হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালে ডা. আবদুল আলীম খান ফুটকেয়ার ইউনিট-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম ফুটকেয়ার ইউনিট চালু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। এই ইউনিটের বিশেষত্ব হলো- একজন ডায়াবেটিস রোগীর পা না কেটে চিকিৎসা সেবা দেয়া। এই ইউনিটে ২৬টি শয্যা রয়েছে। গতকাল ডা. আবদুল আলীম খানের বড় ভাই মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. আবদুর রহমান খান এই ইউনিটের উদ্বোধন করেন। মিরপুর দারুস সালামে অবস্থিত বারডেম- এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল। উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা.একে আজাদ খান, সমিতির মহাসচিব মো.সাইফ উদ্দিন, হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো.আবদুল মজিদ ভূঁইয়া, ডা. আবদুল আলীম খানের স্ত্রী ও এক কন্যা উপস্থিত ছিলেন। এই ইউনিটে জেনারেল সার্জন, নিরোসার্জন, ভাসকুলার সার্জন, নিউরোমেডিসিন, ফুটিয়েটিক বিশেষজ্ঞ সব মিলে গঠিত টিম স্টেট অব দ্য আর্থ সর্বোচ্চ মানের ডায়াবেটিক ফুটকেয়ার সেবা নিশ্চিত করবে বলে পরিচালক জানিয়েছেন। এই ইউনিটে ভর্তি রোগী তরুণ কুমার দেয়াও এখানের চিকিৎসা সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ৩০৫/১ সিটে চিকিৎসাধীন ৫৭ বছর বয়সী এই রোগী আরো জানান, প্রতিদিন সিট ভাড়া ১২৬০ টাকা করে দিতে হয়। তবে এখানে এয়ারকুলার সিস্টেম রয়েছে। উল্লেখ্য, ডা. আবদুল আলীম খান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ষাটের দশকে এমবিবিএস পাস করার পর সৌদি আরবে চাকরি নিয়ে চলে যান। সেখানে প্রায় ৩৪ বছর কাজ করেন। এরমধ্যে ৩০ বছর মক্কা শরীফে কিং আবদুল আজিজ হাসপাতালে (মুসতাশফা মালেক) কাজ করেন। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সৌদি সরকার তাকে সৌদি আরবের সিটিজেনশিফ দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু দেশের প্রতি মমত্ববোধ থাকাতে তিনি ওই প্রস্তাবে রাজি হননি। দীর্ঘদিন মক্কায় অবস্থানকালে একদিকে তার বহুবার কা’বা শরীফ তওয়াফ করার সুযোগ হয়েছে। অন্যদিকে বাঙালি হাজীদেরকে এবং ওমরাহ্ হজযাত্রীদের সেবা করার সুযোগ হয়েছে তার। দেশে ফিরে তিনি অন্য কোথায়ও চাকরি না করে বা প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করে বেক্সিমকো কোম্পানির স্টাফদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন। তিনি বেক্সিমকো কোম্পানির একজন ডাইরেক্টর হিসেবে মনোনীত হন এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোম্পানির ডাইরেক্টর ছিলেন। সারা জীবন নিজে সাদাসিধে জীবন-যাপন করেছেন। গরিবদের সাহায্য করা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার সঞ্চিত অর্থ তিনি অকাতরে দান করেছেন। ডা. আবদুল আলীম খান দোহারে পদ্মা কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা। পদ্মা কলেজে একটা নামাজ ঘর এবং নিজের গ্রাম শাইনপুকুরে আলিমুদ্দিন মাদ্রাসায় একটা দালান নির্মাণ করেছেন। মসজিদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দান করে গিয়েছেন। তার মৃত্যুর সময়ে তিনি দেড় কোটি টাকা রেখে গিয়েছিলেন কোন সৎ কাজে ব্যবহার করার জন্য। তার পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ওই টাকার ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটা ফুটকেয়ার ইউনিট স্থাপন করতে দান করবেন। বাকি ৭৫ লাখ টাকা একটা আইসিইউ স্থাপন করার ব্যাপারে সহায়তা হিসেবে দান করা হবে। মৃত্যুকালে তিনি চার মেয়ে এবং স্ত্রী রেখে যান। তার মেয়েরা সুশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত। দু’জন এমবিবিএস ডাক্তার এবং দু’জন এমবিএ ডিগ্রিধারী। এদের মধ্যে তিনজন বিদেশে কর্মরত আছেন।