ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে ঘামাচি অনেক বড় সমস্যা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এই গরমে ঘামাচি অনেক বড় সমস্যা। এই ঘামাচিকে হিট র‍্যাশও বলা হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি মিলিয়ারিয়া নামে পরিচিত। ঘামাচি এক ধরনের চর্মরোগ। গরমের সময় আমাদের ত্বকে লাল বর্ণ ধারণ করে ফুসকুড়ির মতো যা দেখা যায় সেটিই হলো ঘামাচি বা হিট র‍্যাশ। আমাদের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থির সাথে ‘স্টেফ এপিডারমাইডিস’ এক ধরনের জীবাণু মিশে থাকে।

গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবেই ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম বেশি নিঃসৃত হয়। তাই ধূলোবালিও জমে বেশি পরিমাণে। ত্বকের মৃত কোষে ধূলোবালি জমে যখন ঘর্মগ্রন্থি থেকে স্বাভাবিকভাবে ঘাম নিঃসরণ হতে পারেনা তখন স্টেফ এপিডারমাইডিস-এর সংস্পর্শে এসে ঘামাচির উৎপত্তি হয়। আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে এমন কিছু উপাদান,যা এনে দিতে পারে ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক উপায়গুলো-

১. ঘামাচিতে উপকার পেতে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো যেসব স্থানে ঘামাচি আছে, সেখানে বরফ ঘষা। তাছাড়া ঠাণ্ডা পানিও ভালো আরাম দেয় ঘামাচিতে।

২. মুলতানি মাটির পেস্ট ঘামাচিতে বেশ উপকারি। এই পেস্ট তৈরি করতে লাগবে ৫ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি,  গোলাপ জল ২ টেবিল চামচ ও পানি পরিমাণমতো। ঘামাচির জায়গায় এই পেস্ট ২ থেকে ৩ ঘন্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কয়েক দিনের মধ্যে ঘামচি ভালো হয়ে যাবে।

৩. এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা গুলিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড় বেকিং সোডার পানিতে ভিজিয়ে তা ভালো করে নিংড়ে ঘামাচির স্থানে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৪. নিমপাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ঘামাচি নিরাময়ে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে নিমপাতার পেস্ট শরীরে লাগিয়ে তা সম্পূর্ণ ভাবে শুকাতে হবে। এভাবে ৪ থেকে ৫ বার দিনে ব্যবহার করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এক মুঠো নিমপাতা ২ কাপ পানিতে ২০ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে। এরপর সেই পানি ঠাণ্ডা করে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘামাচির জায়গায় ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে লাগাতে হবে। এভাবে দিনে ৪ থেকে ৫ বার করতে পারলে ভালো।

৫. লেবুর রসে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ঘামাচি দূর করতে বেশ কার্যকরী। ঘামাচিতে উপকার পেতে দিনে ৩ থেকে ৪ গ্লাস লেবুর রস মিশ্রিত পানি পান করুন।

৬. কয়েক দিন শরীরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে ঘামাচি ভালো হয়ে যায়। সেজন্য অ্যালোভেরা পাতা থেকে অ্যালোভেরা জেল বের করে তা শরীরে প্রলেপ মেখে নিতে হবে। জেল আপনা-আপনি শুকিয়ে গেলে পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭. চন্দন বাটা বা চন্দন গুঁড়া গোলাপজলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচির স্থানে কয়েকবার লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই ঘামাচি ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়া চন্দন ও ধনেপাতা বাটা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচিতে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কারণ ধনেপাতায় আছে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ আর চন্দন ঘামাচির জ্বালা ও চুলকানি দুই-ই কমায়।

৮. ঘামচিতে ফিটকিরি মিশ্রিত পানি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গোসল করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৯. লাউ এমনিতেই ঠাণ্ডা একটি সবজি। ঘামাচির জন্য লাউ আগুনে ঝলসে নিয়ে তা থেকে রস বের করে কিছুদিন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

১০. বেসনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচিতে প্রলেপ দিয়ে কিছু সময় পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপকার পাবেন।

১১. কাঁচা আলুর পেস্ট ঘামচি থেকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকরী।

১২. বাথটাবে আধকাপ ওটমিল ভিজিয়ে এরপর ডুবে থেকে অপেক্ষা করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট অথবা ওটমিল ভেজানো পানি ঘামাচির উপর লাগালেও হবে। এতে অসহ্যকর চুলকানি থেকে আরাম পাবেন।

১৩. তরমুজ শরীর ঠাণ্ডা রাখে। তাই তরমুজের পাল্প ঘামাচিতে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

১৪. আদার পানি ঘামাচির জন্য অনেক উপকারি। তাই, আদা গ্রেট করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি ঠাণ্ডা হলে নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করে ঘামাচির জায়গায় লাগান।

১৫. শসা শুধু দেহকে হাইড্রেটেডই করে না, শসা ঘামাচিতেও আরামদায়ক। ঘামাচির চুলকানি দূর করতে শসা বেশ কার্যকরী। শসা পাতলা পাতলা করে কেটে তা ৩০ মিনিট সময় নিয়ে ঘামাচির স্থানে রাখুন। শীতল ভাব পাবার সাথে সাথে চুলকানি কমবে। ৩০ মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও শসা রস করে খানিক লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘামচিতে লাগাতে পারেন।

১৬. প্রথমে ২টি আম গরম পানিতে সেদ্ধ করে তা থেকে রস বের করে ঠাণ্ডা পানিতে পরিমাণমতো লবণ ও চিনি মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন ২ বার করে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পান করলে ঘামাচির জ্বালা ও চুলকানি থেকে দূরে থাকতে পারবেন খুব সহজেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

