দশম শ্রেণিতে ফেল এখন বিখ্যাত অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির মালিক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। উক্তিটি করেছিলেন অধ্যাপক, লেখক, বিজ্ঞানী, বিমান প্রযুক্তিবিদ এ পি জে আব্দুল কালাম। আর আপনার স্বপ্ন আপনাকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পারে তার এক উদাহরণ দেব আজ।

অ্যান্টিভাইরাসের দুনিয়ায় বেশ নামকরা কোম্পানি কুইক হিল টেকনোলজি। ভারতের প্রথম অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি এটি। যেটি ২৯ বছর আগে শুরু হয়। এ মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থাসহ সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ভরসা কুইক হিলে। জানেন কি? কুইক হিলের জন্ম আর বেড়ে ওঠার গল্প। এর জন্ম দশম শ্রেণিতে ফেল করা এক যুবকের! তার মাথাতেই প্রথম কুইক হিলের পরিকল্পনা আসে।

জানুন আপনার কম্পিউটার সুরক্ষার অ্যান্টিভাইরাসের কোম্পানি কুইক হিলের শুরু থেকে শেষ-   

১৯৯৪ সালে প্রথম সামনে আসে কুইক হিল। প্রথম দিকে মাত্র ৭০০ টাকায় ভেন্ডরদের কাছে এই অ্যান্টিভাইরাস বিক্রি করছিল কোম্পানি। সে সময় যতগুলো অ্যান্টিভাইরাস ছিল তার মধ্যে কুইক হিল ছিল সবচেয়ে সস্তা। তবে সস্তা হওয়া সত্ত্বেও নতুন বলে কেউই এটি কিনতে রাজি হননি। এর ওপর কেউ যেন আস্থা রাখতে পারছিলেন না। প্রচারণা চালাতে কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় বিনামূল্যে অ্যান্টিভাইরাস দেয়ার। এ পন্থাই কাজে দেয়। বিনামূল্যে পেয়ে অনেকেই কুইক হিল নেন। এরপরই কুইক হিল’র জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। এটি আজ থেকে ২৯ বছর আগের কথা।

বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে কুইক হিল। জাপান, আমেরিকা, দুবাইসহ বিশ্বব্যাপী ৩১টি অফিস এর গ্রাহক। মার্কিন কোম্পানি ম্যাকাফে এবং সিমেনটেকও সে দেশেই জোর টক্কর দিয়েছে প্রতিযোগিতায়। ২০০৭ সালে ক্যাট কম্পিউটার সার্ভিসের নাম বদলে কুইক হিল টেকনোলজিস রাখা হয়।

এর স্রষ্টা কৈলাস কাটকর। মহারাষ্ট্রের ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে আজ বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। ১৯৬৬ সালে মহারাষ্ট্রের রহমিতাপুর গ্রামে কৈলাসের জন্ম। তিন ভাই-বোন আর বাবা-মা। পাঁচ জনের সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন বাবা। তিনিও ভালো কিছু করতেন না।

কাজে ব্যস্ত কৈলাস

কাজে ব্যস্ত কৈলাস

একটি ইলেকট্রনিক সংস্থা সরঞ্জাম তৈরির সংস্থায় ছোটখাটো কাজ করতেন কৈলাসের বাবা। কখনো বা পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে এই কোম্পানির বাল্ব বিক্রি করতেন তিনি। এতে যা আয় হতো, তা দিয়েই ওই দিনের খাওয়ার খরচ হতো। তার ওপর কৈলাসও তখন ছোট ছিলেন। স্কুলে পড়তেন। তাই বাবার ভরসাও হয়ে উঠতে পারেননি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনোভাবে পড়েছেন কৈলাস। পড়াশোনায় একেবারেই ভালো ছিলেন না কৈলাস। তাই দশম শ্রেণিতে পরীক্ষায় পাস না করায় বাবা তার পড়াশোনা ছাড়িয়ে দেন। তাই সংসারে বাড়তি উপার্জনের জন্য কৈলাসও ওই ছোট্ট বয়সে কাজে যোগ দেন।

মেধা ভালো না হওয়ায় তেমন কোনো কাজ পেতেন না।  তাই স্থানীয় একটি রেডিও এবং ক্যালকুলেটর মেরামতের দোকানে যোগ দেন তিনি। হাতে হাতে অন্যদের থেকে একটু একটু করে কাজ শিখতে শিখতেই বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ওপর আগ্রহ জন্মায় তার। এর মধ্যে দোকানের মালিক কৈলাসকে কম্পিউটার মেরামতের প্রাথমিক প্রশিক্ষণও দেন। কৌতুহলের জেরেই কম্পিউটার মেরামতটা বেশ আয়ত্ত করে নেন কৈলাস। নিজে পড়া শেষ করতে না পারলেও ভাই সঞ্জয়কে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েই পড়তে জোর করেন। পুণের মডার্ন কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক হন সঞ্জয়। ভাইয়ের পড়াশোনার সব খরচ চালিয়েছেন কৈলাস নিজেই।

প্রথম ১৯৯০ সালে কম্পিউটার মেরামতের দোকান খুলেন কৈলাস। নিজের জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পুণেতে দেন এ দোকান। আর এটাই ছিল কুইক হিলের আঁতুড় ঘর। যা শুরু হয়েছিল ২৯ বছর আগে। কৈলাশ এ সময় দোকান দেখাশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার সংক্রান্ত জ্ঞান বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতেও শুরু করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে তিনি ক্যাট কম্পিউটার সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেন। দোকানের পাশাপাশি ক্যাট কম্পিউটার সার্ভিস নামে তার এই সংস্থা বিভিন্ন অফিসের কম্পিউটার মেরামতের চুক্তি নিতে শুরু করে। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার কয়েক মাস পরেই সাফল্য আসে কৈলাসের। নিউ ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গেও চুক্তি করে ফেলেন তিনি।

নিজের অফিসে কৈলাস কাটকর

নিজের অফিসে কৈলাস কাটকর

সে সময় সবে ইন্টারনেটের চল বাড়তে শুরু করেছে। খুব ভালো করেই কৈলাস বুঝতে পারছিলেন, ভবিষ্যতে কম্পিউটারের জন্য একটা বড় সমস্যা আসতে চলেছে কম্পিউটার ভাইরাস। এ ভেবেই ভাইরাসদের কাবু করার কাজ শুরু করেন কৈলাস। নিজের সংস্থা ক্যাট কম্পিউটার সার্ভিসের জন্য ভাই সঞ্জয়কে অ্যান্টিভাইরাসের একটি বেসিক মডেল বানাতে বলেন তিনি। এ ভাবেই জন্ম হয় অ্যান্টিভাইরাস কুইক হিলের।

ভাবতেই অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়, দশম শ্রেণি ফেল ও শিশুশ্রমিকের কাজ করা ওই যুবকই প্রতিষ্ঠা করেন কুইক হিল। তিনিই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। বর্তমানে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা সামলাচ্ছেন তিনি। স্কুলছুট ছেলেও যে একদিন জনপ্রিয় কম্পিউটার অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির মালিক হতে পারেন, তার আদর্শ উদাহরণ হয়ে রয়ে গিয়েছেন কৈলাস কাটকর। তাই কোনো একটি কাজে ব্যর্থ হলেন মানেই আপনার জীবন শেষ না। যেভাবে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন। স্বপ্ন দেখুন। যা বাস্তবায়নই আপনার জীবনকে সাফল্য এনে দেবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর