হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের প্রমাণ মিললো অবশেষে। বিশেষ কৌসুলি রবার্ট মুয়েলারের তদন্ত দলের অনুসন্ধানে অভিযোগটির সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) প্রকাশিত ৪৪৮ পৃষ্ঠার এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।
তবে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচারকাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি তদন্ত দল। অন্যদিকে, তার এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবে স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তকারীদের সামনে এমন কিছু কঠিন পরিস্থিতি ছিলো, যার ফলে সত্যিই বলা মুশকিল যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ হস্তক্ষেপ বিষয়ে তদন্তে বাধা দিয়েছিলেন কি-না। প্রতিবেদনে বলা আরো হয়, তাদের যতোটুকু আইনি স্বাধীনতা ছিলো, তাতে রুশ হস্তক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সম্পর্ক ছিল কি না, তা বলা সম্ভব নয়। কংগ্রেস চাইলে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে বলেও মত তদন্ত কমিটির। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেন, বিশেষ কৌঁসুলির প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে রাশিয়া ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর থেকে প্রমাণিত হয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রচারণা শিবির অপরাধমূলক কোনো কাজে জড়িত ছিল না।
২৬ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রসঙ্গে সাত বার ‘যোগসাজশ নেই’, ‘বাধা দেননি’ শব্দগুলো ব্যবহার করেন উইলিয়াম বার। বারের এ ‘ব্যাখ্যার’ সমালোচনা করে ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, মুলারের ‘অস্পষ্ট’ প্রতিবেদনকে একটা স্পষ্ট ট্রাম্পপন্থী চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। যৌথ বিবৃতি দেয়ার পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্পকে অভিশংসনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব স্বাক্ষরেরও কথা জানিয়েছেন তারা। কংগ্রেস চুপ থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কংগ্রেস স্পিকার ন্যান্সি পোলেসি।
এদিকে, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বারের আচরণকে কুৎসিত ও বিভ্রান্তিকর বলছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা।
মার্কিন সিনেট বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান জেরোল্ড নাদলা বলেন, জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরাতে বিশেষ কৌঁসুলিকে সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল তার কর্তব্য উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্টকে বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে ওমাবা কোনো পদক্ষেপ নেননি। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলেও দাবি তার। আরেক টুইটে তিনি বলেন, তিনি চাইলে মুয়েলারসহ তার দলের সবাইকে বহিষ্কার করতে পারতেন। কিছুক্ষণ পরই ইংরেজি টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’ এর আদলে গেম ওভার লেখা একটি পোস্টার টুইট করেন। পরে এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ তদন্তে কোনো বাধা দেওয়াও হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমার জন্য খুব ভালো একটি দিন আজ। কোনো আঁতাত হয়নি। কোনো বাধা দেয়াও হয়নি। এ ধরনের তদন্ত আর কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘটতে দেয়া উচিৎ হবে না।
মুয়েলারের প্রতিবেদনে হিলারি ক্লিনটনের তথ্য ফাঁসে রুশ সংযোগের প্রমাণ পাওয়ারও দাবি করা হয়। এর আগে, ২৫শে মার্চ তদন্ত প্রতিবেদনের সারাংশ প্রকাশ করে মার্কিন বিচার বিভাগ।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। তদন্ত চলাকালে বহিষ্কার করা হয় মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে। পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুয়েলারকে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ট্রাম্পের কোনো গলদ পাওয়া না গেলেও, এই রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ডেমোক্র্যাটরা।