মনে করেন চাঁদা দেবেন না, দিতে হবে না। তিনি অবসর কল্যাণ ভাতাও পাবেন না। জমানো চাঁদার টাকা ফেরৎ নিতে পারবেন।

আপাততঃ বিদায়, জানিনা কোন্ মহান শিক্ষক কোন অভিধানের কোন অভিধা আমার জন্যে তৈরি রেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর