পৌষের সাজে অপরূপ গ্রাম বাংলা

গাছপালা ঘেরা শান্ত পরিবেশে নিরিবিলি ভোর। কোন গাড়ির হর্নের আওয়াজ নেই, যান্ত্রিক জীবনের তাড়াহুড়ো নেই। ঠাণ্ডায় ঘরের বাইরে পা না রাখতে চাইলেও প্রকৃতি দেখার বিশেষ আকর্ষণে ঘরের বাইরে যাই।

আহ! কি চমৎকার কুয়াশা-ঢাকা সকাল। গাছের পাতায় শিশিরের ছোঁয়া। গাছে গাছে জবা, গোলাপ, করবী আর পারিজাত ফুলের হাসাহাসি। পুকুরে ভেসে বেড়াচ্ছে পাতি হাঁসের দল।

উঠোন জুড়ে হালকা মিষ্টি রোদের ঝিলিক দেখেই পা বাড়াই বাড়ির বাইরে। উদ্দেশ্য সর্ষে ক্ষেত দেখবো।

পৌষের শুরুতেই প্রকৃতি শীতের বিভিন্ন আয়োজনে যেন মেলা বসেছে। পুরো গ্রামের ক্ষেত জুড়ে হলুদের ঢেউ।  সর্ষের হলুদ আর সবুজ গাছে পুরো গ্রাম যেন সেজেছে সবুজ-হলুদে। সর্ষের ফুলের চারপাশ ঘিরে মৌমাছির আনাগোনা। সূর্যের আলো আর সর্ষের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হচ্ছে দারুণ এক দৃশ্যের।

গাছে গাছে খেজুরের রসের হাঁড়ি। নিপাহ ভাইরাসের কারণে রস খেলাম না। কিন্তু প্রকৃতি উপভোগ করতে তো সমস্যা নেই। মেঠো পথের দু’ধারে খেজুরের গাছ। দু’পাশে সর্ষে ক্ষেত, কি অসাধারণ উপভোগ্য সময়। সর্ষে ফুলের ঘ্রানে বিভোর আর খেজুরের রসে ঘ্রাণ আ…হা…।

পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পাখির ডাক।  দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সুরেলা কন্ঠ শুনলাম। আবার স্বপ্নের পথে হেঁটে চলা।

সন্ধ্যা হতেই উঠোনে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু। আরেক পাশে চলছে ইট দিয়ে চুলা তৈরির কাজ। পিকনিক হবে সবাই মিলে। খিচুড়ি আর গরুর মাংস।

শীতে গ্রামে হাঁস, পিঠাপুলি খাওয়ার রেওয়াজ বাঙালির বহু দিনের। সৌভাগ্যক্রমে পেলাম ছিটা রুটি আর নারকেল দিয়ে পাতি হাঁসের মাংস। শীত এলেই যেন স্বাদ বেড়ে যায় এসব খাবারের।

পরদিন সকাল হতেই পুকুরে মাছ ধরার পালা। শীতে কি আর মাছ ধরা দেয়! অনেকবার জাল ফেলার পর পাওয়া গেলো মাছ।

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামই সুন্দর। আ-হা কি সেই রূপ! কেবলই মনে পড়ছে দিজেন্দ্রলাল রায়ের দেশাত্মবোধক ওই গানটা।

“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।”

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর