ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূরা ফাতিহাকে যে কারণে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫
  • ২৫৮ বার

আল কোরআন আসমানি কিতাব। এ কিতাবে যতগুলো সূরা রয়েছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ সূরা হলো সূরা-ফাতিহা। এ সূরার একাধিক নাম রয়েছে। তন্মধ্যে একটি নাম ‘উম্মুল কিতাব’। উম্মুল কিতাব কোরআনের মৌলিক বিষয়। উম্মুল কিতাব নামকরণের কারণ হলো- এ সূরাটি সর্বপ্রথম পরিপূর্ণ সূরা হিসেবে নাজিলকৃত একটি সূরা। কোরআনের প্রারম্ভে লেখা একটি সূরা। এ সূরাটি নামাজের প্রথমে পাঠ করতে হয়। এসব কারণে এ সূরাটির নাম ‘উম্মুল কিতাব’ রাখা হয়েছে। উম্মুল শব্দটি আরবি। এর অর্থ হচ্ছে ‘মূল বা আসল’। আর কিতাব শব্দের অর্থ হলো গ্রন্থ বা বই। শরীয়তের পরিভাষায় যেহেতু সুরা ফাতিহার মধ্যে সমগ্র কোরআনের মৌলিক বিষয়াদি সংক্ষিপ্তভাবে বণিত হয়েছে, তাই সূরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়। হাদীসের ব্যাখ্যার মাধ্যমে জানা যায়, কোরআনের মৌলিক বিষয় তিনটি। এ তিনটি মৌলিক বিষয় সুন্দরভাবে উম্মুল কিতাবে আলোচনা করা হয়েছে। যথ- ১. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা, ২. আল্লাহর ইবাদত করা, ৩. পরকাল সম্পর্কে ওয়াদা ও ভীতি বর্ণনা করা। এখন প্রশ্ন হলো, কোরআনের মৌলিক বিষয়সমূহ আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও সর্বক্ষেত্রে উপস্থিত আছে কিনা? যদি উপস্থিত না থাকে, তাহলে মৌলিক বিষয়সমূহ অর্জন করার দরকার রয়েছে। মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘আল্লাহর জাত, সিফাত এবং কার্যবলী’কে কোরআনের মূল উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, আল্লাহর সৃষ্টিকৃত কোনো বস্তু এ তিনটির বাইরে নয়। কেউ কেউ বলেছেন, ‘সৃষ্টি প্রথম অবস্থা, পৃথিবীতে অবস্থানকালীন অবস্থা এবং আখেরাতের অবস্থা’ এ তিনটি বিষয়কে পবিত্র কোরআনের মূল বিষয় বলা হয়েছে। মোট কথা হলো- কোরআনের মৌলিক বিষয়াদি উম্মুল কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণে সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব নামে নামকরণ করা হয়েছে। কোরআনের মৌলিক তিনটি বিষয় যদি আমরা বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে ইহকালীন ও পরকালীন জগতে মুক্তি লাভ করা খুবই সহজ হবে। তবে, যে যেভাবেই ব্যাখা করুক না কেন, কোরআনের মূল বা মৌলিক বিষয়সমূহের সমষ্টি হলো ‘উম্মুল কিতাব’। আমরা জাতি হিসেবে মুসলিম। মুসলিম মানে মোমেন। প্রতিটি মোমেন বান্দার সাথে উম্মুল কিতাবের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। সুগভীর সম্পর্ক থাকার কারণ হলো আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে গিয়ে অসংখ্য বার উম্মুল কিতাব পাঠ করে থাকি। নামাজের মাধ্যমে যেমনিভাবে আল্লাহর সাথে মোমেন বান্দার সুগভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে থাকে, তেমনিভাবে উম্মুল কিতাবের সাথে মোমেন বান্দার সুসম্পর্ক রয়েছে। বান্দার কাজ হলো আল্লাহর দাসত্ব বা ইবাদত করা। খোদার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা। এ সুসম্পর্ক তৈরির মানপত্র হলো উম্মুল কিতাব। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দাকে শিখিয়ে দেয়া একটি মানপত্র। এ মানপত্রে তিনটি অংশ রয়েছে। তা হচ্ছে- ‘ক্ষমতার অধিকারীর প্রশংসা করা, দ্বিতীয়ত আবেদনকারীর পরিচয় এবং সর্বশেষে মানুষের চাওয়ার বিষয়বস্তু কি? সুতরাং আমরা যদি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর প্রশংসা, দাস হিসেবে তার দাসত্ব করি এবং সবকিছু বস্তু চাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র তার কাছেই চাই, তাহলে আমাদের ইহকালীন শান্তি, পরকালীন মুক্তি লাভ করা খুবই সহজ হবে। শুধু তাই নয়, যদি আমরা এ সুরার অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলতে পারি, তাহলে সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছা সহজে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সূরা ফাতিহাকে যে কারণে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়

আপডেট টাইম : ১১:১১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫

আল কোরআন আসমানি কিতাব। এ কিতাবে যতগুলো সূরা রয়েছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ সূরা হলো সূরা-ফাতিহা। এ সূরার একাধিক নাম রয়েছে। তন্মধ্যে একটি নাম ‘উম্মুল কিতাব’। উম্মুল কিতাব কোরআনের মৌলিক বিষয়। উম্মুল কিতাব নামকরণের কারণ হলো- এ সূরাটি সর্বপ্রথম পরিপূর্ণ সূরা হিসেবে নাজিলকৃত একটি সূরা। কোরআনের প্রারম্ভে লেখা একটি সূরা। এ সূরাটি নামাজের প্রথমে পাঠ করতে হয়। এসব কারণে এ সূরাটির নাম ‘উম্মুল কিতাব’ রাখা হয়েছে। উম্মুল শব্দটি আরবি। এর অর্থ হচ্ছে ‘মূল বা আসল’। আর কিতাব শব্দের অর্থ হলো গ্রন্থ বা বই। শরীয়তের পরিভাষায় যেহেতু সুরা ফাতিহার মধ্যে সমগ্র কোরআনের মৌলিক বিষয়াদি সংক্ষিপ্তভাবে বণিত হয়েছে, তাই সূরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়। হাদীসের ব্যাখ্যার মাধ্যমে জানা যায়, কোরআনের মৌলিক বিষয় তিনটি। এ তিনটি মৌলিক বিষয় সুন্দরভাবে উম্মুল কিতাবে আলোচনা করা হয়েছে। যথ- ১. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা, ২. আল্লাহর ইবাদত করা, ৩. পরকাল সম্পর্কে ওয়াদা ও ভীতি বর্ণনা করা। এখন প্রশ্ন হলো, কোরআনের মৌলিক বিষয়সমূহ আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও সর্বক্ষেত্রে উপস্থিত আছে কিনা? যদি উপস্থিত না থাকে, তাহলে মৌলিক বিষয়সমূহ অর্জন করার দরকার রয়েছে। মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘আল্লাহর জাত, সিফাত এবং কার্যবলী’কে কোরআনের মূল উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, আল্লাহর সৃষ্টিকৃত কোনো বস্তু এ তিনটির বাইরে নয়। কেউ কেউ বলেছেন, ‘সৃষ্টি প্রথম অবস্থা, পৃথিবীতে অবস্থানকালীন অবস্থা এবং আখেরাতের অবস্থা’ এ তিনটি বিষয়কে পবিত্র কোরআনের মূল বিষয় বলা হয়েছে। মোট কথা হলো- কোরআনের মৌলিক বিষয়াদি উম্মুল কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণে সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব নামে নামকরণ করা হয়েছে। কোরআনের মৌলিক তিনটি বিষয় যদি আমরা বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে ইহকালীন ও পরকালীন জগতে মুক্তি লাভ করা খুবই সহজ হবে। তবে, যে যেভাবেই ব্যাখা করুক না কেন, কোরআনের মূল বা মৌলিক বিষয়সমূহের সমষ্টি হলো ‘উম্মুল কিতাব’। আমরা জাতি হিসেবে মুসলিম। মুসলিম মানে মোমেন। প্রতিটি মোমেন বান্দার সাথে উম্মুল কিতাবের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। সুগভীর সম্পর্ক থাকার কারণ হলো আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে গিয়ে অসংখ্য বার উম্মুল কিতাব পাঠ করে থাকি। নামাজের মাধ্যমে যেমনিভাবে আল্লাহর সাথে মোমেন বান্দার সুগভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে থাকে, তেমনিভাবে উম্মুল কিতাবের সাথে মোমেন বান্দার সুসম্পর্ক রয়েছে। বান্দার কাজ হলো আল্লাহর দাসত্ব বা ইবাদত করা। খোদার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা। এ সুসম্পর্ক তৈরির মানপত্র হলো উম্মুল কিতাব। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দাকে শিখিয়ে দেয়া একটি মানপত্র। এ মানপত্রে তিনটি অংশ রয়েছে। তা হচ্ছে- ‘ক্ষমতার অধিকারীর প্রশংসা করা, দ্বিতীয়ত আবেদনকারীর পরিচয় এবং সর্বশেষে মানুষের চাওয়ার বিষয়বস্তু কি? সুতরাং আমরা যদি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর প্রশংসা, দাস হিসেবে তার দাসত্ব করি এবং সবকিছু বস্তু চাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র তার কাছেই চাই, তাহলে আমাদের ইহকালীন শান্তি, পরকালীন মুক্তি লাভ করা খুবই সহজ হবে। শুধু তাই নয়, যদি আমরা এ সুরার অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলতে পারি, তাহলে সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছা সহজে হবে।