হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের রাজনীতিতে বহু বছর ধরেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। ইন্দিরা গান্ধি তো শুধু ভারতেরই নয়, গোটা উপমাহাদেশের রাজনীতিতেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। আর বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী, সুষমা স্বরাজরা দেশটির রাজনীতির ময়দান দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই এমন প্রশ্ন করছেন যে, নারীদের হাতেই কি যাচ্ছে ভারতের নেতৃত্ব? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া অবশ্য সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে নারী নেত্রীদের নামের বহর এবং তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা দেখলে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ভারতের রাজনীতির নাটাই এখন নাড়ছেন মূলত নারীরাই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বসে আছেন। এবারের নির্বাচনের প্রথম ধাপেও এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এ রাজ্যে দিদিকে হটাতে পারছে না বিজেপি। শুধু এই রাজ্যই নয় গোটা ভারতে বিজেপি বিরোধী যে মঞ্চ গড়ে উঠেছে তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন এই মমতাই।
মায়াবতী
ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশেও রয়েছে নারীর দাপট। বর্তমানে সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও মায়াবতী রাজ্যটিতে সবসময়ই শক্তিশালী। এবারের নির্বাচনে তিনি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও রাজ্যের রাজনীতির সুক্ষ্ম চালগুলো তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ভোটের আগে তিনি প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। উত্তর প্রদেশে এবার বিজেপিকে রুখে দিতে এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধি
ভারতের নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে রাজনীতির সবচেয়ে বড় চমক হয়ে এসেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। তার ভাই রাহুল গান্ধির মধ্যে রাজনৈতিক তেজের ছিটেফোঁটাও নেই বলে অভিযোগ করছিলেন অনেকে। প্রিয়াঙ্কা এসে এখন কংগ্রেসকে নতুন করে উজ্জীবিত করছেন। এবারের নির্বাচনে দলটি নাটকীয় কোনো ফল প্রত্যাশা না করলেও ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বেই বিশাল জয়ের আশা করছে তারা।
সুষমা স্বরাজ
ভারতের রাজনীতির বিজেপির নারী কাণ্ডারি হিসেবে অনেকেই সুষমা স্বরাজের নাম নিয়ে থাকেন। ভারতের যে মন্ত্রণালয়টিকে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে ভাবা হয়, সেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধির পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসেন তিনি। বিজেপির যে কয়জন কেন্দ্রীয় নেতা সারাদেশেই তুমুল জনপ্রিয় এবং দলের পক্ষে ভোট টানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সুষমা তাদের মধ্যে একজন।
সোনিয়া গান্ধি
সোনিয়া গান্ধি এমন একজন নারী, যিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব পেয়েও গ্রহণ করেননি। ২০০৪ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই কংগ্রেস জয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি চাইলেই প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু বিতর্ক এড়াতে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্বের মতো লোভনীয় পদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছিলেন। বর্তমানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
স্মৃতি ইরানি
তারকা থেকে যারা পুরোদস্তুর রাজনীতিক হয়ে গেছেন তাদের মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে স্মৃতি ইরানি। উত্তর প্রদেশের আমেথি থেকে বিজেপির হয়ে প্রার্থীতা করছেন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস সভিপতি রাহুল গান্ধি। টিভির পর্দার সাদামাটা গৃহিণী স্মৃতি রাজনীতির ময়দানে যেন মুর্তিমান আতঙ্ক। প্রায়ই চাঁছাছোলা ভাষায় রাহুলকে আক্রমণ করতে দেখা যায় তাকে। গতবারের নির্বাচনে রাহুলের কাছে ১ লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পুরো ভারতজুড়েই তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বিজেপির পক্ষে ভোট টানতেও তিনি এক নির্ভরতার নাম। বর্তমানে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া
ভারতীয় রাজনীতির আরেক জাদরেল নারী নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। প্রথম নারী হিসেবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। বিজেপির এই নেত্রী দলীয় নানা ইস্যুতে খোদ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের সংগেও টক্কর দিয়েছেন। অটল বিহারি বাজপেয়ী ও লাল কৃষ্ণ আদভানিদের আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন বসুন্ধরা।
মানেকা গান্ধি
ইন্দিরা গান্ধির পুত্রবধূ হয়েও কংগ্রেসের প্রধান শত্রু বিজেপির রাজনীতির সংগে যুক্ত মানেকা গান্ধি। ১৯৯৮ সালে প্রথম নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পেয়েছিলেন। এরপরের নির্বাচনগুলোতে এই গান্ধিবধূ বিজেপির প্রার্থী হয়েই লড়েছেন। বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাতেও আছেন মানেকা। কিছুদিন আগে মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। কিন্তু তবুও এবারের নির্বাচনে তার জয় অনেকটা নিশ্চিতই বলা চলে।