গরমে ঘামাচি অনেক বড় সমস্যা

আপডেট টাইম : ০৬:০৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এই গরমে ঘামাচি অনেক বড় সমস্যা। এই ঘামাচিকে হিট র‍্যাশও বলা হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি মিলিয়ারিয়া নামে পরিচিত। ঘামাচি এক ধরনের চর্মরোগ। গরমের সময় আমাদের ত্বকে লাল বর্ণ ধারণ করে ফুসকুড়ির মতো যা দেখা যায় সেটিই হলো ঘামাচি বা হিট র‍্যাশ। আমাদের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থির সাথে ‘স্টেফ এপিডারমাইডিস’ এক ধরনের জীবাণু মিশে থাকে।

গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবেই ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম বেশি নিঃসৃত হয়। তাই ধূলোবালিও জমে বেশি পরিমাণে। ত্বকের মৃত কোষে ধূলোবালি জমে যখন ঘর্মগ্রন্থি থেকে স্বাভাবিকভাবে ঘাম নিঃসরণ হতে পারেনা তখন স্টেফ এপিডারমাইডিস-এর সংস্পর্শে এসে ঘামাচির উৎপত্তি হয়। আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে এমন কিছু উপাদান,যা এনে দিতে পারে ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক উপায়গুলো-

১. ঘামাচিতে উপকার পেতে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো যেসব স্থানে ঘামাচি আছে, সেখানে বরফ ঘষা। তাছাড়া ঠাণ্ডা পানিও ভালো আরাম দেয় ঘামাচিতে।

২. মুলতানি মাটির পেস্ট ঘামাচিতে বেশ উপকারি। এই পেস্ট তৈরি করতে লাগবে ৫ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি,  গোলাপ জল ২ টেবিল চামচ ও পানি পরিমাণমতো। ঘামাচির জায়গায় এই পেস্ট ২ থেকে ৩ ঘন্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কয়েক দিনের মধ্যে ঘামচি ভালো হয়ে যাবে।

৩. এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা গুলিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড় বেকিং সোডার পানিতে ভিজিয়ে তা ভালো করে নিংড়ে ঘামাচির স্থানে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৪. নিমপাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ঘামাচি নিরাময়ে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে নিমপাতার পেস্ট শরীরে লাগিয়ে তা সম্পূর্ণ ভাবে শুকাতে হবে। এভাবে ৪ থেকে ৫ বার দিনে ব্যবহার করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এক মুঠো নিমপাতা ২ কাপ পানিতে ২০ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে। এরপর সেই পানি ঠাণ্ডা করে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘামাচির জায়গায় ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে লাগাতে হবে। এভাবে দিনে ৪ থেকে ৫ বার করতে পারলে ভালো।

৫. লেবুর রসে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ঘামাচি দূর করতে বেশ কার্যকরী। ঘামাচিতে উপকার পেতে দিনে ৩ থেকে ৪ গ্লাস লেবুর রস মিশ্রিত পানি পান করুন।

৬. কয়েক দিন শরীরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে ঘামাচি ভালো হয়ে যায়। সেজন্য অ্যালোভেরা পাতা থেকে অ্যালোভেরা জেল বের করে তা শরীরে প্রলেপ মেখে নিতে হবে। জেল আপনা-আপনি শুকিয়ে গেলে পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭. চন্দন বাটা বা চন্দন গুঁড়া গোলাপজলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচির স্থানে কয়েকবার লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই ঘামাচি ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়া চন্দন ও ধনেপাতা বাটা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচিতে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কারণ ধনেপাতায় আছে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ আর চন্দন ঘামাচির জ্বালা ও চুলকানি দুই-ই কমায়।

৮. ঘামচিতে ফিটকিরি মিশ্রিত পানি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গোসল করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৯. লাউ এমনিতেই ঠাণ্ডা একটি সবজি। ঘামাচির জন্য লাউ আগুনে ঝলসে নিয়ে তা থেকে রস বের করে কিছুদিন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

১০. বেসনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচিতে প্রলেপ দিয়ে কিছু সময় পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপকার পাবেন।

১১. কাঁচা আলুর পেস্ট ঘামচি থেকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকরী।

১২. বাথটাবে আধকাপ ওটমিল ভিজিয়ে এরপর ডুবে থেকে অপেক্ষা করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট অথবা ওটমিল ভেজানো পানি ঘামাচির উপর লাগালেও হবে। এতে অসহ্যকর চুলকানি থেকে আরাম পাবেন।

১৩. তরমুজ শরীর ঠাণ্ডা রাখে। তাই তরমুজের পাল্প ঘামাচিতে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

১৪. আদার পানি ঘামাচির জন্য অনেক উপকারি। তাই, আদা গ্রেট করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি ঠাণ্ডা হলে নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করে ঘামাচির জায়গায় লাগান।

১৫. শসা শুধু দেহকে হাইড্রেটেডই করে না, শসা ঘামাচিতেও আরামদায়ক। ঘামাচির চুলকানি দূর করতে শসা বেশ কার্যকরী। শসা পাতলা পাতলা করে কেটে তা ৩০ মিনিট সময় নিয়ে ঘামাচির স্থানে রাখুন। শীতল ভাব পাবার সাথে সাথে চুলকানি কমবে। ৩০ মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও শসা রস করে খানিক লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘামচিতে লাগাতে পারেন।

১৬. প্রথমে ২টি আম গরম পানিতে সেদ্ধ করে তা থেকে রস বের করে ঠাণ্ডা পানিতে পরিমাণমতো লবণ ও চিনি মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন ২ বার করে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পান করলে ঘামাচির জ্বালা ও চুলকানি থেকে দূরে থাকতে পারবেন খুব সহজেই।