হেরে গেলেন গায়ে আগুন দেয়া কলেজছাত্রী লিজা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বামীর  নির্যাতনের অভিযোগ না নেয়ায় রাজশাহীতে থানা থেকে বেরিয়ে থানার সামনে নিজের শরীরে আগুন দেয়া কলেজছাত্রী লিজা রহমান (১৮)কে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরআগে গত শনিবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার অদূরে নিজের গায়ে আগুন দেয় ওই কলেজছাত্রী। পরে ওইদিন রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে পুলিশ। লিজা রাজশাহীর মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মো. আলম মিয়ার মেয়ে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. অসীম কুমার জানান, আগুনে লিজার শরীরের বেশির ভাগই পুড়ে গিয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ কারণে তাকে ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। তিনি জানান, আগুনে লিজার শ্বাসনালী পুড়ে যায়। এরপর থেকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসাধীন ছিলেন লিজা। অবশেষে বুধবার সকালে মৃত্যুর কাছে হার মানেন এই তরুণী। এদিকে থানা থেকে বেরিয়েই শরীরে আগুন দিয়ে কলেজছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা তদন্ত শুরু হয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্তকারী দল গত মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য ওই প্রতিনিধি দলটি বর্তমানে রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবীর। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যেই এই কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আল মাহমুদ ফয়জুল কবীর সাংবাদিকদের জানান, ওই ছাত্রীর আত্মহননের চেষ্টায় রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। কারণ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ওই ছাত্রী জানিয়েছিলেন, স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে এজন্যই তারা শাহ মখদুম থানায় যান এবং কমিটির সদস্যরা এ সময় থানার পাশেই থাকা টিটিসি গেটের সামনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলটি তদন্ত স্বার্থে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন।
মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবীর আরও জানান, তদন্ত চলাকালে তারা রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ ও সিটি কলেজে যান। এ নিয়ে ওই কলেজছাত্রী ও তার স্বামীর শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আবারও কথা বলবেন। এছাড়া ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক কেমন ছিল এবং বিয়ে নিয়ে পারিবারিক কলহ কোনো পর্যায়ে পৌঁছেছিল তাও তদন্ত করে দেখবেন কমিটির সদস্যরা।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রাজশাহীর দগ্ধ কলেজছাত্রীকে সোমবার দুপুরে দেখতে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা  বেগম।

ঢামেক হাসপাতালে থাকা তার বাবা আলম জানান, মেয়ের আত্মহত্যা চেষ্টার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন তিনি। তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রানীকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, লিজার যখন তিন মাস তখন তার মা মারা যান। তখন লিজাকে একই গ্রামের আব্দুল লতিফের কাছে দত্তক দেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন লিজা।

লতিফের এক ছেলে রয়েছে। তার নাম শিহাব আহমেদ। তিনিও বোনকে দেখতে হাসপাতালে যান। শিহাব জানান, স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর লিজাকে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি করা হয়। ওই কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন তিনি।

শিহাব বলেন, সেখানে থাকাকালে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে লিজার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খান্দুরা গ্রামে। পরিবারকে না জানিয়েই তারা চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাইবান্ধা কোর্টে বিয়ে করেন। এরপর বাসা ভাড়া নিয়ে রাজশাহীতেই ছিলেন তারা। কিন্তু বিষয়টা জানাজানি হলে বেঁকে বসেন ছেলের পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় ভেঙে পড়েন লিজা। তিনি বলেন, তাদের বাবা আব্দুল লতিফ বর্তমানে মাদক মামলায় কারাগারে। আর কয়েক দফা সাখাওয়াতের বাড়ি গেলে লিজাকে তারা তাড়িয়ে দেন। সাখাওয়াত কিছুদিন লিজার পক্ষে থাকলেও পরিবারের চাপে সেও দূরে সরে গেছে। সেই দুঃখে এবং থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে অভিযোগ না নেয়ায় সে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর